JP NADDA RALLY

স্ববিরোধিতার মোড়কে নাড্ডার জনসভা

রাজ্য জেলা

BJP CPIM TMC JP NADDA বেথুয়াডহরিতে নাড্ডার সভা

নদীয়ার বেথুয়াডহরির জুনিয়র ইস্টবেঙ্গল মাঠের সভায় বৃহস্পতিবার বক্তব্য রাখেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডা। তাঁর বক্তব্যের মূল নির্যাস, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তৃণমূলের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে লুঠের রাজত্ব চলছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে লাগামছাড়া দুর্নীতি চালিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি। একইসঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সরকারকে সংবিধান মেনে চলার ‘সুপরামর্শ’ও দিতে শোনা যায় নাড্ডাকে। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষ এতদিন কংগ্রেস, বামপন্থীদের এবং তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছেন। এবার তাঁরা ‘কমল কি ফুল’কে সরকার চালানোর সুযোগ দিতে চায়। 

বিরোধী নেতা থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী একবার জনসভায় বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘‘হিপোক্রিসি কী ভি সীমা হোতি হ্যা!’’, যা বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়- স্ববিরোধীতারও একটা সীমা রয়েছে। এদিন বেথুয়াডহরির অর্ধেক ফাঁকা মাঠে দাঁড়িয়ে জেপি নাড্ডার ভাষণ শুনলে এই কথাই সর্বপ্রথম মাথায় আসা স্বাভাবিক। 

এদিন নাড্ডার বক্তব্যে বারবার সংবিধান মেনে চলার কথা এসেছে। অথচ ২০২২ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরই দলের নেতা, তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২৫ নভেম্বর গুজরাটের খেদা জেলার মাহুধার জনসভায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় গণহত্যার চালানোর সপক্ষে সাওয়াল করেছিলেন। ভালসাডের সভায় দাঁড়িয়ে বলিউড শিল্পী তথা বিজেপির ঘোষিত সমর্থক পরেশ রাওয়াল বাঙালীদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন। এই সমস্ত বক্তব্য কখনও সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করেছে, আবার কখনও সংবিধানের ‘ডিরেক্টিভ প্রিন্সিপল্স’ বা নির্দেশমূলক নীতিকে । সংবিধানকে পায়ের তলায় থেঁতলে নির্বাচনে জনমত গড়ায় মনযোগ দিয়েছেন অমিত শাহ সহ বিজেপির একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ঘটনাচক্রে যাঁরা সংবিধানে হাত রেখেই সংসদে শপথ নিয়েছিলেন। 

দ্বিতীয়ত নাড্ডার বক্তব্যে ঘুরে ফিরে এসেছে পঞ্চায়েতকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে লুঠ চালানোর অভিযোগ। বাংলার রাজনীতি নিয়ে চর্চা করা মহলের দাবি, ২০১৩ সালে প্রথমবার রাজ্যের সিংহভাগ জেলা পরিষদের ‘দখল’ পায় তৃণমূল। তারপর থেকেই শুরু হয় এই ‘লুঠের’ রাজত্ব। ২০১৪ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে রয়েছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক এবং জেলা স্তরে বারবার বামপন্থীদের তরফে এই সংক্রান্ত অভিযোগ আনা হয়েছে। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকারের টনক নড়েনি। বরং নিশ্চুপ থেকে তৃণমূলকে লুঠ চালিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে বিজেপি। 

এই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম মঙ্গলবার অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘২৭টা কেন্দ্রীয় দপ্তর পঞ্চায়েত সম্পর্কিত। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতগুলিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং বরাদ্দের দুর্নীতি নিয়ে চাইলেই বহুদিন আগে তদন্ত করা যেত। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নিয়ে বহুবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বিজেপি তখন মনে করেছিল, এখন তৃণমূলকে ঘাঁটানোর প্রয়োজন নেই। তাই কোনও তদন্ত হয়নি। এখন নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য এত সোরগোল করছে। তৃণমূলের চোরেদের না ধরে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে দিয়েছে। তারফলে গরীব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্রামে কাজ নেই। এরাজ্যের যৌবন বাধ্য হচ্ছে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment