Sfi organised successful rally

রাস্তার প্রতিটি চ্যালেঞ্জ জিতে ফিরল ছাত্ররা

কলকাতা

জেদের দাপটে পিছিয়ে পড়েছিল দুপুরেই। তারুণ্যের জোয়ারে শেষপর্যন্ত শুক্রবার হেরে গেল সরকারি দমনপীড়ন।
শিয়ালদহ থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউগামী রাস্তা, হাওড়া স্টেশনের জনাকীর্ণচত্বর আর ঐতিহ্যশালী বিধানসভার লোহার ফটক রইল সাক্ষী— শুক্রবার সরকারের মুখোমুখি প্রতিটি চ্যালেঞ্জে জিতে ফিরেছে এসএফআই। 
রাত পৌনে আটটা নাগাদ পুলিশের হেপাজত থেকে মুক্ত এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য তাই বলতে পেরেছেন,‘‘ওরা বলেছিল বিধানসভায় যেতে দেবে না। আমরা বিধানসভায় যাব বলেছিলাম। গেছি। ওরা মিছিল করতে দেবে না বলেছিল। আমরা মিছিল করবো বলেছিলাম, করেছি।’’ হাওড়ার শিবপুর থানা থেকে বেরিয়ে এসে এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেছেন,‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির ধারায় রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে তৃণমূলের সরকার। মোদীর রেসিপিতে রান্না করছেন মমতা ব্যানার্জি। আর তাতে বিষক্রিয়ার শিকার বাংলার গোটা একটি প্রজন্ম। ছাত্রদের স্বার্থে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লড়ছি, লড়বো।’’


এদিন শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন চত্বর দুটি মিছিল করে এসএফআই। পুলিশ অনুমান করতেই পারেনি, কতজন এসএফআই কর্মী আছেন, কারা আন্দোলনকারী, আর কারা যাত্রী, পথচারী। দুপুর তখন প্রায় দেড়টা। কয়েকশো এসএফআই কর্মী, সমর্থক শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হই হই করে মিছিল শুরু করে দেয়। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। তরুণদের দৌড় আটকাবে কী? ঘটনার আকস্মিকতায় নড়াচড়া করতে গিয়ে দু’জন পুলিশ কর্মীকে পড়ে যেতেও দেখা যায়। কোনোরকমে স্টেশন থেকে এসএফআই’র কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাঞ্জন দে, সম্পাদক মহম্মদ আতিব নিসার সহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করতে পারে। কিন্তু আরও বাকি ছিল!
কারণ, হঠাৎই কয়েক হাজার এসএফআই কর্মী নানা দিক থেকে ছুটে এসে মিছিল শুরু করে দেন। সেই মিছিলে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্রতিকুর রহমান। মিছিলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তখন উর্ধ্বশ্বাসে পুলিশ দৌড়াতে থাকে। তিন-চারবার মিছিল আটকানোর চেষ্টা হলে এসএফআই দৃঢ়তার কাছে হার মানতে হয় পুলিশকে। মিছিলের গতি বাড়তে থাকে। সঙ্গে স্লোগান উঠে শিক্ষা বাঁচানোর দাবি, ছাত্র নির্বাচনের দাবি। তার সঙ্গে ‘‘চোর তৃণমূল’’কে হটানোর গগনভেদী স্লোগান। শিয়ালদহ ফ্লাইওভার, এম জি রোড়ে গাড়ির জট, লোকারণ্য মিছিল দেখেও বিরক্ত হতে দেখা যায়নি সাধারণ যাত্রীদের। তখনও পুলিশ প্রাণপণ চেষ্টা করছিল আগুয়ান ছাত্রদের ঢল থামাতে। নিদেন পক্ষে যানজট করিয়ে মিছিলকে থমকে দিতে। খানিক হয়েছিলও তেমন। শিয়ালদহ ফ্লাইওভার থেকে নামানোর সময় এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সামনে। কিন্তু তারপরেও মিছিল রোখা যায়নি।


মিছিল তখন কলেজ ষ্ট্রিট ও এম জি রোডের সংযোগস্থলে। এখানে পুলিশ একটা কায়দা করতে গেছিল। মিছিলকে কলেজ ষ্ট্রিটে ঢুকিয়ে আটকে দিতে চেয়েছিল। পুলিশ বাহিনী কলেজ ষ্ট্রিটে ঢুকে গেছিল। এসএফআই কৌশল বদলে ফেলে। সোজা সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিকে হাঁটা শুরু করে। হতভম্ব হয়ে পুলিশকে ফের এসএফআই’র মিছিলের পেছনের দিকে দৌড়াতে হয়। 
‘‘এ কোথায় গিয়ে থামবে’’— জনৈক পুলিশ অফিসারে এহেন মন্তব্যে এসএফআই’র এক কর্মীর জবাব ছিল, ‘‘থামা নয়, নতুন করে চলা শুরু হয়েছে।’’ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে যোগাযোগ ভবনের সামনে মিছিল শেষ করার কথা ঘোষণা করেন প্রতিকুর রহমান।
বিধানসভার বাইরের অঞ্চল ততক্ষণে সরগরম হয়ে উঠেছে।
পুলিশকে আরও একবার নাজেহাল করে সৃজন ভট্টাচার্যের নেতৃত্ব এসএফআই’র অন্য এক বাহিনী পৌঁছে যায় বিধানসভার দোরগোড়ায়। পুলিশ লোহার ব্যারিকেড রেখেছিল, যাতে বিধানসভার গেট স্পর্শ করা না যায়। পুলিশকে এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সৃজন ভট্টাচার্য ও একদল এসএফআই কর্মী সেই গার্ড রেল সরিয়ে বিধানসভার গেটে উঠে পড়েন। বিধানসভার গেটের উপর দাঁড়িয়েই এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক বললেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপটেড। বলেছিলাম বিধানসভায় আসবো, এসেছি।’’ এরপর সৃজন ভট্টাচার্য সহ এসএফআই কর্মী, সমর্থকদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তুলে লালবাজারে নিয়ে যায়।
পাশাপাশি হাওড়াও সাক্ষী ছাত্রদের জেদের। শুক্রবার মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে জড়ো হন এসএফআই’র কর্মী, সমর্থকরা। তাঁরা যাতে একজোট না হতে পারেন তার জন্য স্টেশনের ভিতরে রেল পুলিশ ও সিটি পুলিশ ছাত্র-ছাত্রীদের চলে যেতে মাইকে ঘোষণা করতে থাকে। প্রতিবাদ করেন ছাত্র -ছাত্রীরা। পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের মেজাজ। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মিছিল শুরু হয়। মিছিলে ছিলেন এসএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর। মিছিল স্টেশনের বাইরে আসা মাত্র হাওড়া বাস স্ট্যান্ডের সামনে পথ আটকায় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। পুলিশের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে যান অনেক ছাত্র-ছাত্রী। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে এগোতে গেলেই পুলিশ কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীদের উপর। রাস্তায় ফেলে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলতে দেখা যায় মযূখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, শিল্পা মণ্ডল সহ সংগঠনের নেতৃত্বকে। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ১১ জন ছাত্রী ও ২৬ জন ছাত্রকে পুলিশ আটক করে শিবপুর থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়েই শিবপুর থানার সামনে জড়ো হতে থাকেন এসএফআই কর্মীরা। চলে আসেন গণআন্দোলনের নেতা সুজন চক্রবর্তী, দিলীপ ঘোষ, পরেশ পাল, তরুণ ব্যানার্জি, প্রতিকুর রহমান। সন্ধ্যায় বাধ্য হয়ে বিনা শর্তে আটক ৩৭ জনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। থানার বাইরে বেরোতেই আটক সহযোদ্ধাদের মালা পরিয়ে আবির মাখিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। 
কলকাতায় পুলিশ এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য সহ মোট ৯৭ জনকে আটক করে। রাতে সকলকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। এসএফআই’র ছাত্রদের উপর এদিনের পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে কুশপুতুল পোড়ান ছাত্র-ছাত্রীরা। রাজ্যের অন্যান্য কলেজেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।  

 

Comments :0

Login to leave a comment