Mohun Bagan

সাদিকুর প্রায়চিত্তে ড্র মোহনবাগানের লাল কার্ড দেখলেন জুয়ান মোহনবাগান— ২ (সাদিকু) ওডিশা— ২ (জাহু )

খেলা

হারতে হারতে, শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। 
সবুজ মেরুনকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এনে দিলেন, ২০১৬ ইউরো কাপে রোমানিয়ার বিরুদ্ধে গোল করা আলবেনিয়ার আর্মান্দো সাদিকু। প্রথমে নিজেই দু’টি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছিলেন, পরে জোড়া গোল করে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন। এই ম্যাচের আগে গোল পাচ্ছিলেন না বলে কম সমালোচিত হননি সাদিকু। দিমিত্রি পেত্রাটোস, মনবীর, হুগো বুমোসদের অনুপস্থিতিতে জ্বলে উঠলেন। এদিনের পর সমর্থকদের নয়নমণি হয়ে উঠবেন তিনি, বলাই যায়। ওডিশার বিরুদ্ধে মোহনবাগান বদলা নিতে পারলেও এক পয়েন্ট পাওয়ায় খুশি হওয়া উচিত চোট জর্জরিত মোহনবাগানের। ড্র নিশ্চিত হওয়ার পরই সমর্থকদের গর্জন, মোহনবাগান শিবিরের উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তাঁরা কতটা সন্তুষ্ট। এবারের আইএসএলে এখনও অপরাজিত গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনেই রইল মেরিনার্সরা। 
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর, সেন্টার লাইনের কাছে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন মোহনবাগান কোচ জুয়ান ও ওডিশার ফুটবলার রয় কৃষ্ণা।  দু’জনের মধ্য বেশ কিছু সময় কথা কাটাকাটি চলল। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসেন দু’দলের ফুটবলাররা। রেফারিও ছিলেন। জুয়ানকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান ম্যাচ পরিচালক। কৃষ্ণাকে হলুদ, এরপর মৌরিসিও পান মার্চিং অর্ডার। এই ম্যাচে লাল কার্ড দেখার ফলে, আগামী নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে সাইডলাইনে দাঁড়াতে পারবেন না ফেরান্ডো।
এদিন, ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্ম আপের সময় হুগো বুমোস চোট পান। কোচের পরিকল্পনায় তিনি ছিলেন। হুগোর অবস্থা বিবেচনা করেই তাঁকে ম্যাচে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন সবুজ মেরুন কোচ জুয়ান ফেরান্দো। ছক বদলে ফেলতেও বাধ্য হন তিনি।  হুগোর না থাকাটাই প্রথমার্ধে ভোগালো মোহনবাগানকে। কারণ ফরাসি-মরোক্কান মিডফিল্ডার সবুজ গালিচা জুড়ে অবাধ বিচরণ করেন, সাহাল, থাপারা থাকলেও সেই জায়গাটা ভরাট হয়নি। প্রথমার্ধ জুড়ে মাঝমাঠের দখল ছিল ওডিশারই। নেতৃত্বে ছিলেন মরক্কোর মিডফিল্ডার আহমেদ জাহু। মাঝমাঠকে ব্যবহার করে তাঁরা আক্রমণ শানিয়েছে। তারউপর মোহনবাগান ফুটবলারদের মিসপাস, ভুলভ্রান্তি লেগেই ছিল। এবং চোটের ছড়াছড়ি। বিরতির ঠিক আগে ওডিশার মিডফিল্ডার আহমেদ জাহুর কড়া ট্যাকেলে চোট পান সাহালও। দেখা গেল ডাগআউটে রীতিমতো তিনি খোড়াচ্ছিলেন।  তার আগেই দু’গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে বাগান। ওডিশার হয়ে জোড়া গোল করেন জাহু।  
তবে ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত মোহনবাগান। আর্মান্দো সাদিকু বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলের মতো সুযোগ নষ্ট করেন আলবেনিয়ার ইউরো কাপার আর্মান্দো সাদিকু। কিয়ানের থেকে বল পেয়ে পোস্টের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। যা দেখে হতবাক সমর্থকরা। সাদিকুর মিস দেখে প্রেস বলাবলি হচ্ছিল, ‘এমন সুযোগ থেকে রাম মালিকও গোল করে দেবে’। সাদিকুর থেকেও বড় ভুলটা করেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার শুভাশিস বসু। ম্যাচের বয়স সবে আধঘণ্টা গড়িয়েছে। বামপ্রান্ত থেকে বক্সে ক্রস রাখেন গাহলোট, গোল লক্ষ্য করে হেড করেন পুইতিয়া। বল রিসিভ করতে গিয়ে, বল হাত দিয়ে নামান শুভাশিস। রেফারির চোখ এড়ায়নি। পেনাল্টি দেন। স্পটকিক থেকে ঠান্ডা মাথায় বিশাল কাইথকে উলটো দিকে ফেলে গোল করেন জাহু। ৩৬ মিনিটে একইভাবে বল রিসিভ করতে গিয়ে হাত লাগিয়ে দেন ওডিশার এক ফুটবলার। মোহনবাগান ফুটবলার, সার্পোট স্টাফ থেকে মাঠে আসা সমর্থকরা পেনাল্টির আবেদন করেন, কিন্তু এইক্ষেত্রে কর্ণপাত করেননি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে মোহনবাগানের দ্বিতীয় ভুল। জাহুকে সামনে দেখেও আশিস ব্যাক পাস করেন সাহালকে। কড়া ট্যাকেলে সাহালের পা থেকে বল কেড়ে নেন জাহু। বল পেয়ে যান মৌরোসিও। এক ছুটে বক্সের মধ্যে সঠিক জায়গায় পৌঁছে যান জাহু। মৌরোসিও জাহুকে বল বাড়াতে কোনও ভুল করেননি। বিপদ বুঝে জায়গা ছোট করে এগিয়ে আসেন বিশাল। নিঁখুত প্লেসমেন্টে বল জড়িয়ে দেন জাহু।
প্রথমার্ধ খেলাটা যতটা একপেশে লাগছিল, দ্বিতীয়ার্ধে তা হয়নি। জুয়ান পরিবর্তনে দল খেলায় ফেরে(থাপাকে তুলে হামতেকে নামান), মোহনবাগানের খেলায় গতি আসে। তেমনই ওডিশার কোচ সের্জিও লোবেরা, জাহুকে তুলে নেওয়ার পরই গোল হজম করে। যেই সাদিকু দুই হাফ মিলিয়ে দু’টি সহজ নষ্ট করে খলনায়কে পরিণত হতে হতেও নায়ক বনে গেলেন ম্যাচ শেষে। তাঁর অনবদ্য গোলে মোহনবাগান খেলায় ফিরে আসে। ৫৮ মিনিটে। ইউয়েস্তের পাস থেকে ডানপ্রান্তের কোণা থেকে বক্সের মধ্যে মাইনাস করেন কিয়ান। অসাধারণ ফ্লিকে গোল করে যান সাদিকু। গোল করেই দর্শকদের চাগিয়ে দেন। এরপর ওডিশাও গোল করার একটা সুযোগ পেয়েছিল। বাগানের তেকাঠির নিচে দাঁড়ানো বিশাল কাইথ অময় রানাওয়াডের শট ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বাঁচিয়ে দিয়ে দলকে ম্যাচে রাখেন। তবুও তিন পয়েন্ট হাতছাড়া হতে পারত মোহনবাগানের। যদি না সমতাসূচক গোলটি না করতেন সাদিকু। ইউয়েস্তের ফ্লিক হেড ধরে, বক্সের মধ্যে অনেকটা এগিয়ে আসা অমরিন্দার পায়ের নিচ থেকে গোলটি করেন তিনি। গোল করেই উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। জার্সি খুলে এক ছুটে চলে মোহনবাগান ডাগআউটের সামনে স্লাইড দিয়ে শুয়ে পড়েন। তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়েন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। জার্সি খোলার জন্য কার্ডও দেখলেন তিনি। তাতে কী যায় আসে। দলকে তো পয়েন্ট এনে দিতে পেরেছেন!
মোহনবাগান: বিশাল (গোলকিপার), ইউয়েস্তে, হামিল, শুভাশিস, আশিস, কিয়ান (সুহেল), অনিরুদ্ধ (হামতে), সাহাল (গ্লেন/দীপক), লিস্টন, আর্মান্দো, জেসন কামিন্স

Comments :0

Login to leave a comment