সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন এবং জাপ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চীনের বিজয়ে ৮০তম বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে চীনে বেশ কিছু দেশের, বিশেষ করে ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের জড়ো হওয়া বিশ্ব শক্তির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে নতুন এক পূর্বাভাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর সেটা আন্দাজ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার সহযোগীরা এখনই আতঙ্কিত না হলেও কিঞ্চিৎ চিন্তিত। মূলত এশিয়ার রাজনীতি ও নিরাপত্তাকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা এসসিও’র এবারের শীর্ষ সম্মেলন অতীতের যে কোনও সম্মেলনের থেকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারি হয়ে উঠেছে। সাড়ে তিন বছর ধরে চলতে থাকা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় দু’বছর ধরে মার্কিন মদতে ইজরায়েলের গণহত্যা, মাঝে একযোগে ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েল ও আমেরিকার সামরিক হামলা, পাক-ভারত সামরিক সংঘাত এবং সর্বোপরি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জেরে বিশ্ব বাণিজ্যের চালু বিন্যাস ভেঙে চুরমার হয়ে যাবার সময়কালে পশ্চিমী দুনিয়ার কুনজরে থাকা দেশগুলির নেতারা এক জায়গায় মিলিত হওয়া এবং ভারতের মতো মার্কিন ঘনিষ্ঠ কিছু দেশের নেতাদের তাতে যোগ দেওয়া নিঃসন্দেহে আমেরিার দুশ্চিন্তার কারণ।
এসসিও’র ঘোষণাপত্রে উচ্চারিত হয়নি ইউক্রেন যুদ্ধের কথা। কিন্তু গাজায় গণহত্যা বন্ধের কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনের মদতদাতা ও ইজরায়েলের মদতদাতা আমেরিকাকে স্পষ্ট বার্তা। আগামী বিশ্বে চীন-ভারত-রাশিয়ার মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ে তাহলে বর্তমান বিশ্বের ছবিটা নিশ্চিতভাবে বদলে যেতে পারে। চীন-রাশিয়া-ভারত-উত্তর কোরিয়া চারটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। এসসিও’র সঙ্গে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলিকে যোগ করলে মার্কিন বলয়ের বিপরীতে নতুন এক বৃহৎ শক্তি উঁকি মারছে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা এবং অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি এই অংশে। তেমনি সমর শক্তিও প্রায় অর্ধেক রয়েছে এই দিকে। তাই সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার নেতৃত্বে এক মেরু বিশ্বের বিকল্প হতে পারে এই বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করছে ইউক্রেনকে সামনে রেখে রাশিয়াকে কোণঠাসা করা ইউরোপ, আমেরিকার পক্ষে সহজ হবে না। তেমনি গাজায় ইজরায়েলী বর্বরতা ও গণহত্যাকে নিঃশর্ত সমর্থন ও সাহায্য করাও আমেরিকার পক্ষে বেশিদিন সম্ভব হবে না। ইজরায়েলকে দেওয়ালের লিখন পড়ে সংযত হতেই হবে। এই বর্বরতা ইজরায়েলের সমর্থক দেশগুলিও আর মেনে নিতে পারছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ন্যাটো সদস্য দেশও দীর্ঘ নীরবতা কাটিয়ে স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃত দিতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে স্পেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও বেলজিয়াম প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন দেশ হিসাবে গ্রহণ করে। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৮ দেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিরোধিতা করছে মার্কিন প্রসাদজীবী ক্ষুদ্র কিছু দেশ। স্বাভাবিকভাবেই ইজরায়েলের দাপট বেশিদিন থাকবে না। অন্তত আমেরিকার সরাসরি মদত কিছুটা হলেও কমবে। বিকল্প বিশ্বের নেতারা যতবেশি ঐক্যবদ্ধ হবেন, সাধারণ স্বার্থে যত বেশি সহযোগিতা বাড়বে প্যালেস্তাইনের মানুষের স্বপ্নপূরণ তত ত্বরান্বিত হবে। এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Changing World
বিশ্ব বদলাচ্ছে

×
Comments :0