Editorial

শ্রমিক নেতা বললেন নির্মলা শুনলেন, কিন্তু

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রতি বছর বাজেটের আগে অভ্যাসবশত বা রুটিন মাফিক কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নরেন্দ্র মোদীর অর্থ মন্ত্রীরা। এবারও যথারীতি বসেছেন নির্মলা সীতারামন; শ্রমিক প্রতিনিধিদের দেওয়া প্রস্তাব বা সুপারিশ শুনেছেন। কিন্তু শ্রমিক প্রতিনিধিরা জানেন প্রতিবারের মতো এবারও তাঁদের কথা একান দিয়ে শুনে ওকান দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। কোনও প্রস্তাবই গ্রাহ্য হবে না, স্থান পাবে না বাজেট বক্তৃতায়। মোদী সরকার চলবে তার নিজস্ব ঢঙে যেমন এতদিন চলে এসেছে। অতিমাত্রায় কর্পোরেট বান্ধব সরকারের কাছে শ্রমিক কর্মচারীদের সমস্যা, সঙ্কট, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন মূল্যহীন। শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনই বোধ করে না এই সরকার। তাই সংস্কারের নামে দেশে প্রচলিত শিল্প ও শ্রম সংক্রান্ত প্রায় চার ডজন আইনকে বাতিল করে দিয়ে চারটি শ্রমকোড কার্যত জোর করে একতরফাভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে পাশ করিয়ে নিয়েছে। সেই স্বাধীনতার আগে থেকে ধারাবাহিক লড়াই ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে শ্রমিকরা যেসব অধিকার ও সুযোগ সুবিধা অর্জন করেছিলেন সেগুলিই ছিল ঐ আইনগুলির মধ্যে। সেগুলি বাতিল করে যে চার শ্রমকোড তৈরি হয়েছে তাতে শ্রমিকদের অর্জিত সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের বেশিরভাগই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এহেন এক আপাদমস্তক শ্রমিক-কর্মচারী স্বার্থবিরোধী সরকার যে ট্রেড ইউনিয়নের দাবিকে কোনও অবস্থাতেই বাজে‍‌টে জায়গা দেবে না সেটা বলাই বাহুল্য। অতীতের সরকারগুলিও যে শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে পর্যাপ্ত মর্যাদা দিয়েছে ঘটনা তেমন নয়। তবে আগের সরকারগুলি এতটা খুল্লামখুল্লা কর্পোরেট সেবাদাস ছিল না। তাই যত সামান্য হলেও শ্রমিকদের কিছু দাবি বাজেটে জায়গা পেত। প্রতি বছর শ্রম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতো এবং সেখানে গৃহীত প্রস্তাব কিছুটা হলেও সরকার মান্যতা দেবার চেষ্টা করত। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় শ্রম সম্মেলনের আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ সম্মেলনের প্রস্তাব ছিল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৬ হাজার টাকা করার।
এমন এক বাস্তব অবস্থার মধ্যেই শ্রমিক নেতারা অর্থ মন্ত্রীর কাছে ১৮ দফা দাবি পেশ করে এসেছেন বাজেটে সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য। এই দাবিগুলির মধ্যে যেমন আছে সরকারি ক্ষেত্রে শূন্য পদে নিয়োগ, নতুন কাজ সৃষ্টি তেমনি আছে শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক সুরক্ষা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ৯ হাজার টাকা পেনশন ইত্যাদি। আজ ভারতের অর্থনীতি যে সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে তাতে সীমাহীন বেকারি, মানুষের আয় নেই। তাই ক্রয়ক্ষমতা নেই। বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে না। চাহিদা না বাড়ায় নতুন বিনিয়োগ নেই। এক চক্রব্যুহের মধ্যে আটকে আছে অর্থনীতি। শ্রমিকনেতা তাই পরামর্শ দিয়েছেন সরকার আগে শূন্যপদে নিয়োগ করুক। অস্থায়ী, ঠিকা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বদলে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করুক। তাহলে মানুষের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আসবে। রেগায় কাজের দিন ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ দিন করে বরাদ্দ বাড়ানো হোক। বিধিনিষেধ শিথিল করে বেশি বেশি মানুষকে রেগায় কাজের সুযোগ করে দেওয়া হোক। বেসরকারি কর্পোরেট লগ্নির ক্ষেত্রে সরকার সুযোগ সুবিধা দিক তবে শর্ত জুড়ে দিক কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বর্তমান কর্পোরেট দু’হাতে সরকারি সুবিধা নিয়ে বিপুল মুনাফা করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। যে দেশে মানুষের কাজ নেই, রোজগার নেই, ক্রয়ক্ষমতা নেই সে দেশে অর্থনীতি গাড্ডা থেকে কোনোদিনও বেরোতে পারবে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment