ED Raid

তালা ভেঙে শান্তনুর বাড়ি, রিসর্টে হানা

রাজ্য

ED Raid

নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা ইতিমধ্যে অন্যত্র পাচার করে দিয়েছেন ধৃত হুগলী জেলা পরিষদের তৃণমূলী কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জি। প্রভাবশালী তৃণমূলী নেতাদের একাংশের টাকাও সরানো হয়েছে এই তৃণমূল নেতার মাধ্যমে, দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।
শনিবার সাতসকালে ইডি হানা দেয় শান্তনু ব্যানার্জির একাধিক সম্পত্তিতে। তল্লাশি চালাতে ইডি তদন্তকারী আধিকারিকদের একটি দল শান্তনুর ব্যান্ডেলের বাড়িতে যায়। অপর একটি দল বলাগড়ের চাঁদরায় শান্তনুর রিসর্টে যায়। তালা ভেঙে রিসর্টে ঢোকেন তদন্তকারীরা। ব্যান্ডেল বালির মোড় সংলগ্ন এলাকায় শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জির নামে কয়েক বছর আগে ৩০ লক্ষ টাকায় কেনা হয় দোতলা একটি বাড়ি। শনিবার সকালে ইডি আধিকারিকরা হানা দেন সেই বাড়িতেও।



অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ এই শান্তনু ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হতেই একের পর এক  বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। নামে বেনামে একাধিক বাড়ি, ধাবা, রেস্টুরেন্ট, হোম স্টে, বাগান বাড়ি, ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। রীতিমত যেন অবৈধ সম্পত্তির সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। তাজ্জব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরাও।
বলাগড়ের চাঁদরায় ইডি’র ৬ জনের একটি দল আসে এবং সেখানে এসে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। পাশাপাশি ইডি’র আরও একটি দল চুঁচুড়া জগুদাসপাড়ায় শান্তনু ব্যানার্জির ফ্ল্যাটে। শান্তনুর ফ্ল্যাটের প্রোমোটার অয়ন শীলের বাড়িতেও যান ইডি চাবি খুঁজতে।

বলাগড়ের বাগানবাড়িতে ইডির আধিকারিকরা থাকাকালীন শান্তনুর ছায়াসঙ্গী  আরেক কীর্তিমান তৃণমূলী সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশের বাড়িতেও হানা দেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ইডি’র দু’জন আধিকারিক এসে জানতে চান, আকাশ কোথায়? আকাশের বাবা জানান যে ছেলে বাড়িতে নেই, সে বেরিয়েছে। তাকে ফোন করে ডাকতে বলেন ইডি আধিকারিকরা। জিরাট কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন জিএস আকাশ এখন জিরাট কলেজের ক্যাজুয়াল স্টাফ হিসাবে কাজ করে। শান্তনু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই আকাশ। এককথায় শান্তনুর ছায়াসঙ্গী হিসেবে থাকতো এই আকাশ। এদিন আকাশ বাড়ির কাছে আসতেই তাকে ইডি আধিকারিকরা গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা শান্তনুর রিসর্টে চলে আসেন এবং সেখানে সম্পূর্ণ জায়গাটি ঘুরে দেখেন তাঁরা।


পরে গেস্ট হাউসে আকাশ ঘোষ, নিলয় মালিক, বিশ্বরূপ প্রামাণিক— এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। আকাশকে জেরা করে গেস্ট হাউসের সিসি টিভির হার্ড ডিস্ক একটি বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। রিসর্ট থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বে বাড়ি পূর্ণচন্দ্র ঘোষ। সিসি টিভি ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন এই পূর্ণচন্দ্র ঘোষ। আকাশকে নিয়ে ইডির আধিকারিকরা পূর্ণচন্দ্র’র বাডড়ি থেকে গিয়ে সিসি টিভির হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এবং সেখানে নিলয় মালিক, আকাশ ঘোষ ও বিশ্বরূপ প্রামাণিক, তাদের তিনজনকে গেস্ট হাউসে বসিয়ে চলে তল্লাশি।


শ্রীপুর বলাগড় পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বিশ্বরূপ প্রামাণিক। বর্তমানে বলাগড় থানার সিভিক ভলেন্টিয়ারের কর্মরত  নিলয় মালিক। যদিও এক মাস ধরে কাজে যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এদের তিনজনকেই মুখোমুখি বসিয়ে চলে জেরা। নিলয়কে প্রথমে ছেড়ে দিলেও বাকি দুজনকে আটক করে রাখেন ইডি আধিকারিকরা। যদিও নিলয় মালিককে পরে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গেস্ট হাউসে আনা হয়।
গত ১০ মার্চ শান্তনু ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জিকে দেখতে পাওয়া যায়নি। এদিন বলাগড়ে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, সবটাই বিচার পক্রিয়ার মধ্যে আছে। এতগুলো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তির আমি কিছু জানতাম না। তদন্তের জন্য আমাকে ডাকা হলে আমি নিশ্চিত সাহায্য করবো।


তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী এই প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জির হোম স্টে’কে রাজ্যের পর্যটন দপ্তর গত বছরই আবার ‘গোল্ড ক্যাটাগরি’র বিশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছিল! তৃণমূলের এক শীর্ষ সাংসদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্যই শান্তনুর স্ত্রীর হোম স্টে’কে পুরস্কৃত করেছিল রাজ্য সরকার, দাবি ইডি’র।
 

Comments :0

Login to leave a comment