RG Kar CBI

তথ্য-প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা সিবিআই’রও, বলছেন চিকিৎসকরা

রাজ্য

সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডলের নামে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করার দাবি খারিজ করতে পারল না সিবিআই। খুনের তথ্য-প্রমাণ লোপাটে যোগাযোগের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে বরং প্রতিবাদী চিকিৎসকদের থেকে নিতে হয়েছে নতুন তথ্য-প্রমাণ। চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সঙ্গে হাসপাতালে দুর্নীতিচক্রের সম্পর্ক খুঁজে দেখার জন্যও সিবিআই আধিকারিকদের দাবি জানিয়েছে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’-র প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার একসঙ্গে সিবিআই’র দুই দপ্তর নিজাম প্যালেস ও সিজিও কমপ্লেক্সে যায় চিকিৎসকদের আলাদা আলাদা প্রতিনিধিদল। রাজ্য সরকারের সদর দপ্তর নবান্নে যায় আরেকটি প্রতিনিধিদল। ছিলেন প্রতিবাদী নাগরকিদের ‘অভয়া মঞ্চ’-র প্রতিনিধিরাও। 
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানান যে সিবিআই’র আধিকারিকরাও তথ্য প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা করছেন। ঘটনার কয়েকদিন পর কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে সিবিআই তদন্তভার পেয়েছিল। তার মাঝে দায়িত্ব ছিল রাজ্য পুলিশের হাতে।
গোস্বামী বলেন, ‘‘অতিরিক্ত চার্জশিট কেন জমা দেওয়া হয়নি সেই বিষয়ে সিবিআই’র আধিকারিকরা সরাসরি ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র এবং তথ্য প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্তদের তদন্তের আওতায় এনেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।’’ 
রাজ্য পুলিশ খুনের আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক খুনে কেবল সিভিক ভলান্টিয়ারকেই দায়ী করেছে। খুন-ধর্ষণ মামলায় সিবিআই’র চার্জশিটেও কেবল এই সঞ্জয় রায়ের নাম ছিল। তারপর থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া ঘিরে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। কারণ সিবিআই নিজেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল যে অপরাধস্থল বদলানো হয়েছে। অর্থাৎ যে সেমিনার রুমে দেহ মিলেছিল চিকিৎসক-ছাত্রীর সেটিই ঘটনাস্থল নয়। একই অনুমান করেছে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবেরটরির রিপোর্টও।    
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম, ৯ আগস্ট, দেহ মেলার পর থেকে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে সরব। কেবল সে সময়ে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বা তাঁর অনুগামীরা নন, রাজ্য সরকারের যোগসাজশেও আঙুল তুলেছেন তাঁরা। কেননা সেমিনার রুমের পাশের বাথরুম তাড়াহুড়ো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল সংস্কারের নামে। দেহ মেলার পর সেমিনার রুমে সন্দীপ ঘোষ এবং তৃণমূলের চালানো ‘থ্রেট কালচার’ চক্রের মাথাদের দেখা গিয়েছিল কেন, সে প্রশ্নও রয়েছে গোড়া থেকে। কারণ স্বাস্থ্য প্রশাসনের দায়িত্বের বিচারে অভীক দে’র মতো লোকজনের ঘটনাস্থলে থাকার কথাই ছিল না। 
চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, ‘‘নিজাম প্যালেসে প্রতিবাদীদের যে প্রতিনিধি দল সিবিআই’র তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে দুর্নীতির মামলায় তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে। দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়েরের অনুমতি দেয়নি রাজ্য। যে কারণে জামিন মিলেছে। তবে সিবিআই আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। রাজ্য সরকার চার্জশিট দায়েরে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ না দিলে কী করণীয় তার জন্য আইনি পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।’‘ 
সিজিও কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল সিবিআই’র কাছে প্রশ্ন তোলে খুনের প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে কেন সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দায়ের করা যায়নি। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, "ওই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক অন্য একটি মামলায় কলকাতার বাইরে আছেন। তাই তদন্ত দলের সাথে যুক্ত অন্য দুই আধিকারিক কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। আমাদের বক্তব্যের নোট নেন। নেক নতুন তথ্য সিবিআই-কে দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ-নথি তুলে দিয়েছি আমরা। সিবিআই আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে এই তথ্য প্রমাণ তাঁরা ব্যবহার করবেন।’’ 
নবান্নে প্রতিনিধিদলকে বাধা দেয় পুলিশ। এর আগে মুখ্য সচিবের দপ্তরে ই-মেইল করে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন তাঁরা। প্রতিনিধিদের পক্ষে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’র যুগ্ম আহ্বায়ক হীরালাল কোনার নবান্নের ভেতরে যান।  তাঁকে বলা হয় যে সাথে দেখা করার মতো কোনো আধিকারিক নেই। তিনি স্মারকলিপির কপি জমা দিয়ে আসেন। এমনকি পুলিশ নবান্নের বাইরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলতে দেয়নি।

Comments :0

Login to leave a comment