দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্নাতকোত্তর শংসাপত্র প্রকাশ করবে না গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের নির্দেশকে খারিজ করে শুক্রবার এমনই রায় দিল গুজরাট হাইকোর্ট।
এই মামলার সওয়াল করলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা নিজে। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সওয়াল করেন তিনি। দেশের কোনও নাগরিক ‘প্রধানসেবক’-র পরীক্ষা পাশের কাগজপত্র দেখানোর আবেদনকে ‘শিশুসুলভ কৌতুহল’ আখ্যা দিলেন মেহতা। তাঁর সংযোজন, ‘‘ডিগ্রি জনসমক্ষে প্রকাশ করা রয়েছে। শংসাপত্র প্রকাশের নির্দেশ চেয়ে তথ্যের অধিকার আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী হলফনামায় নিজেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ বলে জানিয়েছেন। লক্ষ্যণীয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত কাগজপত্র দেখানোর নির্দেশ নিয়েও চলছে মামলা। দিল্লি হাইকোর্টে সেই মামলার শুনানি হবে ৩ মে।
প্রধানমন্ত্রীর শংসাপত্র প্রকাশে এত আপত্তি কিসের? দীর্ঘদিনের এই প্রশ্ন ফের মাথাচাড়া দিয়েছে গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি বীরনে বৈষ্ণবের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের রায়ে। প্রধানমন্ত্রী তো অনেক দূরের কথা, সমাজের কোনও ক্ষেত্রে কৃতী প্রাক্তণীর বিশদ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সগর্বে ঘোষণা করে, প্রকাশও করে জনসমক্ষে। ক্লাসঘরের সতীর্থরাও স্মৃতিচারণ করে থাকেন। অথচ ‘নতুন ভারত’ অন্য অভিজ্ঞতার শরিক। গুজরাট এবং দিল্লি, দুই বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে লড়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত শংসাপত্র প্রকাশ ঠেকাতে। কোনও প্রাক্তনীকেও দেখা যাচ্ছে না স্মৃতিচারণ করতে!
মূল মামলা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ‘আপ’ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে। তাঁর ভোটার পরিচিতিপত্র সংক্রান্ত এক মামলায় তথ্য কমিশনে প্রধানমন্ত্রীর বিশদ জানানোর আবেদন জানান কেজরিওয়াল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে, ২০১৬’তে, স্বতঃপ্রণোদিত নির্দেশ জারি করেন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচারিয়ালু। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে মোদীর স্নাতকোত্তরের বিশদ নথি প্রকাশের নির্দেশ দেন। তারপর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নথি আড়ালে লড়াকু ভূমিকায় নামে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়।
আইন বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’ জানাচ্ছে যে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে ‘আস্থাভাজন মধ্যবর্তী’ বলে পরিচয় দিয়েছে আদালতে। প্রতিষ্ঠানের সওয়াল, ‘‘বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন প্রমাণ না থাকলে তথ্যের অধিকার আইনে এই নথি প্রকাশ করতে বাধ্য নয় প্রতিষ্ঠান।’’
প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতার নথিও জনস্বার্থ সম্পর্কিত নয়? বিস্ময় আরও যে অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি চাপতে তো কোনও প্রতিষ্ঠানকে এমন মরিয়া ভূমিকায় দেখা যায়নি!
শুক্রবার রায় ঘোষণায় তথ্য কমিশনের নির্দেশকে কেবল খারিজ করেনি গুজরাট হাইকোর্ট। কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে!
পশ্চিমবঙ্গে যদিও অতীতে এমন বিতর্ক হয়েছে। অতীতে বিরোধী নেত্রী থাকার সময় নিজেকে ‘ডক্টরেট’ বলে পরিচয় দিতেন মমতা ব্যানার্জি। তার নথি প্রমাণ সহ দেখাতে পারেননি।
Comments :0