ভোট বড় দায়। ভোটে না জিতলে ক্ষমতায় থাকা যায় না। ক্ষমতায় না থাকলে লুটে খাওয়া যায় না। অতএব ভোটে জিততে হলে শুধু সন্ত্রাস করে হবে না। পাশাপাশি দু’হাতে টাকা বিলোতে হবে। নগদ টাকায় ডোল বিতরণ করতে হবে। এই প্রকল্প সেই প্রকল্প, এই উৎসব সেই হুল্লোড়, এই পুরস্কার সেই সম্মান ইত্যাদির মাধ্যমে ভোট কেনার আয়োজন করতে হবে। কিন্তু এভাবে হরিলুটের মতো টাকা ছড়াতে গেলে টাকার জোগান আসবে কোথা থেকে? রাজ্যের যা রাজস্ব আয় তাতে এই বিপুল অঙ্কের খরচ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অন্যান্য খাতের খরচ যথাসম্ভব ছাঁটাই করা হচ্ছে। উন্নয়ন খাতে খরচ তলানিতে পৌঁছে গেছে। মূলধনী খাতে ব্যয় অর্থাৎ যে ব্যয় পুনরুৎপাদনের সহায়ক হয়, নতুন আয়ের রাস্তা খুলে দেয়, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে, সেই ধরনের ব্যয় কার্যত বন্ধ। ফলে এরাজ্যে উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তার কিছুই হচ্ছে না। উন্নয়ন না হলে, স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলে, উন্নত পরিকাঠামো তৈরি না হলে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয় না। সেজন্য এরাজ্যে বিনিয়োগের কোনও সুখবর মেলে না। কোনও শিল্প তৈরি হয় না। ফলত কোনও কর্মসংস্থানও তৈরি হয় না। যা কিছু হয় সেটা মূলত চপ ভাজা, চা বানানো, ঘুগনি বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এরাজ্যে গণবেকারির পরিস্থিতি স্থায়ী রূপ পেতে চলেছে। বেশিরভাগ মানুষের সেই অর্থে কোনও আয় নেই। তার মানে এই নয় সবাই ঘরে বসে থাকেন। পেটের দায়ে বাঁচার তাগিদে সকলেই যা হোক কিছু করেন। তার থেকে যা আয় হয় তাতে সংসার চলে না। কোনোরকমে শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করেন।
কাজের এই হাহাকারের মরুভূমি দুর্নীতির উর্বর ক্ষেত্র। পরিবারের সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও একটা চাকরির জন্য হামলে পড়ে কিছু মানুষ। চাহিদা সীমাহীন কিন্তু চাকরির জোগান নেই। সরকারি ক্ষেত্রে স্থায়ী বিধিবদ্ধ চাকরি কার্যত তুলে দিয়ে অতি নিম্ন মজুরির ঠিকা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দিনমজুরের আয়েরও কম মজুরিতে পুলিশের (সিভিক) কাজ করছে মানুষ। এরাজ্যে এখন দু’হাজার টাকা মজুরির উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকও মেলে বিভিন্ন স্কুলে। সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ বন্ধ করে এবং নামমাত্র টাকায় কাজ করানোর অভিনব ব্যবস্থায় সরকারি ব্যয় প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও গেল বিতরণের অর্থে টান পড়ছে। এবার ঋণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই প্রতি বছর উল্কাগতিতে বাড়ছে ঋণের পরিমাণ। ২০১০-১১ সালে রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৮১ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে মাথাপিছু ঋণ ছিল ২০ হাজার টাকা। এখন সেটা ৫৮ হাজার টাকা। এরাজ্যে কোনও শিশুকে ৫৮ হাজার টাকা ধারের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মাতে হয়। রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের প্রায় ২৪ শতাংশই ঋণের সুদ গুনতে খরচ করতে হয়। অর্থাৎ রাজ্য ক্রমশ ঋণের জালে জড়াচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এমন দিন আসছে তখন ধার করেও ধার শোধ করার উপায় থাকবে না।
Comments :0