ADANI PURBA BARDHAMAN

বাংলার শস্যগোলা লুটতে জামালপুরে বিশাল গোডাউন আদানির

রাজ্য জেলা

জামালপুর থানার জৌগ্রামে আদানিরা রাইসমিলের পাশের প্রায় ৭০ বিঘা জমি কিনেছে।

শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান


বাংলার শস্যগোলা নামে সারা দেশে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা। সেই জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি মানিক প্রামানিক, সন্দীপ হাজরাদের কাছে রূপ কথার গল্পের মতো শোনায়। সরকার যখন ধান কিনতে শুরু করে তখন দিন আনি দিন খাই ক্ষুদ্র কৃষক মানিক প্রামানিকরা মহাজনের ঋণ শোধ করার তাগিদে ধানের অভাবী বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এই ক্ষুদ্র, দেনাগ্রস্ত কৃষকদের অভাবের সুযোগ নেয় ফড়ে, মিল মালিকরা। এবার এই সুযোগই পুরোদমে কাজে লাগাতে ধান ওঠার শুরুতেই আদানিরা ধান কিনতে শুরু করেছে। এর জন্য জামালপুরে বিশাল ২টি গোডাউন তৈরি করেছে আদানি গোষ্ঠী। এখানে প্রায় আড়াই লক্ষ বস্তা ধান মজুত করা যাবে। শুধু তাই নয় সূত্রের খবর ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ডানকুনি থেকে বর্ধমান এই রাস্তার ধারে বড় বড় গোডাউন তৈরি ও ভাড়ায় নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। মূলত বর্ধমান, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হুগলীর কৃষকদের কাছ থেকে নগদ টাকায় অভাবী ধান এই সব গোডাউনে মজুত হবে। বাংলার চাল এবার আদানি’র মুঠোয় আসতে চলেছে!
পূর্ব বর্ধমান জেলার নবস্থা -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেগুট গ্রামের কৃষক মানিক প্রামানিকের নিজের জমি আড়াই বিঘা। প্রতি বছর তিনি মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আমন ধান চাষ করেন। সেই ধান উঠতে না উঠতেই ঋণের টাকা শোধ করতে অভাবী বিক্রি করে দিতে হয়। সন্দীপ হাজরা জানিয়েছেন যে তিনি পরের জমিতে চুক্তিতে চাষ করেন মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে তাঁকেও অভাবী ধান বিক্রি করে দিতে হয় ফড়েদের কাছে। সরকার যখন ধান কেনা শুরু করে তখন বেশিরভাগ গরিব চাষীর ধান অভাবী বিক্রি হয়ে গেছে। সরকার যে ধান কেনে তার বেশির ভাগটাই ফড়ে, বড় চাষী ও মিল মালিকদের কাছে। এবার কর্পোরেট পুঁজিও সেই সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। চাষীরা অভিযোগ করেছেন, আগে এক বিঘে জমিতে ১৮-১৯ বস্তা ধান হতো এখন ফলন কমে দাঁড়িয়েছে ১০-১৪ বস্তা। উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে সারের দাম, কীটনাশক, বীজের মূল্য। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কৃষকের পিঠ আগেই ঠেকেছে। এবার কর্পোরেট পুঁজি বাংলার কৃষকের অভাবের সুযোগ নিয়ে কম দামে ধান কেনার জন্য মরিয়া। মমতা ব্যানার্জির সরকার আদানিদের কাছে যাতে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষক। সেই জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকার একজন কৃষকের কাছ থেকে ২৫ বস্তার বেশি ধান কিনবে না। তাহলে বাকি ধান কোথায় বিক্রি করবে ঋণগ্রস্ত কৃষক? তাঁদের সরাসরি কর্পোরেট পুঁজির সামনে ফেলে দিতে চায় মমতা ব্যানার্জির সরকার। ধান ওঠার মুখেই নতুন ধানের দাম ফেলে দেওয়া হচ্ছে শনিবারের ধানের দাম ছিল ৬০ কেজি ১১৬০ টাকা। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই দাম কয়েকদিনের মধ্যে আরও নিচে নেমে যাবে। কিন্তু চালের দাম সেই তুলনায় কম নেই। গত কয়েকমাস আগে এক ঝটকায় সব চালের দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বেড়ে গেছিল। এই ফাটকা মূল্য বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয় সেটা একাধিক ছোট রাইসমিল মালিক কবুলও করেন। কর্পোরেট পুঁজির দাপটে চালের বাজারে এই অস্থিরতা মধ্যবিত্ত থেকে গরিব মানুষের নাজেহাল অবস্থা হলেও মমতা ব্যানার্জির সরকারের কোনও হেলদোল ছিল না। সরকারের তৈরি টাস্কফোর্সের সদস্যদের এ নিয়ে বাজারে নামতেও দেখা যায়নি। 
কর্পোরেট পুঁজি ফড়েদের কাজে লাগিয়ে গত ৭-৮ বছরে বাংলার চাল হাতের মুঠোয় আনার জন্য গোটা রাজ্যে জাল বিছিয়েছে। তার জন্য জামালপুরের জৌগ্রামে বিশাল রাইসমিলও কিনেছে তারা। রাইসমিলের পাশেই প্রায় ৭০ বিঘা জমিও কেনা হয়েছে গোডাউন তৈরি ও ধান থেকে নানা বাই প্রডাক্টের হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এই রাইসমিলে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করতেন তাঁদের ছাঁটাই করা হয় কোনও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে। এখন বাইরে থেকে কম মজুরি দিয়ে চুক্তিতে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে বেশি মুনাফা লুটছে আদানি’রা এমনই অভিযোগ বরখাস্ত শ্রমিকদের। মিনিকিট, স্বর্ণ, সব ধরনের চালই ফরচুন ব্রা্ন্ডে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার থেকে বেশিরভাগ ধান কিনে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে ছোট রাইসমিলগুলিকে। তাদের কাছ থেকে কম মূল্যে চাল কিনে বাজার দখলে রাখতে মরিয়া আদানি’রা। সূত্রের খবর এর জন্য হলদিয়া ও হাওড়ায়  প্যাকেজিং কারখানাও তৈরি হয়েছে। শুধু বাংলার মিনিকিট, সহ নানা প্রজাতির চালের বাজার হাতের মুঠোয় আনার লক্ষ্য নয় পূর্ব বর্ধমান জেলার গোবিন্দভোগ চালের বাজারও কব্জা করতে তৎপর এই কর্পোরেট পুঁজি। 
 

Comments :0

Login to leave a comment