অরিজিৎ মণ্ডল
মন্ত্রীর গাড়ি ছাত্রদের পিষে দেওয়ার চেষ্টা করল। মন্ত্রীকে ধরা হলো না কেন। চালক এবং সওয়ারদের গ্রেপ্তার করা হলো না কেন। গ্রেপ্তার করতে হবে শিক্ষামন্ত্রীকে। হত্যার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করতে হবে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
রবিবার যাদবপুর থানার সামনে সংক্ষিপ্ত সভায় এই দাবি তুললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এসএফআই’র ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। যাদবপুরে তাণ্ডবের প্রতিবাদে সোমবার এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।
সোমবার শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এদিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন যে ‘পরীক্ষায় কেউ ব্যাঘাত ঘটালেই অ্যাকশন নেবে পুলিশ’। সেলিম কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘জানেন না যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারেই পড়ে না। ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মন্ত্রীর গাড়ি না ধরে ছাত্রদের ভয় দেখাচ্ছেন।’’
উল্লেখ্য, এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-ও স্পষ্ট জানিয়েছেন যে ধর্মঘট হবে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চমাধ্যমিকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই নেই। বরং পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করবে এসএফআই।
রবিবার সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিলে সেলিমের সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। তাঁরাও স্পষ্ট করে বলেছেন, হুমকির কাছে মাথা নত করা হবে না। সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘট সফল করতে হবে। অসভ্যদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে চলার কোনও বিকল্প নেই।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘উলটে ছাত্রদের নামে মামলা করেছে পুলিশ। তা-ও আবার হার ছিনতাইয়ের মামলা। ছাত্রদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে যাদবপুর থানা। যে ইন্দ্রানুজ হাসপাতালে ভর্তি তাঁর বক্তব্য নিলেন না। মামলা করে দিলেন। হার ছিনতাইয়ের মামলা। থানাগুলি তৃণমূলের সঙ্গে থাকতে থাকতে চুরি-ছিনতাই ছাড়া আর কিছু জানে না। কাল আদালতে দেখা হবে। আলিপুর থেকে হাইকোর্ট, আমরা যাব।’’
সেলিম বলেন, ‘‘পুলিশকে বলব আইন মেনে চলুন। দুর্ঘটনাও যদি বলা হয় তা’হলেও আইন অনুযায়ী মামলা করতে হয়। আর এখানে পিষে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। পুলিশের মামলা আমরা দেখতে চাই। গাড়িতে যারা সওয়ার ছিল তাদের গ্রেপ্তারি চাই। শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হত্যার অভিসন্ধি নিয়ে মামলা দায়ের করতে হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘যাদবপুরে আর জি করের থ্রেট কালচারের ছায়া দেখছি। থ্রেট করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হুমকি দিচ্ছেন। আমরা ক্যাম্পাসের বিষয় বাইরে আনিনি। বাইরে এনেছেন তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদরা। এখানে কাল মিছিল করেছেন, হামলা করার হুমকি দিয়েছেন। একজন ছাত্রের ওপরও হামলা হলে গোটা বাংলায় আগুন জ্বলবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য, ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য, পঠন-পাঠানের জন্য লড়াই করে। তার জন্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদ দরকার হয়। গোটা দেশে মোদী আর এখানে মমতা সরকার নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে। একটা স্কুল, মাদ্রাসা, সমবায় কোথাও গণতান্ত্রিক নির্বাচন হতে দেয় না।
মমতা ভুতুড়ে ভোটারের কথা বলছেন। অত দরকার নেই, সাহস থাকলে নির্বাচিত ছাত্র সংসদের দাবি মেনে নিন।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি নেতা তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছিল। যাদবপুর থানা কোনও মামলা দায়ের করেনি। মমতা ব্যানার্জি তাঁকে তৃণমূলে এনে মন্ত্রী করলেন। এই বিজেপি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে টুঁটি টিপে মারছে। যাদবপুরেও হচ্ছে।’’
বামফ্রন্টের দাবি, ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমস্যা মেটাতে হবে। গাড়ির চাকার নিচে ছাত্রদের পিষে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে দাবি দমন করা যাবে না।
এদিন মিছিলে অংশ নেন আরএসপি নেতা দেবাশিস মুখার্জি, অশোক ঘোষও। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদারও।
Comments :0