Opposition

নিরাপত্তার গুরুতর ত্রুটি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি বিরোধীদের, মুখে কুলুপ মোদী-শাহের

জাতীয়


হামেশাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদীর সময়কালে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুদৃঢ় হয়েছে। যে কোনও মূল্যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বুধবার সারাদিনে একটি কথাও সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখ থেকে কেউ বের করতে পারেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে কথা বলানোর জন্য এবার বিরোধীরা যাবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েলে হামাসের হামলা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে টুইট করেন, তিনিও লোকসভার এদিনের ঘটনা নিয়ে রাত পর্যন্ত গভীর নীরবতায় তিনি। সংসদে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু এদিনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার হাল। 
এদিন বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে মূলত নিরাপত্তার গুরুতর ত্রুটির দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে। সেই সূত্রেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য দাবি জানাতে থাকেন বিরোধী দলের সাংসদরা। সেই দাবি না মানায়, ইন্ডিয়া মঞ্চে থাকা দলসমূহ রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সংসদে ইন্ডিয়া মঞ্চের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তারপরেই রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চাওয়া হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের জবাব দেওয়ার দাবি বৃহস্পতিবারও বিরোধীরা জোরের সঙ্গে তুলবেন। 
কংগ্রেস এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার ছবি পোস্ট করে লিখেছে, ‘‘না হি ওহান কোই ঘুস আয়া হ্যায়, না হি ওহান কিসি নে কিসি কো ঘুসায়া হ্যায়।’’ লাদাখে চীনের সেনা ঢুকে পড়া নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে তুলে ধরে কটাক্ষ করা হয়েছে পোস্টে। কর্নাটকের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার থেকে পাশ নিয়েই লোকসভার ভেতরে এদিন ঢুকেছিল দুই ব্যক্তি। কংগ্রেস বলেছে, বিজেপি সাংসের পাসেই সংসদে অনুপ্রবেশ হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, সংসদে নিরাপত্তার ত্রুটি একটি গুরুতর ঘটনা। আমাদের দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সংসদের উভয় কক্ষে এসে এই বিষয়ে বিবৃতি দিন। এত বড় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে কীভাবে দুই ব্যক্তি লোকসভার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়তে পারলো এবং কেনেস্তারা থেকে গ্যাস ছড়িয়ে দিতে পারলো, এটাই সবথেকে গুরুতর প্রশ্ন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বেনুগোপাল বলেছেন, দেশের যেসব ভবনগুলির নিরাপত্তা সর্বাধিক, তারমধ্যে একটি সংসদ ভবন। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার এইরকম গুরুতর ত্রুটি মেনে নেওয়া যায় না। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই ২০০১ সালের হামলা আর এদিনের ঘটনা এক নয়, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ২০০১ সালে সংসদে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার দিনেই এমন ঘটনা ঘটায় অনেকেই বাজপেয়ীর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন মোদীকে। বিশেষত বিজেপি সাংসদের থেকে পাশ নিয়ে হানাদারদের ঢুকে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি সরকারের সময়েই বার বার এমন ঘটনা ঘটছে কেন? 
সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন দাবি তুলেছেন, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং দ্রুত তদন্ত করা হোক। বিজেপি সাংসদের ভূমিকারও তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। রাজ্যসভার সিপিআই (এম) সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এটাকে সরাসরি বিজেপি’র গেম প্ল্যান বলে উল্লেখ করেছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জমি তৈরি করতেই বিজেপি এইসব করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। লোকসভা ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট জেতার জন্য পুলওয়ামার মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। ভারতের নাগরিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সিপিআই (এম)’র প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম সংসদ ভবনের বহু স্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গ করা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, আগেরবার যখন সংসদে হামলা হয়েছিল তখন নকল লৌহপুরুষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। এখন যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তিনি সব সময় দাবি করেন সমস্ত তথ্য তাঁর নখের ডগায় থাকে এমন নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, ২০০১ সালে সংসদ ভবন আক্রান্ত হয়েছিল। সেদিন সরকার পক্ষ এবং বিরোধীরা একযোগে উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেদিন। আজ সরকার পক্ষ সেই দায়িত্ব নিতে পারছে না। তিনি বলেন নতুন সংসদ ভবনের বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোর দিনে অতিথিদের নিয়ে আসা হয়েছিল ‘মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার জন্য। সেদিনই আমরা বলেছিলাম, আগামীদিনে কেউ ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগানও দিতে পারে। কেউ কেউ কিছু ছুঁড়েও দিতে পারে। যেটা সরকার পক্ষ শুরু করেছিল, তার ফলাফল আজ আমরা দেখতে পেলাম। এটা একটা গুরুতর নিরাপত্তার ত্রুটি। নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও এদিন এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রাজ্যসভা চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, সংসদের ভেতরে এইভাবে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। কোনও সাংসদরা এদের এখানে আসার ব্যবস্থা করেছেন, তার তদন্ত করা হেক। তিনি বলেন, গতকালও আমি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম খালিস্তানি উগ্রপন্থার প্রশ্নে। কিন্তু কোনো কিছুকেই পাত্তা দেওয়া হয়নি। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, আমাদের গণতন্ত্রের পবিত্র মন্দিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি। তিনি দ্রুত তদন্ত দাবি করে এর দায়ভার নির্দিষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন। এইধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার ব্যবস্থার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন বলেছেন, এই ত্রুটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই।
 

Comments :0

Login to leave a comment