Iran Bombs Qatar

কাতারের মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের হামলা

আন্তর্জাতিক

- ইজরায়েলের সমর্থনে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা করায় সোমবার আমেরিকাকে ‘কঠিন শাস্তি’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আয়তোল্লা আলি খামেইনি। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কাতারে মার্কিন বায়ুসেনার আল-উদেইদ ঘাঁটিতে পরের পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার জেরে কাতারের রাজধানী দোহা শহর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। সোমবার রাতে ইরানের সেনাবাহিনী হামলার ঘটনা স্বীকার করে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এই আল-উদেইদ ঘাঁটিগোটা পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন বায়ুসেনার যাবতীয় কর্মকান্ডের সদর দপ্তর বলে পরিচিত। প্রায় দশ হাজার সেনাকর্মী এবং বহু যুদ্ধবিমান এই ঘাঁটিতে মোতায়েন করা আছে। পশ্চিম এশিয়ায় এটি আমেরিকার সব থেকে বড় সামরিক ঘাঁটি। জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের সরাসরি নির্দেশে এই হামলা সফল ভাবে সংঘটিত হয়েছ বলে জানিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী। 
সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসতে দেখা যায়। প্রথম দিকে তা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের নিক্ষেপ করা মিসাইল তা বোঝা যায় না। তবে খানিকক্ষণ পরেই ব্যাপক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা দোহা শহর। কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, আল উদেইদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা আটকাতে পেরেছে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে বিস্ফোরণের আওয়াজে বোঝা যাচ্ছে অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র সফল ভাবে মার্কিন ঘাঁটিতে এসে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। তবে এই হামলার জেরে পশ্চিম এশিয়া জুড়ে এই সংঘাত যে আরও বাড়বে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।  
ইরানের এই হামলা তাদের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ বলে জানিয়েছে কাতার। যদিও ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ জানিয়েছে, কাতারের এই ঘাঁটি আবাসিক অঞ্চল থেকে অনেক দূরে। এই হামলাতে কাতারের সঙ্গে ইরানের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক কোন ভাবে ব্যাহত হবে না। সোমবার সকালেই দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে কাতার। এদেশে আমেরিকা ও ব্রিটেনের অবস্থিত দূতাবাস তাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপদ কোন জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সুতরাং আগে থাকতেই এই হামলার আঁচ পাওয়া যায় বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ। আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতী হামলার যে পন্থা ইরান নিয়েছে, তাতে আগামী দিনে পশ্চিম এশিয়ায় কাতার, বাহরেইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও সৌদি আরবে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলার আশঙ্কা বাড়ছে। 
এদিকে সোমবার ভোরে সমাজ মাধ্যম ‘এক্স’-এ ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান আয়তোল্লা আলি খামেইনির অ্যাকাউন্টে লেখা হয়, ‘‘জায়নবাদীরা আরও বড় ভুল করে বসেছে! ওরা এক ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে। ওদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং হচ্ছে! শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ সোমবার সকাল থেকে ইজরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। গোটা দেশে সাইরেন বেজে ওঠে। দশটির মধ্যে অন্তত ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে ইজরায়েলী সেনার ‘এয়ার ডিফেন্স’। এই ঘটনায় ইজরায়েলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোয় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। হামলায় দক্ষিণ ইজরায়েলের প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে উত্তর ইজরায়েলের সাফেদ ও গ্যালিলি শহরের বেশ কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ আগুন ধরে। এছাড়াও দক্ষিণ ইজরায়েলের আশদদ ও আশকেলন শহরের বেশ কিছু অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মধ্য ইজরায়েলের শেফেলা ও জেরুজালেমেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। 
ইরানের হামলায় ইজরায়েলের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোয় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। তার জেরে গোটা দেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ইজরায়েলে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর ইজরায়েলের সাফেদ, গ্যালিলি-গোলান শহরের রেল স্টেশনেও আগুন ধরে। ইরানের হামলায় তেল আভিভের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ইজরায়েল ছাড়া শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইজরায়েল গামী সমস্ত বিমান অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে। সামরিক সাজ-সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েল থেকে সাইপ্রাসে সরিয়ে আনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। 
পরিস্থিতির চাপে সুর নরম করতে বাধ্য হয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। চব্বিশ ঘণ্টায় তেহরান দখলের তর্জনী ছেড়ে রবিবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ইজরায়েল ইরানের সঙ্গে কোনও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুর যুদ্ধে জড়াতে চায় না। ইজরায়েল তার মূল উদ্দেশ্য পূরণের বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সোমবার তেহরান সহ ইরানের বেশ কিছু শহরে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। সামরিক ঘাঁটি, বিদ্যুৎ পরিকাঠামো, ‘কম্যান্ড সেন্টার’ সহ আবারও ফরডো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ। তবে তেমন গুরুতর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
এছাড়াও তেহরানের এভিন বন্দি শিবির লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এই বন্দি শিবিরে আটক রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশই ইজরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কিংবা রাজনৈতিক কার্যকলাপের ‘অপরাধে’ বন্দি। বেশ কয়েকজন বন্দির পরিবার ইজরায়েলের এই হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ইজরায়েলী গুপ্তচর হওয়ার অভিযোগে এভিন শিবিরে বন্দি সেসিল কোহলারের পরিবার জানিয়েছে, এই হামলার মাধ্যমে সমস্ত বন্দিদের প্রাণকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই ‘জঘন্য’ হামলার মাধ্যমে বন্দিদের মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে। কোহলারের আইনজীবী চিরিন আরদাকানি ইজরায়েলের এই হামলাকে ‘বেআইনি’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এদিকে ইরানের সংবাদমাধ্যম ‘নুর নিউজ’ এক বার্তায় জানিয়েছে, এভিন শিবিরের বন্দিদের সবাইকে সময়মতো নিরাপদে সরিয়ে আনা গেছে। ইজরায়েলের হামলায় তাঁরা কেউ হতাহত হননি।

Comments :0

Login to leave a comment