FIGHT AGAINST HUNGER

কেউ যেন খালি পেটে না ঘুমোয়; কেন্দ্রকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

জাতীয়

Supreme court central government food security nal nutrition ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

‘কেউ যেন খালি পেটে ঘুমোতে না যায় তা নিশ্চিত করাই আমাদের সংস্কৃতি।’ মঙ্গলবার একথা বলল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে, সর্বশেষ দেশবাসীকেও জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের (এনএফএসএ) আওতায় এনে তাঁর হাতে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মোদী সরকারকে নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি এমআর শাহ এবং হিমা কোহলিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের ই-শ্রম পোর্টালে নথীভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের তালিকা জমা দিতেও বলেছে। 


কোভিড মহামারীর জেরে লকডাউনের সময় দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা কি দুরবস্থার মধ্য পড়েছিলেন সেই বিষয়ে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলায় মন্তব্য করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের (এনএফএসএ) আওতায় সর্বশেষ দেশবাসীকে এনে তাঁর হাতে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়াটা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। 


২০১৩ সালে এনএফএস আইন চালু হয়েছিল গোটা দেশে। এই আইন আনুযায়ী গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭৫শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের কাছে ভরতুকিযুক্ত খাদশস্য রেশন মারফত পৌঁছে দেওয়া ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু যে লক্ষ্যমাত্রা রেখে এই আইন চালু হয়েছিল তার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ এই প্রকল্পের আওতা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন।        


এই বিষয়ে সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ, হর্ষ মন্দার এবং জগদীপ চোক্কারের করা এই জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলায় এদিন সওয়াল করতে গিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন ২০১১ সালের জনগণনার পর দেশের জনসংখ্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু এনএফএস আইনে উপভোক্তা সেই হারে বাড়ানোর বন্দোবস্ত হচ্ছে না। 

এই আবস্থায় এনএফএস’র আওতায় উপভোক্তার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। কিন্তু দেশজুড়ে এনএফএস আইন সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় অসংখ্য যোগ্য এবং অতি দরিদ্র মানুষ এর আওতার বাইরে আছেন। এর ফলে তাঁরা রেশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আদালতের কাছে এই সংক্রান্ত নথিও পেশ করেন প্রশান্ত ভূষণ। 


এদিন শুনানির সময় সওয়াল করতে গিয়ে প্রশান্ত ভূষণ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে সম্প্রতি কয়েক বছরে দেশে মাথাপিছু আয় নাকি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতে দ্রুত পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে।


এদিন শুনানির কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি। তিনি এদিন সওয়া করতে গিয়ে বলেন, এই প্রকল্পে দেশের ৮১ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পে উপভোক্তার তালিকায় আছেন। ২০১১ সালের জনগণনায় কোথাও খাদ্য সুরক্ষা আইনে উপভোক্তার তালিকায় নতুন নাম যোগ করার ক্ষেত্রে কোনও রাজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি। 

তাঁর এই বক্তব্যে প্রশ্ন তোলেন আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি বলেন, চোদ্দটি রাজ্য ইতিমধ্যে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে তাদের বরাদ্দ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। 


এর আগে শুনানি চলাকালীন বিচারপতিরা বলেন, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী খাদ্যের অধিকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এই কারণেই ২০১১ সালের জনগণার ভিত্তিতেই এনএফএস আইনকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যাঁরা খুবই দরিদ্র তাঁদেরকে এই আওতায় আনতে বহে। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।  


এর আগে কেন্দ্র এই মামলায় আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল ২০১৩ সালে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (এনএফএসএ) চালু হওয়ার ফলে দেশে মাথাপিছু আয় ৩৩.৪ শতাংশ বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে বিশাল সংখ্যক পরিবার আগের অবস্থায় নেই। তাদের রোজগার অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এখন অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় নেই। এমনকি  একাংশের কাছে এই আইন অনুসারে ভরতুকিতে খাদ্যের প্রয়োজন অনেকটাই কমেছে।


মোদী সরকার আদালতের কাছে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়ে দাবি করলেও বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতিটি নাগরিকের মাথা পিছু প্রতিদনের রোজগার ১৬০ টাকা হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ একটি পরিবারের ৪ জন সদস্য হলে, সেই পরিবারের ন্যূনতম দৈনিক আয় ৬৪০ টাকা, মাসে এই আয় ১৯ হাজার ২০০ টাকা হওয়া উচিৎ। 

অর্থাৎ বছরে একটি পরিবারের ন্যূনতম আয় ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা হওয়া দরকার। অথচ সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী মাত্র ৪.২ শতাংশ পরিবারের প্রতিমাসের রোজগার ২৩ হাজার টাকারও বেশি। ৪৬ শতাংশ পরিবারেরই আয় ১৫ হাজার টাকার কম।  

 

Comments :0

Login to leave a comment