Shilton Paul on ISL final

ম্যাচ হবে হাড্ডাহাড্ডি, ট্রফি যাক প্রীতমের হাতে

খেলা

শিল্টন পাল

 

এবার আইএসএলে দু’ দলের যা পারফরম্যান্স, ফাইনালের ফল সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। দু’টি দলই ভালো। লিগে হায়দরাবাদ এফসি’র কাছে হারের পর কোনও ম্যাচে হারেনি মোহনবাগান। চারটে ম্যাচে ক্লিনশিট। গোল খেয়েছে মাত্র একটা। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু খারাপ শুরু করলেও অভূতপূর্ব প্রত্যাবর্তন করে ফাইনালে উঠেছে। টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত। তাই, কাউকেই এগিয়ে-পিছিয়ে রাখা যাবে না। এটিকে মোহনবাগান- বেঙ্গালুরু এফসি শেষ আট বছরে এই নিয়ে তিনবার ভারতসেরা হওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে। 


বেঙ্গালুরু খুবই সঙ্ঘবদ্ধ দল। এই মুহূর্তে খুব ভালো জায়গায় রয়েছে ওরা। প্রতিটা পজিশনে দারুণ সব ফুটবলাররা রয়েছে। পজিটিভ গোলগেটার রয়েছে। রয় কৃষ্ণ থেকে তরুণ শিবাশক্তি দু’জনেই গোলটা খুব ভালো চেনে। তার উপর অভিজ্ঞ সুনীল ছেত্রীর উপস্থিতি, যে কোনও দলেরই বাড়তি পাওনা। সুনীল শুরু থেকে না খেললেও পরিবর্ত হিসাবে নেমে কাজের কাজ করে দিচ্ছে। তাই, মোহনবাগান রক্ষণকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। বেঙ্গালুরু চাইবে প্রথমেই গোল করতে। গত মরশুমে প্রবীর, সন্দেশ ঝিঙ্গান ও রয় কৃষ্ণরা মোহনবাগানে ছিলেন। ফাইনালে কিন্তু তিন জন ফুটবলার নিজেদের সেরাটা দিয়ে যে কোনোভাবে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করবে। এছাড়াও বিএফসি’র মাঝমাঠ-উইংও যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রবীর দাস থেকে রোহিত কুমাররা দুরন্ত। জাভি খুব ভালো ছন্দ রয়েছে। অপরদিকে, মোহনবাগানের পুরো দলটাই অনবদ্য। ব্যাক টু আপফ্রন্ট সবাই খুব ভালো। পজিটিভ নাম্বার নাইন না থাকলেও দলের প্রত্যেকেরই গোল করার ক্ষমতা রয়েছে। ফাইনালে যদি আশিক করুনিয়ান খেলতে পারে, সেটা অনেক ইতিবাচক হবে দলের জন্য। প্রীতম কোটালের নেতৃত্বে ডিফেন্স খুব জমাট। বেঙ্গালুরুর আক্রমণভাগ শক্তিশালী হয়, তাহলে বাগানের ডিফেন্সও লড়াকু। যদি একটা গোল করতে পারে, সেক্ষেত্রে ডিফেন্সটা গুছিয়ে নিতে পারবে প্রীতমরা। মাঝমাঠে কার্ল ম্যাকহিউ ও গ্লেন মার্টিন্সরা অনেক লোড নিয়ে খেলছে। হুগো বুমোসের মতো সৃজনশীল ফুটবলার আছে। রয়েছে দিমিত্রি পেত্রাটোস। দলগত ফুটবলে মোহনবাগান কিছুটা এগিয়ে।
তবে ম্যাচটা টাইব্রেকারে গেলে বেঙ্গালুরু এগিয়ে থাকবে। কারণ, ওদের দলে গুরুপ্রীত সিং সান্ধুর মতো গোলকিপার আছে। যে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। ওঁকে অনেকদিন ধরেই চিনি। টাইব্রেকারে গুরুপ্রীত বেশি ভালো। মোহনবাগানের গোলরক্ষক বিশাল কাইথকেও পিছিয়ে রাখা যাবে না।  


সুতরাং, মোহনবাগান-বেঙ্গালুরুর ম্যাচটা খুব হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হবে। উপভোগ্য খেলা হবে। আমাদের সময়েও দেখেছি, দু’দলের ম্যাচ ঘিরে আলাদা একটা উম্মাদনা তৈরি হয়। এবারও হচ্ছে। ২০১৫ সালে ওদের মাঠে ওদের হারিয়েই আই লিগ জিতেছিলাম। সেবছর কিন্তু সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মোহনবাগানের। ট্রফি খরা চলছিল। আমাদের উপর যথেষ্ট চাপ ছিল। তাই, লক্ষ্য ছিল আই লিগ জেতা। বেঙ্গালুরুতে যখন যাই, আত্মবিশ্বাস ছিল যে জিতবোই। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পর বিরতিতে ড্রেসিংরুমেও সবাই ইতিবাচক ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে জিততে পারি বা ড্র করতে পারি। ৮৭ মিনিটে সনি নর্ডির কর্নার থেকে বেলো রজ্জাক হেডে গোল করেছিল। যথেষ্ট ভালো খেলেছিলাম ম্যাচটা। আই লিগ জেতার পর আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়ছিল, যা আজও অমলিন। জেতার পর বাঁধভাঙা উদ্‌যাপন কেউ ভুলতে পারেনি। আমি মাঠের চারিদিকে দৌড়াচ্ছিলাম। সারারাত পার্টি করেছি। কেক কেটেছি। সমর্থকরাও ছিল। কলকাতার এত লোকের সমাগম ছিল, দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি। সেই স্মৃতি ভোলার নয়। আর এবার যেন বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে জিতে ফিরে আসে মোহনবাগান। একজন বাঙালি অধিনায়ক প্রীতমের হাতে ট্রফি উঠবে, আমার খুব ভালো লাগবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment