আরও হাজার হাজার ছাঁটাইয়ের হুমকি মন্ত্রীর,
অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি কর্মচারীদের,
মানুষকে খেপিয়ে নামানো হচ্ছে বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে, দেশজুড়ে সংহতি আন্দোলনের ডাক সিআইটিইউ’র উত্তর প্রদেশে আন্দোলনরত বিদ্যুৎ কর্মীদের সঙ্গে সঙ্ঘাতে নামলো বিজেপি সরকার। ধর্মঘট ভাঙতে ছাঁটাই, এসমা সব ধরনের দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ১৩৩২ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ২২ জন নেতার বিরুদ্ধে এসমা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ আন্দোলনরত কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এরপরেই বিদ্যুৎ মন্ত্রী এ কে শর্মা আরও হাজার হাজার কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন। পালটা কর্মচারীরাও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারকে। আন্দোলনকারী বিদ্যুৎ কর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার দমনপীড়নের পথ নিলে অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটে যাওয়া হবে। রাজ্যজুড়ে কর্মীরা গণগ্রেপ্তারি দেবেন এবং জেল ভরো আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।
এদিন রাতে সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ মন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত বিদ্যুৎ কর্মীদের বৈঠক চলছে। বৈঠকে সরকার দমন নীতি প্রত্যাহার না করলে রাতেই গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য কর্মচারীরা প্রস্তুত। যাঁদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁদের কাজে না ফেরালে, এসমা সহ অন্য সব দমনমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার না করলে ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালীন নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনরত কর্মচারীরা। বিভিন্ন জেলায় রাত পর্যন্ত ধর্মঘটী কর্মচারীরা বসে রয়েছেন। উল্লেখ্য, ২৩ বছর পরে উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎ কর্মচারীরা রাজ্যজুড়ে ধর্মঘট করলেন। ২০টি সংগঠন ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে।
উত্তর প্রদেশে বিদ্যুৎ কর্মচারীদের ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে পড়েছে শনিবার। অওরৈয়াতে জেলাশাসক বিদ্যুৎ সাব-সেন্টারে গিয়ে বিদ্যুৎ কর্মীদের মাটিতে পুঁতে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। মহোবার জেলাশাসক ১২ জন চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ কর্মচারীকে ছাঁটাই করে দিয়ে তার জায়গায় ৪০ জনকে নিয়োগ করেছেন। এলাহাবাদ, কানপুর দেহাত, সিদ্ধার্থনগর, জালৌন, আজমগড়, কুশীনগর, রামপুর, মও, বাহারআইচ, বস্তি, অযোধ্যা, গোরক্ষপুর- সর্বত্র ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। সর্বত্রই প্রশাসন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ করেছে। শনিবার রাতে এইধরনের পদক্ষেপ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎ কর্মীরা বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। গত ডিসেম্বর মাসে সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কর্মী সংগঠনগুলির একটি চুক্তি হয়। অথচ এখন বিদ্যুৎ বণ্টন কর্পোরেশন তা মানতে রাজি নয়। বিদ্যুৎ কর্মীরা এক মাস আগেই ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের নোটিস দিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা শেষ হবে রবিবার রাত দশটায়। লক্ষাধিক কর্মচারী ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে রাজ্যজুড়ে। অথচ সরকার কর্মচারীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসেনি। পরিবর্তে শুক্রবারই যোগীর মন্ত্রী হুমকি দিয়েছিলেন। কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার পরিবর্তে দমনপীড়নের পথেই যেতে চায় বিজেপি সরকার তাও স্পষ্ট হয়ে যায়। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ বৈঠক করেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী এ কে শর্মার সঙ্গে। কয়েক জন শীর্ষ আধিকারিক সেই বৈঠকে ছিলেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে আদিত্যনাথ নির্দেশ দেন, আন্দোলনরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য।
এরপরেই বিদ্যুৎ মন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩২ চুক্তি শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। দরকার পড়লে হাজার হাজার কর্মচারীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে। মন্ত্রী অভিযোগ করেন কর্মচারীরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করেছে। সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করলে কারোকে ছাড়া হবে না। আন্দোলনের নেতা এমন ২২ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে এসমার আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাদের জেলে পাঠানো হবে বলেও মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিদ্যুৎ কর্মচারী আন্দোলনের নেতা শৈলেন্দ্র দুবে সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সোমবার তাঁদের তলব করেছে। লক্ষ্ণৌ সহ বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসে পিএসি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্ত্রীর অভিযোগের পাল্টা বিদ্যুৎ কর্মীরা বলেছেন, ইতিহাসে প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটছে যে মন্ত্রীর সঙ্গে হওয়া সমঝোতা বিদ্যুৎ বিভাগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানতে অস্বীকার করছেন। বিদ্যুৎ কর্মচারী সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির আহ্বায়ক শৈলেন্দ্র দুবে বলেছেন, বিদ্যুৎ কর্মচারীরা কোথাও হিংসা, ভাঙচুর করেনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের মায়ের মতো। মন্ত্রী কোনও অনুসন্ধান না করেই এইসব অভিযোগ করে দিচ্ছেন। শৈলেন্দ্র দুবে বলেছেন, একটার পর একটা ইউনিট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আউটসোর্সিং কর্মচারী যারা অত্যন্ত গরিব, সরকার তাঁদের বরখাস্ত করেছে। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কর্মচারীরা কাজ করেন বিদ্যুৎ বিভাগে। আন্দোলনকারী বিদ্যুৎ কর্মীদের সংযুক্ত মোর্চার তরফ থেকে জানানো হয়েছে আমরা কোথাও পালাচ্ছি না। সরকার আমাদের গ্রেপ্তার করুক।
এদিকে জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বিজেপি মানুষকে খেপিয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরে কর্মীদের উপরে হামলা করার উসকানি দিচ্ছে। লক্ষ্ণৌয়ে শুক্রবার রাতেই হামলার চেষ্টা হয়। এলাহাবাদ, সিদ্ধার্থনগর প্রভৃতি জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ‘জনতা’। সিআইটিইউ উত্তর প্রদেশ রাজ্য সম্পাদক প্রেমনাথ রাই অভিযোগ করেছেন, সরকারের লোকেরাই বিদ্যুৎ দপ্তরে হামলা চালিয়ে কর্মীদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছে। মানুষের মধ্যে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে আন্দোলনরত বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে মানুষকে নামাতে চাইছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের ফলে মানুষকে বিপুল হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে, কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন করছে। উত্তর প্রদেশে বিদ্যুৎ কর্মচারীদের আন্দোলনে বিজেপি সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে সংহতি আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে সিআইটিইউ।
Comments :0