WEST INDIES CRICKET

বিশ্বকাপে নেই ক্যারিবিয়ানরা, “সময় পাল্টে গেছে” বলছেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

খেলা

WEST INDIES CRICKET CRICKET WORLD CUP 2023 BENGALI NEWS

শুভঙ্কর দাস

আসছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩। ইতিমধ্যেই, পারদ চড়তে শুরু করেছে এই মেগা ইভেন্টের। ব্যাট এবং বলের লড়াই দেখতে তৈরি হচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরাও। কিন্তু আসন্ন এই বিশ্বকাপে, যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি এককালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট ‘জায়ান্ট’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।  

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকবছর ধরেই ক্যারিবিয়ানদের ক্রিকেট বোর্ডে কিছু সমস্যা চলছিল। আর এবার, সোজা বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই মুছে গেল তাঁরা। ক্রিকেটের বেসিক, সেই লাল বলের টেস্ট ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাঁদের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলে ১৯২৮ সালে। ধীরে ধীরে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে, হয়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট দল। বলা যেতে পারে, বিপক্ষের ত্রাস।  ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল, এককথায় ক্যারিবিয়ানদের গোল্ডেন পিরিয়ড। টানা ১১টি টেস্ট ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছিল তাঁরা। শুধু তাই নয়, অপরাজিত ছিল টানা ২৭টি টেস্টে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৫-০ ব্যবধানে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ও এই সময়তেই।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে, বডিলাইন সিরিজেও জয় পায় এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে অধিনায়ক হিসেবে ক্লাইভ লয়েড দায়িত্বে আসার পরই, নিজেদেরকে আরও উন্নত করতে শুরু করে ক্যারিবিয়ান ব্রিগেড। টেস্টে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৬৬ সালে। অন্যদিকে, গর্ডন গ্রিনিজের সেই অনবদ্য ব্যাটিং এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উজ্বল। সেইসঙ্গে, অবশ্যই ভিভিয়ান রিচার্ডসের আক্রমণাত্মক কভার ড্রাইভগুলির কথা বলতেই হয়। গ্যারি সোবার্সের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে, আজও ক্রিকেট বিশ্লেষকরা আলোচনায় মশগুল। তবে যে দুজনের কথা না বললেই নয়, তাঁরা হলেন ম্যালকম মার্শাল এবং মাইকেল হোল্ডিং। বিদ্যুৎ গতির এই দুই বোলার সেইসময় বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে যেন আতঙ্কের চোরাস্রোত। তারপর আসেন কলিন ক্রাফট এবং জোয়েল গার্নার।

তবে ব্রায়ান লারা যুগও ভোলার নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, ওয়ালশের সেই দুরন্ত বোলিং আজও মনে রেখেছেন ক্রিকেট প্রেমীরা। মাত্র ২৫ রান দিয়ে ৮ উইকেট! অনবদ্য বললেও হয়ত কম বলা হবে। তারপর ১৯৯৩-৯৪ সাল, অ্যাডিলেডে অজিদের বিরুদ্ধে ১ রানে জয়ও ঐতিহাসিক। তবে, সেই ভিভ রিচার্ডসের দুটি মূল্যবান ইনিংসের কথা বলতেই হয়। ট্রেন্ট ব্রিজে ২৩২ এবং ওভালে ২৯১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। চারটি টেস্ট ম্যাচ মিলিয়ে, তাঁর সংগ্রহে মোট রান ছিল ৮২৯। ক্যারিবিয়ানদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, কার্টলি অ্যামব্রোস এবং ইয়ান বিশপের কথাও বলতে হয়। মোট দুবার অর্থাৎ, ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেইসময় এই প্রতিযোগিতার নাম ছিল প্রুডেনশিয়াল কাপ। অন্যদিকে, লয়েডের অধিনায়কত্বে ৭৪টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৩৬টি ম্যাচেই জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বর্তমান সময়ে কায়রন পোলার্ড, ডোয়েন ব্র্যাভো, সুনীল নারাইনের মতো ভালোমানের ক্রিকেটাররাও উঠে এসেছেন।

কিন্তু কোথাও গিয়ে বারবার তাল কাটছিল। বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করলেও, অনেকক্ষেত্রেই সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে পৌঁছনোর মতো জায়গায় যেতে পারেনি তাঁরা। তারপর ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে বিভেদ, স্পনসরদের সমস্যা, সবটা মিলিয়েই গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। যদিও ২০১০ সাল থেকে, নতুন করে একটা চেষ্টা শুরু হয়। ফলস্বরূপ, কুড়ি বিশের ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয় পায় তাঁরা। আইসিসি টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্রফি জেতে ২০১২ এবং ২০১৬ সালে। অন্যদিকে, সেই ২০০৪ সালে তাঁরা শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে। তাছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানরা জয় পায় ২০১৬ সালে। এহেন এককালের ক্রিকেট জায়ান্ট এবার বিশ্বকাপে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারল না। কিন্তু কেন?        

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি গণশক্তি ডিজিটালকে জানান, “এটা আমার কাছে খুবই অদ্ভুত একটা অনুভূতি। সময় পাল্টে গেছে, দিন পাল্টে গেছে। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নেই, সেই দুনিয়া নেই। সেই ফ্র্যাঙ্ক ওরেল, গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ব্রায়ান লারা নেই। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এতবার ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাঁরা এবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সেটা আমার কাছে খুবই দুঃখের।  বাঙালিদের সবসময় একটা সফট কর্নার থাকে-ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ফুটবলে ব্রাজিলেত প্রতি। একটা ভালো টিমের ভয়ঙ্কর অনুপস্থিতি ওয়ার্ল্ড কাপে। কি আর করা যাবে, একটা অংশের ক্রিকেট প্রায় শেষ হয়ে গেল।“

সবমিলিয়ে, আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের না থাকা সত্যিই ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে খারাপ লাগার একটি বিষয়। তবে বাকি দলগুলির মধ্যে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, সেটা উপভোগ করার অপেক্ষায় ক্রিকেট মহল। 

Comments :0

Login to leave a comment