wrestlers Delhi Police

প্রধানমন্ত্রী মৌন কেন? প্রশ্ন কুস্তিগিরদের

জাতীয়

wrestlers Delhi Police

যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকে অপসারণ এবং গ্রেপ্তারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব-খেতাব জয়ী কুস্তিগিররা। নিজের দলের একজন সাংসদের এই কীর্তিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৌন কেন? রবিবার সরাসরি এই প্রশ্ন তুলেছেন কুস্তিতে মহিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বীনেশ ফোগত। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় আন্দোলনকারী কুস্তিগিররা যে যারপরনাই ব্যথিত, তা-ও স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, ‘‘অভিযোগকারিণী দুই কুস্তিগিরের কাছে দিল্লি পুলিশ যৌন হেনস্তার ফটো, অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ চেয়েছে’’ বলে একটি সর্বভারতীয় দৈনিকের খবরেও তুমুল প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে দেশে।


ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলে তার শাস্তির দাবিতে গত জানুয়ারি থেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে পদকজয়ী কুস্তিগিররা। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নির্যাতিতা এক নাবালিকা সহ সাতজন মহিলা কুস্তিগির। আন্দোলনের চাপে শেষপর্যন্ত গত ৭ জুন কুস্তিগিরদের সঙ্গে এক বৈঠকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। এর পরে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন কুস্তিগিররা। কিন্তু এর মধ্যেও কিভাবে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য মহিলা কুস্তিগির ও তাঁদের পরিবারের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা শনিবার সবিস্তারে জানিয়েছেন সাক্ষী মালিক, বজরঙ পুনিয়ার মতো পদকজয়ী কুস্তিগিররা। সেই প্রবল চাপের কথা তুলেই দু’বারের বিশ্ব-মেডেল বিজেতা বীনেশ এদিন সংবাদসংস্থা রয়টার্স’কে বলেন, বিজেপি’র অন্য নেতাদের কথা ছাড়ুন, কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নিজের দলের সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে চুপ করে রয়েছেন, তা যথেষ্ট বেদনাদায়ক।

এদিকে, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ দৈনিকের একটি খবরেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে দেশে। সর্বভারতীয় দৈনিকটি জানিয়েছে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের অন্যতম দুই মহিলা কুস্তিগিরের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগের ‘প্রমাণ’ দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ! পুলিশ ওই কুস্তিগিরদের বলেছে, অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী ‘‘কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি যে আপনাদের বুক এবং পেটে স্পর্শ করছেন তার ফটো, অডিও এবং ভিডিও জমা দিন’’!
মোদী সরকার পরিচালিত দিল্লি পুলিশের এহেন ‘তদন্তের’ খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী কপিল সিবাল রবিবার কটাক্ষের ভঙ্গিতে টুইটারে বলেন, ‘‘যৌন হেনস্তার ফটো, অডিও, ভিডিও রেকর্ডিং চাইছে দিল্লি পুলিশ! এবার থেকে হেনস্তাকারীদের কীর্তির প্রমাণ রাখতে মহিলারা ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন! আরেকজন কাউকে তৈরি রাখবেন হেনস্তার রেকর্ডিং করার জন্য! এসবের জন্য মহিলাদের আগে থেকে নোটিস দেওয়ার পর হেনস্তাকারী তার অপকর্ম শুরু করবে!’’

উল্লেখ্য, দিল্লি পুলিশের কীর্তির উদাহরণ দিয়ে শনিবারও বজরঙ পুনিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন কিভাবে মিথ্যা বলে একজন মহিলা কুস্তিগিরকে শুক্রবার কুস্তি ফেডারেশনের অফিসে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। এদিনও তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে পারেন! ‘যৌন হেনস্তার ঘটনা পুনর্নির্মাণের’ কারণ দেখিয়ে ব্রিজভূষণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যে মহিলাকে ওই অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো, তাঁর মনের ওপর কতখানি চাপ পড়েছে। অথচ পুলিশ তাঁকে জানিয়েছিল, ব্রিজভূষণ সেসময় অফিসে থাকবে না। এতেই শেষ নয়, পুলিশ ওই মহিলা কুস্তিগিরকে ফেডারেশন অফিসে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সংবাদমাধ্যমের একাংশ একযোগে প্রচার শুরু করলো, অভিযোগ তুলে নিতেই নাকি তিনি সেখানে গিয়েছিলেন!’’ পুনিয়া বলেন, ‘‘বুঝতেই পারছেন, পুরো ব্যবস্থাই ব্রিজভূষণের পক্ষে কাজ করে চলেছে।’’


নিজের দলের অভিযুক্ত সাংসদকে বাঁচাতে প্রথম থেকেই চেষ্টার কসুর করছে না বিজেপি। দেশের মুখ উজ্জ্বলকারী মহিলা ক্রীড়াবিদরা রাস্তায় বসে টানা আন্দোলন চালালেও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ন্যূনতম এফআইআর’টুকু নথিভুক্ত করতে মোদী সরকারের নির্দেশে দীর্ঘ টালবাহানা চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তবে লড়াইয়ের জোরেই শেষপর্যন্ত এফআইআর গ্রহণ করে দিল্লির কনট প্লেস থানা। তবে ক্রীড়ামন্ত্রীর আশ্বাসে মাত্র সাতদিন আন্দোলন স্থগিত রাখলেও সরকার বা পুলিশ কারুর ওপরেই যে তাঁদের বিশেষ ভরসা নেই তা বারেবারেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন কুস্তিগিররা। পদকজয়ী বজরঙ পুনিয়া বলেছেন, ‘‘ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। দিল্লি পুলিশের তদন্তের ওপরেও আমাদের আস্থা নেই। তবে মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ১৫ জুন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। তারপর দরকারে ফের লড়াই শুরু করবো আমরা। সরকার কুস্তিগিরদের দাবি না মানলে লড়াই চলবে।’’ 
হরিয়ানার সোনেপতে গিয়ে এক মহাপঞ্চায়েতে সাক্ষী মালিকও বলেন, ‘‘জেলের বাইরে থাকায় ব্রিজভূষণ এবং তার বাহিনী প্রতিদিন আমাদের বাড়ির লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। প্রতিটি দিন আমরা কি ভয়াবহ মানসিক চাপে কাটাচ্ছি, তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। এই কারণেই আমরা প্রথম দিন থেকে ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেপাজতে জেরার দাবি জানিয়ে এসেছি। কারণ, তদন্ত ঘুরিয়ে দেওয়া এবং অভিযোগকারিণী ও সাক্ষীদের ভয় দেখানোর যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে তার। ব্রিজভূষণকে জেলের বাইরে রেখে কিছুতেই নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়।’’

কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকার আদৌ ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার করবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করে বীনেশ ফোগত রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ব্রিজভূষণকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, জিজ্ঞেস করুন অমিত শাহকে।’’ পাঞ্জাবে প্রতিবাদী কৃষক সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে খাতকার টোল প্লাজায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বীনেশ বলেন, ‘‘ব্রিজভূষণ নামে ওই লোকটি এতটাই ক্ষমতাশালী যে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত তাকে আড়াল করে চলেছে। বুঝতেই পারছেন, ওকে গ্রেপ্তার করানোটা অত সহজ কাজ হবে না। তবে আমাদের আন্দোলন চলবেই।’’ অর্ধেক বছরই লড়াইয়ের রাস্তায় কাটানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘‘আন্দোলন কতদিন চলবে তা আপনাদের বলতে পারবো না। ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তার ও শাস্তি হলে আমাদের লড়াই থামবে।’’
অন্যদিকে, দেশজুড়ে নিন্দা ও ধিক্কারকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে মোদী-শাহের মদতপুষ্ট ব্রিজভূষণ অবশ্য দাপটের সঙ্গেই সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। রবিবার উত্তর প্রদেশের গোন্ডায় এক সমাবেশে ভাষণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০২৪ সালে পরের লোকসভা ভোটেও আমি কাইসারগঞ্জ আসন থেকে লড়বো।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘বিশ্বে এমন কোনও শক্তি নেই, যে ২০২৪ সালে বিজেপি’কে হারাতে পারবে। বিজেপি’ই আবার ক্ষমতায় ফিরবে।’’    

Comments :0

Login to leave a comment