ACCIDENT COROMANDEL HOOGLY

খোঁজ মিলেছে তিন বন্ধুর, এখনও নিখোঁজ হরিপালের গোপাল

রাজ্য জেলা

হাসপাতালে ছেলে, চিন্তায় উদ্বিগ্ন হরিপালের অতনু কিস্কুর পরিবার।

অভীক ঘোষ

ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে রেল দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হুগলি হরিপালের এক যুবক। নাম গোপাল হেমব্রম। হুগলির হরিপালে পানি শেওলা গ্রামের বাড়ি। 

এই গ্রাম থেকে মোট চারজন কাঠের কাজের জন্য কেরালা যাচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের খোঁজ পাওয়া গেলেও, গোপালের খোঁজ পায়নি পরিবার। পরিবার সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল ১১ টা নাগাদ হরিপালে থেকে শালিমারের উদ্দেশ্য রওনা দেয় এই শ্রমিকরা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তাঁরা। 

উত্তরপাড়ার দেবাশিস দত্ত বাড়ি ফিরেছেন স্ত্রী’কে নিয়ে। তবে তাঁরা বলছেন, ‘দুঃস্বপ্নের রাত’। কৃতজ্ঞ স্থানীয় মানুষের কাছে। তাঁরাই এগিয়ে এসে সহায়তা করেছেন। পোলবার ফুলমুনি টুডু, মুকুলি টুডু ও লক্ষ্মী মুর্মু ফিরছিলেন। তাঁরা এখনও ভর্তি হাসপাতালে। আর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ম্যানেজার শানু দাস জানিয়েছেন কিভাবে বার্থ ভেঙে পড়েছে গায়ের ওপর। হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকেই শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনার সাক্ষী যাত্রীদের খোঁজ মিলছে। 

গোপালের খোঁজ না পেলেও রহিত হেমব্রম, অতনু কিস্কু ও তাপস কিস্কুদের খোঁজ মিলেছে। বালেশ্বরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাঁরা। প্রত্যেকেরই পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী উত্তরপাড়ার এক দম্পতি যদিও নিরাপদেই রয়েছে। পিছনের দিকে কুড়ি নম্বর বগিতে থাকায় বেঁচে ফিরলেন উত্তরপাড়ার ধানকল গলির বাসিন্দা দেবাশিস দত্ত ও  বনশ্রী দত্ত। ছেলে নিলিমেষ চেন্নাইয়ে কর্মরত। ছেলের কাছে যাচ্ছিলেন দম্পতি।

দেবাশিস দত্ত প্রাক্তন রেলকর্মী। তিনি জানান, ‘‘পিছন দিক থেকে তিন নম্বর বগি আর সামনে থেকে কুড়ি নম্বর এ-২ এসি বগিতে ছিলেন তারা। সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনার আগে ট্রেন শেষ দাঁড়িয়েছিল বালেশ্বর স্টেশনে। প্রচন্ড শব্দ ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনের চাকা রেল ট্র্যাক থেকে নেমে কংক্রিট স্লিপারের উপর দিয়ে যেতে শুরু করে। ট্রেনের কামরার ভিতর তখন পরিত্রাহি চিৎকার। আলো চলে যায়।’’

ট্রেন থামতেই স্ত্রীকে নিয়ে নেমে পড়েন দেবাশিস দত্ত। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বুঝতে পারেন খুব বড় মাপের দুর্ঘটনা হয়েছে। কিছুটা হেঁটে একটি রেল গেট দেখতে পান। সেখান থেকে ছোটো রাস্তা ছেড়ে আরও এক কিলোমিটার হেঁটে বড় রাস্তায় পৌঁছে একটা বাস পেয়ে যান। বাসে চড়ে কলকাতার বাবুঘাটে ভোর পাঁচটায় পৌঁছান, তারপর উত্তরপাড়া।

বনশ্রী দত্ত বলেন, ‘‘একটা দুঃস্বপ্নের রাত, আমি যে বেঁচে আছি সেটাই অবাক লাগছে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর দেখলাম আগুন ছুটেছে ট্রেনের তলা দিয়ে। থামার পর গেট খুলে নামতে যাব, দেখি নামার পাদানি নেই। রেল লাইন উপরে উঠে গেছে। কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা আসেন, রেসকিউ টিম অ্যাম্বুলেন্স আসে। ঝোপ ঝাড় মাঠ পেরিয়ে বাসে উঠি। স্থানীয়রা সাহায্য করেছেন। জল দিয়েছেন, লাগেজ নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। তবে এখনো সেই দুঃস্বপ্ন কাটছে না।’’

পাশাপাশি তামিলনাড়ুতে ধান রোয়ার কাজে গিয়েছিলেন হুগলি পোলবা গোটু গ্রামের বাইশ মহিলা। যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁদের মধ্যে তিনজন। বালেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন।

১২৮৬৪ ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ছিলেন পোলবা সুগন্ধা পঞ্চায়েতের গোটু চারাবাগানের ফুলমুনি টুডু, মুকুলি টুডু ও লক্ষ্মী মুর্মু। এক মাস আগে এক ঠিকাদার মারফত সুগন্ধা এলাকা থেকে বাইশ মহিলা ধান রোয়ার কাজে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন।গতকাল কাটপাডি জংশন থেকে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ওঠেন। দুর্ঘটনার পর মুকুলি ফোন করে স্বামী বিনয়কে খবর দেন। তারপর আর কথা হয়নি। শনিবার সকালে আবার ফোনে কথা হয়, ওডিশার হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে তাদের। স্থানীয় প্রশাসন মেদিনীপুরে নিয়ে আসবে, সেখান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

দক্ষিণ ভারতে যাবেন, তবে করমন্ডলে নয়। বলেন, মৃত্যুর মুখ থেকে বাড়ি ফেরা শানু দাস। উত্তরপাড়ার মাখালা এলাকার বাসিন্দা শানু একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ম্যানেজার। করমন্ডলে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে কোয়েম্বাটোর হয়ে দক্ষিণ ভারত ঘোরার কথা ছিল। দু’দিন পর ৩৫ জনের পর্যটক দলের যোগ দেবার কথা ছিল তাদের সঙ্গে। এস-১ কোচে ছিলেন। প্রচন্ড শব্দ আর আগুন দেখতে পান জানালা দিয়ে। নড়াচড়া করতেই গায়ে বার্থ ভেঙে পরে। ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী শানু। করমন্ডলে এর আগেও গিয়েছেন, তবে আর যেতে চান না তিনি।

হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়েছেন হুগলি রুরাল এলাকায়, করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় দুপুর তিনটে অব্দি  ৮ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৭ জন ভর্তি আছে ওডিশায়, একজনকে পশ্চিম মেদিনীপুরে পাঠানো হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment