CHIEF ECONOMIC ADVISER

মূল্যবৃদ্ধি, কর্মহীনতার দায় বিশ্ব সঙ্কটের ওপর চাপাচ্ছে কেন্দ্র

জাতীয়

CHIEF ECONOMIC ADVISER

বিশ্বে মন্দা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। আবার বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই ভরসা করছেন বিদেশেরই অর্থনীতির ওপর। আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশের পর এমনই নীতি পরিকল্পনা ধরা পড়েছে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার কথায়। 

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন নাগেশ্বরণ। তবে কোভিডের তুলনায় বেকারির হার হ্রাস পাওয়াতেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। চল্লিশ দশকে সর্বোচ্চ কর্মহীনতার হার ৬.৯ শতাংশে দেশ পৌঁছেছিল গতবারের নির্বাচনের আগেই। তখন কোভিড বা লকডাউন ছিল না। সেই স্তরে পৌঁছানো তো দূর, লকডাউনের ২০ শতাংশ থেকে এখন ৮ শতাংশে নামতে পেরেই খুশি অর্থ মন্ত্রীর প্রধান পরিকল্পনা সহকারী। 

মঙ্গলবারই সংসদে আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দিল্লিতে তার কিছু পরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানেই হয় এই রিপোর্ট। 

নাগেশ্বরণের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক কারণেও বিশ্ব অর্থনীতিতে উৎপাদন কেন্দ্র ছড়ানো হচ্ছে। কেবল মন্দা বা কোভিডের আশঙ্কা নয়। তার পিছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ভারতের এই অবস্থায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ 

অর্থ মন্ত্রকের এই অনুমান নতুন নয়। গতবারের বাজেটেও তা বলেছিলেন সীতারামন। চীনের সঙ্গে আমেরিকার বিরোধ এই অনুমানের কেন্দ্রে রয়েছে। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুগামী দেশগুলি উৎপাদন কেন্দ্র চীন থেকে সরিয়ে বেছে নেবে ভারতকে, মূল বক্তব্য তা-ই। প্রশ্ন হলো নতুন বিনিয়োগ এলে ভারতে কর্মসংস্থানের এমন বেহাল দশা কেন। 

নাগেশ্বরণ বলছেন, ‘‘এই শতাব্দীর প্রথম দশকে কর্মসংস্থানের হারে ফিরে যাওয়া সম্ভব। তবে কর্মসংস্থান যেভাবে বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছিল তা হয়নি একাধিক ধাক্কার কারণে। তার বিবিধ কারণ রয়েছে। তবে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি আমাদের বৃদ্ধির পক্ষে কম সঙ্কটজনক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে ২০ শতাংশের ওপরে ছিল কর্মহীনতার হার। তা সম্প্রতি নেমে এসেছে ৮ শতাংশে।’’ 

ঐতিহাসিক বিচারে ৮ শতাংশ কর্মহীনতার হার মানে বিপুল বেকারি। তা অস্বীকার না করে নাগেশ্বরণের যুক্তি, ‘‘প্রথম দশক বিশ্ব বাজারে বৃদ্ধির হার উঁচুতে ছিল। দ্বিতীয় দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে হ্রাস পেতে থাকে বৃদ্ধির হার। সেই বাস্তবতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।’’ 

বামপন্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন অংশের দাবি, ‘‘বিনিয়োগ বাড়ানোর মূল উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগ না বাড়ালে বাস্তবে কর্মসংস্থান বাড়বে না। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর বদলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপরই ভরসা করতে শোনা গিয়েছে নাগেশ্বরণকে। সেই সঙ্গে কেবল ভিত্তি অর্থনীতির কয়েকটি সংস্থা হাতে রেখে বাকি সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়ার নীতিকেই সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। 

নাগেশ্বরণ বলেছেন, ‘‘বেসরকারি ক্ষেত্র, যার মধ্যে নির্মাণ ক্ষেত্রও রয়েছে, তার বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। সরকার ভিত্তি ক্ষেত্রের কয়েকটি সংস্থা বাদে বাকি সংস্থা বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই, চালু করা হয়েছে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে।’’ 

নাগেশ্বরণের যুক্তি, এই পদক্ষেপেই বাড়বে দেশি এবং বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ। অনেকেই মনে করিয়েছেন যে বিদেশি বিনিয়োগ বলে যা আসছে তার অনেকগুলিই নতুন কোনও কারখানা বা পরিষেবা তৈরি করছে না। বরং, দেশের কোনও ব্যবসা বা সংস্থাকে কিনে নিচ্ছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বরং বহু ক্ষেত্রেই ছাঁটাই হয়ে যাচ্ছে। 

বিদেশি অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস কিভাবে দেখছে কেন্দ্র? নাগেশ্বরণ বলেছে, ‘‘বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট পূর্বানুমান করছি না আমরা। তবে পেট্রোলিয়ামের দাম ব্যারেলে ১০০ ডলারের মধ্যে থাকলে আমাদের বৃদ্ধির সমস্যা হবে না।’’ 

মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকরা শেষ দুই মাসের তথ্য সামনে এনেছেন। শীতের সবজি বাজারে আসায় নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে আগের তুলনায় কমেছে ক্রেতা মূল্য সূচক। সাধারণ ক্রেতারা যে বাজার থেকে কেনেন তার দামের ভিত্তিতে এই সূচক মাপা হয়। অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলেছেন, ‘‘এই সূচক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঠিক করা সহ্যসীমা, ৬ শতাংশের নিচে নেমেছে ডিসেম্বরে। পাইকারি মূল্য সূচকও কমেছে।’’ 

গত বছরে চড়া দামের তুলনায় সূচকে কিছু কমতি দেখালেও বাস্তব বিচারে বাজারে নাকাল হতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত এবং গরিবকে। সরকারের হাতে থাকা কেরোসিন এবং গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে চড়া হারে। বেড়েছে জ্বালানির ওপর কর, ফলে পরিবহণের খরচ বাড়ছে। 

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এমন দিকগুলি প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে মত জানায়নি অর্থ মন্ত্রক। 

 

Comments :0

Login to leave a comment