কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা কোনও প্রতিবাদ, মিছিল, ধর্মঘটে অংশ নিতে পারবেন না। এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকার ফতোয়া জারি করেছে। সিআইটিইউ বুধবার কেন্দ্রের এই উদ্ধত নির্দেশের কড়া নিন্দা করে বলেছে, এই নির্দেশিকা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সোমবার জারি করা নির্দেশিকায় সব ধরনের প্রতিবাদই কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য নিষিদ্ধ করতে চাওয়া হয়েছে। কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ দপ্তরের তরফে জারি করা নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরের সচিবদের কাছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীরা কোনো ধরনের ধর্মঘট, গণক্যাজুয়াল লিভ, গো স্লো, অবস্থান ধরনা করতে পারবেন না। এমন কাজও করতে পারবেন না যা ধর্মঘটে মদত দেয়। সরকারি কর্মচারীদের কাজের আচরণবিধি ৭ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হয় এমন কোনও কাজই নিষিদ্ধ।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে কোনও ধরনের প্রতিবাদ করলেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। বেতন কাটা ছাড়াও যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিবদের বলা হয়েছে, কর্মীদের এই নির্দেশের কথা জানিয়ে দিতে হবে। প্রতিবাদসহ যে কোনও ধরনের ধর্মঘটকে থেকে তাঁদের বিরত রাখতে হবে। যদি ধরনা, প্রতিবাদ, ধর্মঘট হয় তাহলে কতজন সেখানে অংশ নিয়েছেন তা সেদিনই সন্ধ্যায় কর্মীবর্গ মন্ত্রককে জানাতে হবে।
সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই নির্দেশিকায় সরকারি কর্মীদের যে কোনো ধরনের সমষ্টিগত মতপ্রকাশে অংশগ্রহণই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাস্তবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কোনো ধরনের প্রতিবাদই নিষিদ্ধ করতে চাওয়া হয়েছে। এইরকম প্রতিবাদে অংশ নিলে গুরুতর পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ হলো সরকারি কর্মীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও দাবির জন্য, কাজের শর্তের জন্য যে কোনো ধরনের সমষ্টিগত মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার নিষিদ্ধ করার স্বৈরতান্ত্রিক প্রচেষ্টা। ভারতীয় সংবিধান সমস্ত নাগরিককে এই অধিকার দিয়েছে।
সিআইটিইউ বলেছে, মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার শ্রমিক বিরোধী ধ্বংসাত্মক নীতির জন্যই ইতিমধ্যেই পরিচিত। কিন্তু দেশ জুড়ে শ্রমজীবী মানুষের প্রায় সব অংশ থেকে একের পর এক প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীরাও রয়েছে। এই প্রতিবাদের ঢেউ উঠতে থাকায় মোদী সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভের প্রাক্কালে। পুরানো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর দাবিতে রাজ্যে রাজ্যে সরকারি কর্মীরা আন্দোলনে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই প্রকল্প ফিরিয়ে আনার ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরাও এখন এই প্রকল্প ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। ২০০৪ সালে চালু হওয়া নতুন পেনশন প্রকল্পের জটিলতা ও ব্যর্থতা দেখে সরকারও কিছু অংশের কর্মীদের বিকল্প বেছে নেবার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নির্দেশিকা শুধু এই দাবিতে আন্দোলনের কথাই বলেনি, সাধারণভাবে সমস্ত প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের অধিকার কেড়ে নেবার কথা বলেছে। শুধু ধর্মঘটই নয়, ‘প্রতিবাদ’ করাও যে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে তা বারে বারে এই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সিআইটিইউ বলেছে, নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিল এবং পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরকারি কর্মীদের প্রতিবাদ ক্রমশ সোচ্চার রূপ নিচ্ছে। এটি ক্রমশ মোদী সরকার ও বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলির কাছে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই মরিয়া ভাব থেকেই সরকারি কর্মীদের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে-সব রাজ্য সরকার পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনছে তাদের নয়া পেনশন প্রকল্পের তহবিল ফেরত না দেবার মারাত্মক ও অবৈধ অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্র। এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবেই।
তপন সেন বলেছেন, ন্যাশনাল জয়েন্ট কাউন্সিল অফ অ্যাকশনের জেলা স্তরে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রতিহত করতেই শয়তানি উদ্দেশ্য নিয়ে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই করে প্রতিবাদ আটকানো যাবে না। সিআইটিউ এই স্বৈরতান্ত্রিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সমগ্র ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
CITU
প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রের ফতোয়া উদ্ধত, স্বৈরতান্ত্রিক
×
Comments :0