আবাস যোজনার ক্ষেত্রে ডি এম'র স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন একটি পঞ্চায়েতেও নিয়ম মাফিক গ্রামসভা অনুষ্ঠিত হলো না? আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে কেন এতো গোপনীয়তা? ১০০ দিনের বকেয়া মেটাতে কেন এতো গড়িমসি? ব্লকে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার দপ্তর কেন বন্ধ? বি এল অ্যান্ড আর ও অফিসে অনলাইনে জমির মিউটেশনের জন্য কেন অফ লাইনে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে? অভিজ্ঞতায় লব্ধ এমনই কতক প্রশ্ন তুলে বুধবার সিপিআই(এম) হিঙ্গলগঞ্জ উত্তর ও দক্ষিণ এরিয়া কমিটি ও হাড়োয়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বিক্ষোভ আছড়ে পড়লো বিডিও অফিস গুলিতে। আমফান, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবনাঞ্চলের হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ জনপদ।গ্রামে গ্রামে কাজের হাহাকার। কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমানো নিত্য দিনের ঘটনা।
কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জমির পাট্টা। নতুন করে পাট্টা দেওয়ার ক্ষেত্রে চলছে দুর্নীতি। সরকারি পতিত জমি বেমালুম লুট হচ্ছে দিনের আলোয়। এমতাবস্থায় আবাস যোজনায় শাসকদলের সীমাহীন দুর্ণীতির গেরোয় পড়ে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত ঘর প্রাপকরা।আইসিডিএস, আশা কর্মীদের সমীক্ষা করতে গিয়ে শাসকদলের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে আদৌ কী প্রকৃত ঘর প্রাপকরা ঘর পাবে? এই প্রশ্নের উত্তর চাইতে এবং অবিলম্বে স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ, তপশিলি জাতি, উপজাতিদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা, ১০০দিনের বকেয়া মেটানো, ষাটোর্ধ্ব সকল গরীব মানুষদের মাসে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা ভাতা, করোনাজনিত কারণে কাজ হারানো মানুষদের পরিবার প্রতি ন্যূনতম সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেওয়া সহ অন্যান্য দাবিতে হিঙ্গলগঞ্জ কালিবাড়ি থেকে মিছিল হয়।মিছিলে সান্ডেলের বিল, যোগেশগঞ্জ, কালিতলা, বাকড়া,দুলদুলি, সাহেবখালি এলাকা থেকে যন্ত্রনাক্লিষ্ট সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। মিছিল এসে শেষ হয় হিঙ্গলগঞ্জ বিডিও অফিসে।
সেখানে বিক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন অঞ্জনাভ পাল। বক্তব্য রাখেন পার্টির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, নিরাপদ সর্দার, অতনু মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন পার্টি নেতা রাজু আহমেদ, রবি বিশ্বাস। বিক্ষোভ সভা থেকে ১২ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে ৭ জনের প্রতিনিধিদল দেখা করে বিডিও শাশ্বত লাহিড়ীর সাথে। অন্যদিকে হাড়োয়ায় পার্টি দপ্তর থেকে মিছিল আসে হাড়োয়া বিডিও অফিসে। সেখানে বিক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন দীনবন্ধু মণ্ডল। বক্তব্য রাখেন, পার্টি নেতা সায়নদীপ মিত্র, কিশোর গাঙ্গুলি, শানু রায়, ইমতিয়াজ হোসেন, অধীর মল্লিক। সভা থেকে ৫ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে ৫ জনের প্রতিনিধিদল যায় বিডিও সমীররঞ্জন মান্নার কাছে।উভয় ব্লকের বিডিওরা ডেপুটেশনে উল্লেখিত দাবিগুলি সম্পর্কে সহমত পোষণ করেন এবং সদুত্তর দেন।
উভয় বিক্ষোভ সভায় নেতৃবৃন্দ দ্বর্থ্যহীন ভাষায় বিডিওদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঢাকঢোল বাজিয়ে ঘরের যে টাকা দেওয়া হবে তা যেন প্রকৃত প্রাপককে দেওয়া হয়। আবাস যোজনার অস্বচ্ছ তালিকা কোন মতেই মেনে নেওয়া হবে না। স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করে ব্লকে ব্লকে টাঙিয়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষ তা দেখবে। তালিকা অনুযায়ি প্রতিটি গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় মিলিয়ে নেওয়া হবে তালিকায় প্রকাশিতরা আদৌ ঘর পাওয়ার যোগ্য কিনা। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন বিজেপি এবং তৃণমূল এক অপরের পরিপূরক। নীতিহীন দল এরা। মানুষের প্রতি এদের কোন দায় নেই। দীর্ঘ ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট মানুষকে যে অধিকার দিয়েছিল এরা তা কেড়ে নিচ্ছে। বিক্ষোভে আসা সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, আপনি যদি আপনার অধিকার কেড়ে নিতে দেন তাহলে এরা আপনার হক কেড়ে নেবে। অধিকার চেয়ে পাওয়া যায় না। অধিকার কেড়ে নিতে হয়। সেই সময় আসন্ন। মানুষ জাগছে। মানুষের আশা ভরসার স্থল হয়ে উঠতে হবে আমাদের। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে বিজেপি এবং তৃণমূল সুনিপুণ হাতে বিভাজনের রাস্তা তৈরি করে মানুষকে ভাগাভাগির খেলায় মাতিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করবে। সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে জোরদার লড়াই এখনই শুরু করে দিতে হবে।
Hingalgunj
শাসকদলের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে হিঙ্গলগঞ্জে শ্রমজীবীদের বিক্ষোভ
×
Comments :0