KMC TEA ALLOWANCE

লকডাউনেও ২৬ হাজার টাকার চা খাইয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসার

রাজ্য কলকাতা

KMC TEA ALLOWANCE BENGALI NEWS

বাজেট অধিবেশনের দিনেও ন্যূনতম মজুরি এবং বকেয়া বেতনের দাবি কলকাতা কর্পোরেশন অভিযান করতে বাধ্য হয়েছেন অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক, ঠিকা এবং ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকরা। টাকার অভাবের দোহাই দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি সহ অবসর পরবর্তী পেশ কিছু সুবিধা রদ করেছে কর্পোরেশন। এরই মাঝে সামনে এল কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসার পদমর্যাদার এক আধিকারিকের কীর্তি। তিনি লকডাউনের সময়েও ২৬ হাজার টাকার চা খাইয়ে অতিথি আপ্যায়ন করেছেন!

কোভিড এবং লকডাউনের সময় দীর্ঘদিন কলকাতা কর্পোরেশন বন্ধ ছিল। সাধারণ মানুষ দূরের কথা, আধিকারিক এবং মেয়রও দিনের পর দিন আসতে পারেন নি কর্পোরেশনে। কিন্তু সেই অবস্থাতেও অতিথি আপ্যায়নে ২৬ হাজার টাকা খরচ করেছেন কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসার মহম্মদ সেলিম আনসারি।

ঘটনার প্রেক্ষিতে  কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, এটা দিনের আলোয় জোচ্চুরি। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে তৃণমূল। সেই কীর্তিগুলি এখন প্রকাশ পাচ্ছে। 

সরকারি নথি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৫ সালের ২ জুলাই। মিউনিসিপ্যাল কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে মহম্মদ সেলিম আনসারির দপ্তর থেকে বলা হয়, অতিথি আপদ্যায়নের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ৪ হাজার টাকা খুবই কম পড়ছে, কারণ প্রতিদিন বহু সংখ্যক মানুষ তাঁর দপ্তরে আসছেন। তাঁর ভালো ভাবে চা খাওয়াতে বরাদ্দের পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হোক। এবং সেই দাবি মেনেও নেওয়া হয় কর্পোরেশনের তরফে। 

সেই শুরু। 

এরপর হুবহু একই বয়ানে মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের কাছে চিঠি যায় ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। সেখানে ‘আবদার’ করা হয়, ৬ হাজার টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করা হোক, কারণ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসারের অফিসে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে।

এই ঘটনা চলতেই থাকে। ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট অতিথি আপ্যায়নের মাসিক বরাদ্দ বেড়ে হয় ১০ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের ২৬ মে সেটা দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকায়। এবং ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সেই বরাদ্দ বেড়ে হয় ১৫ হাজার টাকা।

এরপর থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধির অঙ্কও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এতদিন প্রতি বছর বরাদ্দ বাড়ছিল ২-৩ হাজার টাকা করে। কিন্তু এবার সেটা বাড়তে থাকে ৫-১০ হাজার টাকার হিসেবে। 

যেমন ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মিউনিসিপ্যাল কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে ৫ হাজার টাকা মাসিক বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি করা হয়। সেই দাবি মেনেও নেওয়া হয়, এবং অতিথি আপ্যায়নের ‘ফি’ গিয়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকায়। ২৮/০৫/২০২০-তে সেটা বেড়ে হয় ২৬ হাজার টাকা। 

এবং এখানেই গোল বেঁধেছে। ২০২০ সালের মার্চের শেষ থেকে সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও কোভিড ঠেকাতে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠতে শুরু করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের মে মাসে, যখন কলকাতা কর্পোরেশন কার্যত জনশুন্য, তখন কাকে চা খাওয়ানোর জন্য ২৬ হাজার টাকার প্রয়োজন পড়ল মিউনিসিপ্যাল ল অফিসারের? 

কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিক এবং কর্মচারীরা সাধারণত কর্পোরেশনের ভিতরে চলা বেশ কয়েকটি অস্থায়ী চায়ের দোকান থেকেই চা কিনে খান। সেই দোকান গুলিতে এক কাপ চায়ের দাম গড়ে ৫-৬ টাকা। অর্থাৎ মাসে ২৬ হাজার টাকায় গড়ে ৪৩০০ থেকে ৫২০০ জন সাক্ষাৎপ্রার্থীর জন্য চা কিনেছেন চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসারকে। কোভিড পরিস্থিতিকে মাথায় রাখলে এই পরিমাণ সাক্ষাৎপ্রার্থী জড়ো হওয়া কার্যত অসম্ভব।

যদিও আতিথেয়তা ভাতা বৃদ্ধি এখানেই থেমে থাকেনি। ৭/১২/২০২১ সালে সেই ভাতা বেড়ে হয় ৩০ হাজার টাকা, এবং চলতি বছরের জানুয়ারির ৬ তারিখ সেই ভাতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার টাকায়। 

চায়ের কাপের হিসেব ধরলে মাসে গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার সাক্ষাৎপ্রার্থীর আনাগোনা লেগে রয়েছে চিফ মিউনিসিপ্যাল ল’অফিসারের চেম্বারে। কর্পোরেশনের আধিকারিকরা ঠাট্টার ছলে বলছেন, প্রতি মাসে মেয়রের সঙ্গে দেখা করতেও বোধহয় এতলোক আসেন না কর্পোরেশনে!

যাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ, সেই মহম্মদ সেলিম আনসারির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা যায়নি। 

Comments :0

Login to leave a comment