‘অশিক্ষিত’ হোন বা স্বল্পশিক্ষিত হোন, অষ্টম শ্রেণি পাশ বা ডক্টরেট হোন প্রধানমন্ত্রী হতে ভারতের সংবিধানে কোনও বাধা নেই। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে শিক্ষাগত যোগ্যতা জানাতে হয় এবং প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। কেউ যদি ‘অশিক্ষিত’ বা নিরক্ষর হোন তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনও বাধা নেই। সেক্ষেত্রে প্রমাণপত্র দেবার কিছু নেই, শুধু উল্লেখ করতে হবে নিরক্ষর। অতীতে স্বল্প শিক্ষিত এবং কম ডিগ্রিধারী অনেকেই সাংসদ-বিধায়ক হয়েছেন। মন্ত্রীও হয়েছেন। তাতে সমস্যা কিছু হয়নি। কারণ ঢাক ঢাক গুড়ু গুড়ু কিছু ছিল না। লুকোচুরি বা তথ্য গোপন করার কোনও প্রবণতাও ছিল না। তাই কোনও দিনই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধেনি, আদালতের বিচার্য হওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু মোদী জমানায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রাজনীতির ময়দানে এবং আমজনতার পরিসরে রীতিমতো সওয়াল জবাব চলছে। এই বিতর্ক প্রধানমন্ত্রীর কেমন লাগছে সেটা জানা না গেলেও প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা কলঙ্কিত হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দেশবাসীর এতটা কৌতূহল থাকা বাঞ্ছনীয় কি? প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত না অশিক্ষিত তা নিয়ে মানুষের এত মাথা ব্যথারই বা কারণ কি? আসলে মাথা ব্যাথা কারোরই ছিল না। মাথা ব্যাথা ও কৌতূহল জাগিয়ে তুলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তার দল। বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর নিজের জীবনের যেসব কাহিনি প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন তাতে বিস্ময়ের, সন্দেহের ও কৌতূহলের যথেষ্ট উপাদান ছিল। তিনি বলেছেন অর্থাভাবের কারণে ছোটবেলায় রেল স্টেশনে চা বিক্রি করতেন। ছোটবেলায় একবার নাকি গ্রামের জলাশয় থেকে কুমির ধরে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। গৃহত্যাগ করে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বেশ কয়েক বছর তাঁর কেটেছে হিমালয়ে ধ্যান করে। নির্বাচনের মনোনয়ন পত্রে দাবি করেছেন ১৯৮৭ সালে তিনি বিএ এবং ১৯৮৩ সালে তিনি এমএ পাশ করেন। লক্ষ্যণীয় আগে মনোনয়ন পত্রে নিজেকে অবিবাহিত দাবি করলেও পরবর্তীকালে জানিয়েছেন তিনি বিবাহিত। স্ত্রীর নামও উল্লেখ করেছেন। নিজের জীবন সম্পর্কে অজস্র সন্দেহজনক কাহিনি প্রচার করে এবং বিভিন্ন সময় পরস্পর বিরোধী তথ্য দিয়ে তিনি মানুষের আকর্ষণ ও কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই সত্য জানার আগ্রহ মানুষের বেড়েছে।
আইনের বিরুদ্ধে যেটাই থাকুক ১৪০ কোটি মানুষের দেশের প্রধানমন্ত্রীর জীবন সম্পর্কে অস্বচ্ছতা, গোপনীয়তা, লুকোচুরি বাঞ্ছনীয়। মানুষ যাকে বিশ্বাস-ভরসা করে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, এই বিশাল দেশের পরিচালনার ভারত যার হাতে তাঁর সম্পর্কে সবটা জানার গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের আছে। তিনি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এটা বিশ্বাস করতে কেন মানুষের দ্বিধা থাকবে। যদি স্বচ্ছতা থাকে সত্যে প্রমাণ জনসমক্ষে মজুত থাকে তাহলে তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মোদী এবং তাঁর দল বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে জলঘোলা করছেন তাতে মনে হতেই পারে তারা কিছু লুকোচ্ছেন।
একজন ছাত্র স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন অথচ সমগ্র ছাত্র জীবনে তাঁর একজন সহপাঠী বা শিক্ষকের সন্ধান ভূ-ভারতে মেলেনি। তাহলে কি ধরে নিতে হবে তাঁর কোনও শিক্ষক ছিল না। তাঁর ক্লাসে একজন ছাত্রই তিনি ছিলেন। দলের তরফ থেকে অমিত শাহ মোদীর যে শংসাপত্র হাজির করেছেন তাতে তিনি নাকি এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্সে এমএ পাশ করেছেন। এমন বিষয় ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এরপরেও দেশের কোনও নাগরিক তার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত বিষয় নিয়ে সত্য জানতে চান সেটা অপরাধ হতে পারে না। বরং সত্য গোপন বা আড়ালে করার চেষ্টাই অপরাধ। এনআরসি করে দেশে মানুষকে কাগজ দেখাবার হুমকি দিচ্ছে মোদী সরকার। কিন্তু মোদী তাঁর কাগজ জনগণকে দেখাবেন না। তিনি নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাজা-মহারাজা মনে করেন।
Editorial
‘স্বচ্ছ ভারত’ অস্বচ্ছ প্রধানমন্ত্রী
×
Comments :0