বিজেপি সরকার ধ্বংস করছে ভারতের অর্থনীতিকে, যুবসমাজের আশা আকাঙ্ক্ষাকে। তৃণমূল সহ বিজেপি’র অন্যান্য প্রকাশ্য ও গোপন আঁতাতের দলগুলোও একই কাজ করছে। মুখে বলছে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় নয় আর বসে আছে দুর্নীতির পাহাড়ে। এইসব নীতিহীন সরকার আর শাসকদলের স্বেচ্ছাচারিতায় সর্বনাশ ঘটছে শ্রমিক শ্রেণির। এর বিরুদ্ধে লড়ছে সিআইটিইউ। দেশ জুড়ে আরও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৃহস্পতিবার সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এল একথাই।
আগামী ৫ এপ্রিল শ্রমিক, কৃষক, একযোগে মজদুর কিষান সংঘর্ষ পদযাত্রা হবে সংসদের উদ্দেশে। অংশ নেবে সিআইটিইউ, এআইকেএস, এআইএডব্লুইউ। এই সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন এদিন গৃহীত হয় সম্মেলন মঞ্চ থেকে। এদিন মোট ৪০ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেছেন সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর। এরপর সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক তপন সেন।
বিজেপি -আরএসএস যেভাবে রাজ্যে রাজ্যে ধর্মীয় উগ্রতা কায়েম করে বিচ্ছিন্নতাবাদের খেলায় মেতেছে তা অতি মারাত্মক হতে চলেছে বলে মন্তব্য করে প্রতিনিধিরা এদিন বলেন, মানুষকে যত দুর্বল করা যাবে ততই ফায়দা লুটবে পুঁজিপতিরা। একে এই মুহূর্তে রুখতে হবে। মানুষের সামনে বিকল্পকে তুলে ধরতে হবে বামপন্থীদের। প্রতিটি শিল্প ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে। বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই। ন্যূনতম মজুরি, সুযোগ সুবিধা উধাও। এর বিরুদ্ধে আরও জোরদার আন্দোলন প্রয়োজন। একমাত্র কাস্তে হাতুড়িই পারে সে কাজ করতে। আমাদের তা করে দেখাতেই হবে।
বৃহস্পতিবার ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। বুধবার সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিনিধিদের আলোচনা। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা মিলে মিশে এক টুকরো মিনি ভারত যেন প্রতিফলিত হয়েছে গোটা সম্মেলন কক্ষে। কেরালা থেকে আসাম, ত্রিপুরা থেকে কর্ণাটক, গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গ আলোচনায় উঠে এসেছে বিজেপি ও সহযোগী দলগুলির স্বেচ্ছাচারিতার প্রসঙ্গ। তাঁদের বক্তব্যে এসেছে এলাকায় এলাকায় সিআইটিইউ এর তীব্র লড়াইয়ের কথা। লাল ঝান্ডাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে মজবুত করার কথা।
সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর এদিন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বক্তব্য রাখেন ৪ জন প্রতিনিধি। দেবাঞ্জন চক্রবর্তী লকডাউন সময়কার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিআইটিইউ শ্রমিকদের পাশে থেকে সহায়তায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই , রেড ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের অপশাসন শ্রমিক শ্রেণির ওপর দমনপীড়ন নামিয়ে এনেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আন্দোলন পুলিশ দিয়ে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন জিয়াউল আলম, বিশ্বনাথ ব্যানার্জি, ইন্দ্রাণী মুখার্জি। সিআইটিইউ সেন্টার থেকে বক্তব্য রেখেছেন অর্ক রাজপণ্ডিত। এদিন জিয়াউল আলম বলেন, আমাদের কষ্টের অর্থেই চলছে গোটা দেশের অর্থনীতি। কিন্তু অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়ে সেই টাকা কার্যত লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে শুরু করে সমস্ত সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে লড়াই চলছে। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্মী শ্রমিকরা চরম আক্রমণের মুখে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, ভুগছেন সকলেই, এই লড়াই আরও জোরদার করে তুলতে হবে।
হরিয়ানা থেকে আগত প্রতিনিধি বলেন সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্থায়ী নিয়োগের উদ্দেশ্য প্রণোদিত সরকারের নীতির কথা। ত্রিপুরা থেকে আগত প্রতিনিধি তুলে ধরেন বিজেপি সরকারের দমনপীড়ন নীতির উদাহরণ। বিজেপি সরকারের বিভিন্ন নীতির তীব্র সমালোচনা করেন কেরালা থেকে আগত প্রতিনিধিরা। কিভাবে বামপন্থী শক্তি বিজেপি’র আক্রমণকে প্রতিহত করতে সক্ষম হচ্ছে তা বলেন তাঁরা।
আলোচনায় এসেছে তফসিলি ও আদিবাসী দলিত অংশের মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মূল জনজীবন থেকে, আলোচনায় এসেছে কিভাবে কৌশলে আরএসএস ধর্মীয় ভাগের ভিত্তিতে পরিবার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে প্রতিবাদী মানুষকে।
এদিন আলোচকদের প্রতিবেদনে এসেছে বিভিন্ন প্রকল্প কর্মীদের সমস্যার কথা। কীভাবে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি, মিড ডে মিল কর্মী, মানব সম্পদ কর্মীরা বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন সেই উদাহরণ এসেছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রগুলি যেভাবে রুগ্ণ করার চেষ্টা চলছে এবং কর্মীরা আক্রমণের মুখে পড়েছেন, সেকথাও সম্মেলন মঞ্চে বলেন প্রতিনিধিরা।
এদিন সম্মেলন স্থলে ছবি ও পুস্তক সম্বলিত একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। প্রদর্শনীতে আছে ৭টি স্টল। উদ্বোধন করেন পিকে শ্রীমতি। উপস্থিত ছিলেন তপন সেন এবং কে হেমলতা। এদিন চে গুয়েভারার কন্যা চিকিৎসক আলেইদা গুয়েভারা এবং অর্থনীতির অধ্যাপক চে নাতনি এস্টোফানিয়া গুয়েভারা উপস্থিত হন সম্মেলন মঞ্চে। তাঁদের সংবর্ধনা দেন তপন সেন, কে হেমলতা, স্বদেশ দেবরায় প্রমুখ। এছাড়া এদিন এআইডিডব্লিউ থেকে
ছবি: রবীন গোলদার
Citu conference
কীভাবে আক্রান্ত শ্রমজীবীরা, উঠে এল জীবন্ত চিত্র
×
Comments :0