সরকারের কোনও আর্থিক নীতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে তাপপ্রবাহ ও অপ্রতুল বৃষ্টিপাত দেশে মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী বলে সোমবার সংসদে দাবি করলেন কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। বলা যেতে পারে, সরকারের আর্থিক নীতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে মন্ত্রী এদিন মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির দায় চাপিয়ে দিয়েছেন একগুচ্ছ বাহ্যিক কারণের উপর। এদিন তিনি মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকারের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের প্রশ্নের জবাবে। ভারতের খুচরো মুদ্রাস্ফীতি যে বেড়েই চলেছে এবং তার পরিণতিতে সাধারণ মানুষ যে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন, সরকার তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন সাংসদ। এই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন ছিল, সরকারের মতে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধির কারণ কী এবং তা কমানোর জন্য সরকার ব্যবস্থাই বা কী নিচ্ছে।
মন্ত্রী এদিন তাঁর জবাবে বলেছেন, আন্তর্জাতিক স্তরে পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়ার পাশাপাশি মহামারীর প্রভাবে চাহিদা-জোগানে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। তার পরিণতিতে ভারত সহ সারা বিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে। তার উপর অশোধিত জ্বালানি তেল, গ্যাস, ধাতু ও সূর্যমুখী তেলের মতো ভোজ্য তেলে মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপ বাড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাপপ্রবাহ এবং বর্ষাকালের দ্বিতীয়ার্ধে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, যার জেরে একদিকে ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং আরেকদিকে তরিতরকারির দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের তরফে গৃহীত ব্যবস্থার প্রসঙ্গে মন্ত্রী দাবি করেছেন, প্রধান প্রধান অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামের গতিবিধির উপরে সরকার নিয়মিত নজরদারি চালায়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও সময়ে সময়ে নেওয়া হয়। গরিব মানুষকে যাতে আর্থিক বোঝা বহন করতে না হয়, তার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যেমন, গত মে মাসে প্রতি লিটারে উৎপাদন শুল্ক কমানো হয়েছে পেট্রোলে ৮ টাকা ও ডিজেলে ৬ টাকা, বন্ধ করা হয়েছে গমের রপ্তানি, চালে রপ্তানি শুল্ক বসানো হয়েছে, ডালে আমদানি শুল্ক ও সেস কমানো হয়েছে, ভোজ্য তেল ও তৈলবীজে শুল্কের হার পুনর্বিন্যস্ত করা হয়েছে, পেঁয়াজের মজুত ভাণ্ডাতরের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সয়াবিনকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে আইনের ধারায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক গণবণ্টন ব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা এবং এক দেশ এক রেশন কার্ডের কথাও উল্লেখ করেছেন দরিদ্র তথা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মোদী সরকারের উপকারমুখী পদক্ষেপ হিসাবে।
এদিনই সাংসদ জয়দেব গাল্লার মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত পৃথক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী স্বীকার করেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনটি ত্রৈমাসিকেই দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার থেকেছে ৬ শতাংশের উপরে। ওই ৬ শতাংশই মুদ্রাস্ফীতির হারের ঊর্ধ্ব সহনসীমা। প্রসঙ্গত, মুদ্রাস্ফীতির হারের এই ঊর্ধ্ব সহনসীমা সরকারই নির্ধারণ করেছে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে (অরবিআই) মুদ্রাস্ফীতির হারকে তার মধ্যে ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রী এও জানিয়েছেন যে, কেন মুদ্রাস্ফীতির হারকে ওই সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়নি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তা ব্যাখ্যা করে রিপোর্ট দিয়েছে সরকারকে। তবে আরবিআই আইন অনুসারে তা প্রকাশ করা যায় না। উল্লেখ্য, সোমবারই কেন্দ্রের ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস জানিয়েছে, ফেলে আসা নভেম্বরে দেশে খুচরো দামে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.৮৮ শতাংশে নেমেছে। শেষ ১১ মাসের মধ্যে এই প্রথম মুদ্রাস্ফীতির হার তথাকথিত ঊর্ধ্ব সহনসীমার মধ্যে এল। তার আগের মাস অর্থাৎ অক্টোবরে ভোগ্যপণ্য মূল্য সূচকভিত্তিক এই হার ছিল ৬.৭৭ শতাংশ।
Comments :0