চিন্ময় কর
বেপরোয়া বাইক ধাক্কা দিয়েছিল এক পথচারীকে। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রতিবাদ করার তাঁর ওপর চলল হামলা, মারধর। প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষক লক্ষীরাম টুডু। হামলাবাজরা তৃণমূল আশ্রিত। শিক্ষকের মৃত্যুতে বুধবার বিক্ষোভ ভেঙে পড়ল ডেবরার শ্রীরামপুর মৌজা এলাকায়।
নিহত লক্ষীরাম টুডু সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন শাখা সম্পাদকও। আদিবাসী পরিবার থেকে বহু লড়াই করে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর তাঁর মৃতদেহ রেখে চলছে পথ অবরোধ, বিক্ষোভ। তীব্র ক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ দুষ্কৃতীদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের তোলাবাজি, হুমকি, কাটমানি আদায়ের নানান ঘটনায় দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। এদিন প্রতিবাদী প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যায় জমা ক্ষোভে বিস্ফোরণ হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ র্যাষফ নামিয়েও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি প্রশাসন।
ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শ্রীরাম মৌজায় ঘটনাক্রমের শুরু সোমবার। পাশের গ্রাম বাকলসা মৌজার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী রবি ভুঁইয়া সঙ্গী অর্ক ভুঁইয়া, সুমন ভুঁইয়া সহ পাঁচ জন মিলে শিক্ষক টুডুকে বেপরোয়া মারধর করে। আহত শিক্ষককে গ্রামের মানুষ উদ্ধার করে প্রথমে ডেবরা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শে সেদিন রাতেই আহত শিক্ষককে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে লক্ষীরাম টুডুর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯। জালালচক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ সহ বামপন্থী আন্দোলনে শামিল ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির সামনে উঠানে বসেছিলেন শিক্ষক লক্ষীরাম টুডু। সামনে রয়েছে ঢালাই রাস্তা। সেই সময় সেই রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে তিনটি বাইকে ছুটছিল। তার একটি পথচারী এক যুবককে ধাক্কা দেয়। সেই যুবক মাটিতে পড়ে যান আহত অবস্থায়। প্রতিবাদ করেন টুডু। এরপরই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শিক্ষককে বেপরোয়া মারধর করে। লাথি মারা হয় তাঁর বুকে, মাথায়।
আক্রান্ত শিক্ষকের ছেলে রাজীব টুডু সেনা বিভাগে কর্মরত। তিনি গত ১২ মার্চ বাড়িতে আসেন এক মাসের ছুটি নিয়ে। ঘটনার দিন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি ডেবরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। বাবাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান।
রাজীব টুটু বলেন, তার মা শ্রমতি টুডু বাবাকে বাঁচাতে গেলে দুষ্কৃতীরা মায়ের চুলের মুঠি ধরে ছিটকে ফেলে দেয়। গ্রামের মানুষ ঘিরে ধরলে হামলাবাজদের কয়েকজন বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু অর্ক ভুঁইয়া এবং সুমন ভুঁইয়াকে গ্রামের মানুষ ধরে ফেলে। রাতেই পুলিশ গ্রামে গিয়ে সেই দুজনকে থানায় তুলে নিয়ে আসে।
মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষকের মৃত্যু হলে বুধবার সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে শ্রীরাম মৌজা সহ স্থানীয় জাতীয় সড়ক। জনরোষের চেহেরায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়।
Comments :0