JBCSSR

যাত্রা শুরু নতুন এক গবেষণা কেন্দ্রের

সম্পাদকীয় বিভাগ

কলকাতার বুকে গড়ে উঠছে একটি আধুনিক সমাজবিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র। সরকারি উদ্যোগের বাইরে এই ধরনের গবেষণা কেন্দ্র বা ইনস্টিটিউট কলকাতা তথা এরাজ্যে আরও অনেক আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেগুলি ঠিক কি ধরনের চর্চা বা গবেষণা করছে অথবা আদৌ করছে কিনা, করলেও জ্ঞানচর্চার জগতে ও সামাজিক পরিসরে সেগুলির কতটা জায়গা করে নিতে পারছে তা নিয়ে  অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নও আছে। সেদিক থেকে বিচার করলে নিউটাউনে পাঁচ একর জমির উপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জননেতা জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত যে সমাজ বিজ্ঞান ও গবেবণা কেন্দ্রটি গড়ে উঠছে তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এটা নিছক একটি তথাকথিত গবেষণা কেন্দ্র নয়। অর্থনীতি, রাজনীতি সহ সমাজ বিজ্ঞানের বিস্তৃত পরিসরে বহুমুখী চর্চা ও গবেষণাকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিতে চায় এই কেন্দ্র। জ্ঞানচর্চার বা গবেষণার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রথা ও পদ্ধতিকে অনুসরণ করে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট অধ্যাপক- গবেষকদের পরামর্শে ও নির্দেশে চলবে গবেষণার কাজ। তাতে যুক্ত হবে ছাত্র-ছাত্রী সহ তরুণ গবেষকরা। প্রধানত এরাজ্যের এবং দেশের সাধারণ মানুষ জীবন জীবিকার সমস্যা, সঙ্কটের উৎস সন্ধান যেমন হবে তেমনি তার সমাধানের বিকল্প পথের সন্ধান চলবে এই সব গবেষণা কেন্দ্রকে ঘিরে। আর্থ সামাজিক বিকাশে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টাকে সামনে আনতে চায় এই সমাজ গবেষণা কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, এই গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি নিলেও ২০১০ সালে তৈরি হয়েছে একটি ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টের অধীনে গড়ে উঠছে এই বিশাল কর্মকাণ্ড। পাঁচ একর জমির উপর চারটি পর্যায়ে নির্মাণ পর্ব শেষ হলে আত্মপ্রকাশ করবে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রটি। আপাতত প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ শেষে ১৭ জানুয়ারি জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্রের কাজ। আপাত প্রদর্শন ক্ষেত্র, আর্কাইভ, গ্রন্থাগার ইত্যাদি চালু হচ্ছে। অবশ্য ইতিমধ্যেই বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতির এবং বেকারি- কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নানা অনালোকিত বাস্তব সত্য তুলে আনা হয়েছে দু’টি গবেষণাপত্রে। উদ্বোধনের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দু’টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে। একেবারে প্রান্তসীমায় গিয়ে ক্ষেত্র সমীক্ষা করে গবেষণা করা এই দু’টি মূল্যবান পত্র তৈরি করা হয়েছে। সমাজ বিকাশের ধারায় সমতা, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠত করার লক্ষ্যে এবং শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়নের উৎস সন্ধানকে  অগ্রাধিকার দিয়েই চলবে আগামী দিনের নতুন নতুন গবেষণা।
এই সুবিশাল কর্মকাণ্ড গড়ে উঠছে সরকারি বা বেসরকারি কর্পোরেট অর্থে নয়। সাধারণ মানুষের ছোট ছোট দানে সাধারণ মানুষেরই স্বপ্নের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিবেদিত এই কেন্দ্র। শোষিত, বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের দানে জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র হয়ে উঠুক এরাজ্যের মানুষের সত্যিকারের গর্বের কেন্দ্র হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা নিয়েই পথ চলা শুরু।

Comments :0

Login to leave a comment