DESTRUCTION OF HIMALAYA

প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোটেও প্রাকৃতিক নয়, নথি দিয়ে দাবি ৫০টি সংগঠনের

জাতীয়

himalayas climate change natural disaster bengali news

হিমালয় জুড়ে ঘটে চলা একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ভ্রান্ত সরকারি নীতি এবং বিভিন্ন স্তরে সরকারের ব্যর্থতা। বৃহস্পতিবার এক নথি প্রকাশ করে এমনই অভিযোগ করল ৫০টি সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠন। 

‘পিপল ফর হিমালয়’র ব্যানারে এই বার্তা দেওয়া হয়। নথিতে সই করেছেন অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, সিকিম, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীরা। 

বিজ্ঞানী এবং পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, ২০২৩ সালে হিমালয় অঞ্চল অত্যধিক শুষ্ক শীতকালের সাক্ষী থেকেছে। তুষারপাত হয়নি বলা চলে। এর প্রভাব ২০২৪ সালে প্রবল ভাবে অনুভূত হবে। 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উত্তরাখন্ডের যোশীমঠে ভূমিধ্বস, হিমাচলে বন্যা এবং অক্টোবর মাসে সিকিমে তিস্তা নদীতে ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দেয়। সেই উদাহরণ গুলি তুলে পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ কমে গেলেই এই ঘটনাগুলি নিয়ে চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাগুলির জন্য দায়ী কারা, সেটা আর সামনে আসে না। এরফলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের অপেক্ষায় রয়েছে হিমালয় অঞ্চল। 

চলতি বছরের ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি হিমালয়ের বুকে ঘটা বিপর্যয়গুলির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। সেখানে ভুক্তভোগী হিমালয়বাসী এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আলোচনার নির্যাস হিসেবে উঠে আসে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি, ঘটছে বিপর্যয়, তেমনই তাল মিলিয়ে জীবীকা হারাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে হিমালয়ের কোলে বসবাস করে আসা বহু জনজাতি, যাঁদের জীবীকা পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। 

পিপল ফর হিমালয় বলছে, সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধির পরিমাণ শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখতে না পারলে হিমালয় অঞ্চলে বছরভর খরা দেখা দিতে পারে। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, হিমালয়ের বুকে ঘটে চলা বিপর্যয়গুলি মোটেও প্রাকৃতিক নয়। বরং ভুল নীতি এবং লাগামছাড়া ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহনের ফলেই এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় স্তরের সরকারি নীতি নির্ধারকদের পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের নীতি নির্ধারকরাও বিপর্যয়গুলির জন্য সমান ভাবে দায়ী। 

নথিতে পিপল ফর হিমালয় লিখেছে, বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা সবথেকে কম দায়ী, তাঁদের সবথেকে বেশি খেসারত দিতে হয়। বিপর্যয়ের ফলে সবথেকে বেশি সঙ্কটে পড়বেন দলিত, আদিবাসী, অরণ্যবাসী, মহিলা, পরিযায়ী শ্রমিক, সংখ্যালঘু, শারিরীক ভাবে দুর্বল অংশের মানুষ। 

সংগঠকদের তরফে তথাকথিত উন্নয়নের নামে পাহাড় ও নদী ধ্বংস করে গড়ে ওঠা মেগাবাধ, হাইওয়ে, রেল প্রকল্প এবং বাণিজ্যিক পর্যটনের তীব্র বিরোধীতা করা হয়েছে। একইসঙ্গে নদী, পাহাড়, তৃণভূমি এবং বনভূমির জমির চরিত্র বদলের জন্যও সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। 

পরিবেশ কর্মীদের ক্ষোভ, বাজার নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পাহাড়ে উন্নয়নের বার্তা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। কিন্তু এই পদ্ধতিগুলির কোনওটাই পরিবেশ ভারসাম্যের তোয়াক্কা করেনা। কিন্তু প্রাকৃতিক ভারসাম্য টলে যাওয়ার ফলে ঘটা বিপর্যয়ের দায়িত্বও নেয়না কেন্দ্রীয় সরকার। 

উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, বিপর্যয় পরবর্তী কেন্দ্রীয় ত্রাণের পরিমাণ খুবই সীমিত। একইসঙ্গে সমস্যার মূলে গিয়ে তার সমাধান করারও চেষ্টা হয়না। ২০২৩ সালের সিকিম এবং হিমাচল প্রদেশ বিপর্যয়কে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হয়নি। তারফলে ত্রাণ এবং অন্যান্য সাহায্যের পরিমাণও ছিল যথেষ্ট কম। 

 

Comments :0

Login to leave a comment