Editorial

বঞ্চিতই থেকে গেল লাদাখের মানুষ

সম্পাদকীয় বিভাগ

 অবিভক্ত পূর্ণাঙ্গ রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরের অংশ হিসাবে যে মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা ছিল লাদাখের অধিবাসীদের আজ পাঁচ বছর পরেও সেইসব তাদের অধরা রয়ে গেছে। ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দু’টো পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করেছিল মোদী সরকার। তারপর সরাসরি দিল্লি থেকে শাসিত হচ্ছে লাদাখ। প্রশাসন নীতি নির্ধারণে লাদাখের জনগণের কোনও ভূমিকা নেই।‍‌ যেন উপরওয়ালার করুণা নির্ভর করেই তাদের বেঁচে থাকতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের ভারতে যেন রাজার শাসন চলছে লাদাখে। কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে লাদাখকে কার্যত ‘মায়ে খেদেনো বাপে তাড়ানো’ ভূখণ্ডে পরিণত করেছেন মোদী-শাহরা। লাদাখের মানুষের জীবন যন্ত্রণা, তাদের উদ্বেগ-আশঙ্কা, তাদের প্রত্যাশা ইত্যাদিকে মূল্য না দিয়ে একতরফাভাবে বিধি ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আর তাতে লাদাখবাসীদের প্রধান দাবিগুলির কোনোটিরই স্বীকৃতি মিলল না।

বস্তুত কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর লাদাখের মানুষের জমির মালিকানা, কর্মসংস্থান, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পরিবেশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ৩৭০ ধারার সুবাদে যে বিশেষ অধিকার ও রক্ষা কবচ তাদের ছিল সেটা কেড়ে নিয়ে তাদের অরক্ষিত করে দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছরে লাদাখের একজন মানুষও সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হননি। যে ক’জন কাজ পেয়েছে সকলেই ঠিকা কর্মী হিসাবে। বস্তুত ভাগ হবার পর লাদাখের জন্য কোনও পাবলিক সার্ভিস কমিশনই নেই। লাদাখবাসীরা পাঁচ বছর ধরে টানা দাবি করে আসছেন লাদাখের জমি, জঙ্গল, পরিবেশ বহিরাগতদের হাত থেকে সুরক্ষার। সংবিধানের অষ্টম তফসিলে যুক্ত করে লাদাখকে অন্যান্য অনেক রাজ্যের মতো বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার দান। কিন্তু মোদী-শাহ’রা কিছুই করেননি।

নতুন যে বিধি ঘোষিত হয়েছে ২০১৯ থেকে টানা ১৫ বছর বসবাসকারীরাই স্থায়ী অধিবাসীয় শংসাপত্র পাবে। দাবি ছিল ন্যূনতম ৩০ বছর বসবাস বাধ্যতামূলক। লাদাখের মানুষ সকলেই প্রায় আদিবাসী। সরকারি চাকরিতে তাই ৮৫ শতাংশ কোটা লাদাখবাসীর জন্য। তেমনি উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি ভোতি ও পুর্গিকে সরকারি ভাষা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তেমনি বহিরাগতদের হাত থেকে লাদাখে জমি রক্ষার কোনও বিধি হয়নি। ফলে বিত্তবান-কর্পোরেটরা মুনাফার স্বার্থে লাদাখের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান জমি অচিরেই দখল করে ফেলতে পারবে। লাদাখের মানুষ নিজ দেশে হবেন পরবাসী। তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। যেহেতু সংবিধানে অষ্টম তফসিলে লাদাখের জায়গা হয়নি তাই ঘোষিত যাবতীয় বিধির কোনও সাংবিধানিক গ্যারান্টি নেই। যে কোনও সময় সরকার সেগুলি বাতিল করে দিতে পারে। কারগিল ও লে-তে দু’টো স্বশাসিত পরিষদ গঠনের কথা বলা হলে তাদের আইনি বৈধতা নেই। অর্থাৎ লাদাখকে যথারীতি দিল্লির অধীনে পৌরসভার মতোই করে রাখা হবে। লাদাখ প্রশাসনে লাদাখের মানুষের মতামতের কোনও মূল্য থাকলো না। তারা শুধু শাসিত হবে, শাসনে প্রতিনিধিত্ব করার কোনও অধিকার থাকবে না।

Comments :0

Login to leave a comment