Inhuman Rule

মানুষের নয় দানবের শাসন

সম্পাদকীয় বিভাগ

চোখের সামনে নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়া এক ‍‌শিশুকন্যার মায়ের শোক হৃদয় খান খান হয়ে যাওয়া মর্মবেদনা, ঘৃণা, ক্ষোভ ইত্যাদিকে একসাথে প্যাকেজ করে মোটা টাকার বিনিময়ে কিনে নেবার খেলায় ফের মাঠে নেমে পড়েছে এরাজ্যের শাসক দল। কতটা অমানবিক, অনুভূতিহীন নরপিশাচ হলে একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে একমাত্র সন্তান হারা অসহায় মায়ের মুখ বন্ধ করতে টাকার বান্ডিল হাতে করে লোক পাঠাতে পারে। এতে অবশ্য আকাশ থেকে পড়ার কিছু নেই। গত দেড় বছরে এরাজ্যে দুষ্কৃতী নির্ভর রাজনৈতিক সমাজ গড়ে তুলেছে শাসক তৃণমূল। টাকাটাই শেষ কথা। টাকার জন্য গোরু পাচার, সোনা পাচার, কয়লা চুরি, বালি চুরি, পাথর চুরি, চাকরি চুরি ইত্যাদি যা খুশি তাই অপরাধ বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে করা যায়। আইন-কানুনও দুষ্কৃতীর অনুগত। পুলিশ গুন্ডা, মস্তান, দুষ্কৃতীদের কাছে নতজানু। সংবিধান ও আইনের পাঠ শিকেয় তুলে রেখে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত খুনি, ধর্ষক, চোর, গুন্ডা, দুষ্কৃতী, দাগী অপরাধীদের রক্ষা করতে। তারা যত ঘৃণিত ও নৃশংস অপরাধই করুক না কেন পুলিশের প্রথম কাজ তাদের বাঁচানোর জন্য মামলা সাজানো। তারজন্য প্রকৃত ঘটনাকে পুরোপুরি বদলে দিয়ে এমনভাবে মামলা সাজাবে, তথ্য প্রমাণ লোপাট হবার আয়োজন করবে যাতে অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়। অর্থাৎ এরাজ্যে এখন ন্যায় বিচারের কোনও সুযোগ নেই। উলটে ন্যায় বিচারের দাবিটাই যাতে জন পরিসরে ছড়াতে না পারে তারজন্য শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীরা পুলিশ, প্রশাসনের লোক, এমনকি নানা মুখো‍‌শে শাসকের এজেন্টরা চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অপরাধকে খাটো করে অপরাধীকে রক্ষা করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের শোক ও ক্রোধকে চাপা দেবার নতুন কৌশল চালু হয়েছে মোটা টাকা দেওয়ার বিনিময়ে। অর্থাৎ ঘটনা যাই ঘটুক টাকা নিয়ে চুপ হয়ে যাও, মিটমাট করে নাও। অপরাধীর গায়ে যেন কোনও আঁচড় না লাগে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্র আনিশ খানকে হত্যা করে এইভাবে টাকার বান্ডিল নিয়ে গভীররাতে সরকারের প্রতিনিধি গিয়েছিল আনিশ খানের বাড়িতে। আনিসের বাবা ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন। সরকার আজও ন্যায়বিচার দেয়নি। দেবেও না। দিলে যে দলের সোনার টুকরোদের ফাঁসি বা সারাজীবন জেল হয়ে যাবে। আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার পর একমাত্র সন্তান হারা বাবা-মাকে টাকা দিয়ে কিনতে গিয়েছিল শাসক। কিন্তু ধর্ষক, খুনিদের বাঁচাতে বিক্রি হননি তাঁরা। এমন সহস্রাধিক অপরাধের ঘটনা এরাজ্যে আছে যেখানে দলীয় ধর্ষক, খুনী, গুন্ডাদের বাঁচাতে তৃণমূলী শাসক টাকা দিয়ে অপরাধীদের রেহাই দিতে চেয়েছে। অপরাধীদের কঠোর সাজা নয় বরং তাদের রক্ষা করা, নিরাপত্তা দেওয়া যাতে আরও অপরাধ লাগাতার করে যেতে পারে এটাই এরাজ্যে নতুন বাস্তবতা।
কালীগঞ্জের খুন হওয়া একরত্তি নিরীহ নিষ্পাপ মেয়েটার মাকেও কিনতে গিয়েছিল শাসকের বিধায়ক। ফোনেও টাকা দেবার প্রস্তাব দিয়েছিল। সন্তান হারা মা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, আমাদের জায়গা জমি, বাড়ি ঘর যা কিছু সব দিয়ে দিচ্ছি আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দাও। আমার মেয়েকে চাই। না হলে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা চাই। এটাই তো একজন মায়ের আসল পরিচয়। এসব ভুলিয়ে সংবেদনশীলতাকে খুন করে মানুষকে টাকায় কেনাবেচা পুতুলে পরিণত করতে চায় তৃণমূল। অপরাধ করতে করতে এরা এতটা নিচে নেমেছে এতটা নরপিশাচ হয়ে গেছে যে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। এরা দানবে পরিণত হয়েছে। রাজ্যে চলছে দানবের শাসন।

Comments :0

Login to leave a comment