DUAREY SARKAR

পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঋণ দিতে নতুন টোপ

রাজ্য জেলা

duarey sarkar tmc cpim minakshi mukherjee mamata banerjee bengali news দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। ছবি: প্রতীকী।

নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষতে প্রলেপ দিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির করতে চলেছে রাজ্য সরকার।

পঞ্চায়েত ভোটে কর্মসংস্থানই যে গ্রামের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে তা টের পেয়েছে নবান্ন। আর সেখানেই আতঙ্ক তাড়া করছে রাজ্য প্রশাসনকে। কারণ, মেধার ভিত্তি থেকে জব কার্ড- দুর্নীতি থেকে ছাড় মিলছে না রাজ্যের শাসকদলের। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই বেকারদের ভবিষ্যত নিয়ে এক দশক ধরে ছিনিমিনি খেলে এখন ‘ভবিষ্যত’ প্রকল্প এনে দুয়ারে সরকার শিবিরে ভিড় টানতে চাইছে নবান্ন। 


আগামী ১ এপ্রিল থেকে ফের রাজ্যে শুরু হচ্ছে দুয়ারে সরকার শিবির। টানা ১০ দিন ধরে রাজ্যজুড়ে শিবির করে নেওয়া হবে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের আবেদন। বৃহস্পতিবারই ষষ্ঠ দুয়ারে সরকার শিবিরের নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সরকারি নির্দেশিকাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে শিবির। বিভিন্ন প্রকল্পের আবেদন যাচাই করে ১১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। 

গত নভেম্বর মাসে রাজ্য সরকার পঞ্চমবারের দুয়ার সরকার শিবির করেছিল। কিন্তু সেই শিবিরে নতুন কোনো প্রকল্প না থাকায় কোনো সাড়া ছিল না মানুষের মধ্যে। ফলে নভেম্বর মাস থেকে বাড়িয়ে ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সরকারি শিবিরকে। তিন মাসের মধ্যেই ফের দুয়ারে সরকার শিবির করে যুক্ত করা হয়েছে ‘ভবিষ্যত’ নাম দিয়ে নতুন একটি প্রকল্প। 


রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ৫ বছরে রাজ্যের ২লক্ষ বেকার যুবক, যুবতীদের ব্যবসার জন্য ৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণদানের ব্যবস্থা করবে। ঋণ সরকার দেবে না, ব্যাঙ্ক দেবে। ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণের জন্য গ্যারান্টার থাকবে রাজ্য সরকার। এমনকি ব্যবসা শুরুর জন্য পুঁজি হিসাবে ২৫ হাজার টাকা বহন করবে রাজ্য সরকার। 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) দপ্তরের আওতায় এই নতুন প্রকল্পেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভবিষ্যত’। এপ্রিল মাসের শুরু হওয়া দুয়ারে সরকার শিবিরে যুক্ত করা হয়েছে ‘ভবিষ্যত’ প্রকল্পকে। ওই শিবির থেকেই শুরু হবে বেকার যুবক, যুবতীদের ঋণদানের নথিভুক্তিকরণ। 

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে কর্মসংস্থান এক সঙ্কটজনক জায়গায় আছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামের বেকার যুবকদের ক্ষোভ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার জন্যই দুয়ারে সরকার শিবিরে ভবিষ্যত প্রকল্পকে যুক্ত করা হয়েছে।’’ 

বেকারদের ঋণ দিয়ে ব্যবসার এই প্রকল্প সম্পর্কে এদিন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘সরকার তো কত কিছু করছে। সামিট করছে। বিদেশ যাচ্ছে। আদানির সঙ্গে দেখা করছে। মোদীর সঙ্গে মিটিং করছে। প্রচুর করছে। সরকার তাহলে বিনিয়োগ আনতে পারছে না কেন? সরকার শিল্পপতিদের সবরকম সুযোগ দেওয়ার পরও এখানে কর্মসংস্থান আনতে পারছে না। তাহলে একটা বেকার ছেলেকে পাঁচ লাখ দিয়ে কী করবে? তাছাড়া সরকার বললেই ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে নাকি? সরকার কাজ দেবে না, ঋণ দিয়ে মহাজনী কারবার চালাবে?’’ 


গত বিধানসভা ভোটের পরপরই রাজ্য সরকার পড়ুয়াদের জন্য স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প এনেছিল। ১০লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণদানের জন্য যুক্ত করা হয়েছিল ব্যাঙ্ককে। এখানেও ঋণের জন্য গ্যারান্টার আছে রাজ্য সরকারই। কিন্তু বহু আবেদন পড়ে আছে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের। স্টেট লেবেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভাতেও রাজ্য সরকার বহু আবেদন করেও ব্যাঙ্ককে নড়ানো যায়নি। এখন ভবিষ্যত প্রকল্পে রাজ্য সরকার গ্যারান্টার হলেও ব্যাঙ্ক কতটা শেষ পর্যন্ত আগ্রহী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকরাই। 

এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান,‘‘ ৫লক্ষ টাকার বিষয়টি এখনও আমাদের নজরে আসেনি। কিন্তু শুধু রাজ্য সরকার গ্যারান্টার হলেই চলবে না। যাঁকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হবে তার সবটা দেখেই ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে।’’ 


রাজ্যজুড়ে এখন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় অবস্থা। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে এখন আদালতের রায়ে চাকরি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। সামনে আসছে শাসকদলের নেতাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে কীভাবে এরাজ্যে স্কুল শিক্ষকতার চাকরি বিক্রি হয়েছে। ওএমআর শিটের তথ্যে সামনে এসেছে শূন্য নম্বরকে বাড়িয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আদালতে রায়ে চাকরি চলে যাওয়ার কারণে উদ্বেগ ধরা পড়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। 

দু’দিন আগেই কলকাতার আলিপুরে এক সরকারি অনুষ্ঠানে বিচারপতিদের রায়কে কটাক্ষ করে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করার পাশপাশি মমতা ব্যানার্জিকে  ‘‘ছেলেমেয়েগুলোর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তাদের চাকরিটা ফিরিয়ে দিন, আইন অনুযায়ী ফিরিয়ে দিন’’ বলতে শোনা গেছে। 

এই আবহে পঞ্চায়েত ভোট করতে যাওয়ার মতো রসদ রাজ্যের ভাঁড়ারে নেই বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। 

এমনিতেই আবাস যোজনার চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেও টাকা আসেনি গ্রামে। এক বছর ধরে বন্ধ থাকার পরও আগামী আর্থিক বছরেও রেগার কাজ চালু হওয়া নিয়েও থেকে গেছে অনিশ্চয়তা। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুয়ারে সরকার শিবির করে কিছুটা হলেও দুর্নীতির ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে মুখরক্ষার চেষ্টা নবান্নের।


 

Comments :0

Login to leave a comment