EGRA BLAST VICTIMS

কাজ করতেন বহু মহিলাও, এগরার গ্রামে পরপর ছিন্নভিন্ন দেহ

রাজ্য জেলা

EGRA BLAST VICTIMS এগরায় পুকুর থেকে উদ্ধার হচ্ছে দেহ।

রাধাগোবিন্দ মান্না

ভানু বাগের বাজি তৈরির কারখানার আড়ালে বোমা বানানোর অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুলিশকে বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ঘুষের বন্দোবস্ত ছিল কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগের। তৃণমূলে অঞ্চল স্তরের নেতা হওয়ায় প্রভাবও ছিল। 

এগরার সাহাড়া অঞ্চলের খাদিকুল গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা সমানে বাড়ছে। সন্ধ্যে পর্যন্ত ৯ জনের দেহ মিলেছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনুমান। অন্তত ২৫ জন কাজ করতেন কারখানায়। মঙ্গলবার কাজে আসেননি ৫ জন। বাকিদের কী অবস্থা স্পষ্ট নয়। বেলার দিকে ঘটনার কিছু পর থেকে দেহ সরানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের সামনেই দেহ সরানো হচ্ছে বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। 

এদিন কলকাতায় একবালপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সিপিআই(এম)’র ওপর পরিস্থিতির দায় চাপানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সব সিপিএম করে গিয়েছে। তার জন্য এই অবস্থা।’’ এনআইএ তদন্ত মেনে নিতেও রাজি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই, দাবি তাঁর। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘২০২২ সালে এই কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মালিক জামিন পেল কী করে দেখতে হবে। বন্ধ কারখানা খুলল কিভাবে দেখা দরকার।’’ পুলিশও এদিন জানিয়েছে একাধিক দফায় গ্রেপ্তার করা হলেও ছাড়া পেয়েছে ভানু বাগ। 

এগরার এই এলাকায় স্থানীয়দের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিটি দাবি খারিজ হয়ে যাচ্ছে। এগরার কুরুন্দা এলাকায় কিছুদিন আগেই হয়েছিল বিস্ফোরণ। বেআইনি বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির কারবারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল জনতা। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এদিন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে জনতা। বারবার বলতে শোনা গিয়েছে যে  পুলিশ ঘুষ নেয়, কিছু করে না। পুলিশ এবং শাসকের সঙ্গে যোগ আছে বলেই দুষ্কৃতী ছাড়া পেয়ে গিয়েছে বারবার, বলেছে জনতা।  

বিস্ফোরণের খবর পেয়েই এলাকায় যান সিপিআই(এম) এরিয়া কমিটির সম্পাদক সমীর সামন্ত, পার্টিনেতা তপন প্রধান, যুবনেতা রাজকুমার দত্ত। উদ্ধারকাজে স্থানীয় পার্টিকর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়েছেন তাঁরা। 

কারখানায় কাজ করতেন অন্তত ২৫ জন। তার মধ্যে অনেকেই মহিলা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মহিলারা। তাঁরা সকলেই দরিদ্র পরিবারের। পরিজনরা জানাচ্ছেন, বাজি তৈরি হচ্ছে বলে তাঁদের দিয়ে কাজ করানো হতো। ভানু বাগের সাঙ্গোপাঙ্গরা কারখানায় এই শ্রমিকদের চোখের আড়ালে শলা পরামর্শ করত। সবই জানত পুলিশ।

এলাকার পঞ্চায়েতের দখল তৃণমূলেরই হাতে। দেড়মাস আগে অঞ্চল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই উপপ্রধান। তার জেরে এক নির্দল সদস্যকে প্রধান করা হয়েছে। গত পঞ্চায়েতে বোমা কারখানা চালানোয় দায়ী ভানু বাগের পুত্রবধূ পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। 

বিস্ফোরণের পর দেহ খণ্ড খণ্ড হয়ে ছিটকে পড়েছে একশো মিটার দূরে। আশঙ্কা, বোমার মসলা ছাড়া কেবল বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে এমন ভয়াবহ অবস্থা হয় না। 

সমীর সামন্ত বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বোমা বানানোর কারবার চলছিল। রাজ্যের অন্যত্র এবং এই এলাকাতেও মারাত্মক বিস্ফোরণ হয়েছে। পরপর দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের মদত ছাড়া তা চলতে পারে না। ভোটের আগে বোমা মজুত করছে তৃণমূল। খাদিকুলের বাসিন্দা অশ্বিনী সিং, প্রবীর মাইতি, নোটন মাইতি, লক্ষণ মাইতিদেরও ঠিক এক অভিযোগ।

Comments :0

Login to leave a comment