এদিনের সমাবেশের মূল স্লোগান ছিল শিক্ষাক্ষেত্রকে বাঁচাও, এনইপি’কে প্রত্যাখ্যান কর। দেশকে বাঁচাও, বিজেপি’কে প্রত্যাখ্যান কর। এসএফআই, এআইএসএফ, এআইএসবি, আইসা, এনএসইউআই, সিআরজেডি, পিএসইউ সহ ১৬টি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠন ‘ইউনাইটেড স্টুডেন্টস অফ ইন্ডিয়া’র ব্যানারে এই প্রতিরোধ সমাবেশে সামিল হয়।
১৬টি ছাত্র সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এনইপি, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য অভিন্ন ভর্তির পরীক্ষা চালুর মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। প্রতি নিয়ত শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে কেন্দ্র। উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার খাতে কার্যত প্রতিদিন বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে। এমফিলের মত ডিগ্রি বাতিল করেছে কেন্দ্র। অলিখিত ভাবে স্কলারশিপ বন্ধ করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
ছাত্র সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ছাত্রদের এই সমাবেশ আটকাতে রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেছে বিজেপি। দিল্লি আসার আগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। দিল্লি পুলিশের তরফেও সমাবেশের এবং মিছিলের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করা হয়। বহু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফেও পড়ুয়াদের এই সমাবেশে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও যন্তর মন্তরের সভাস্থল উপচে পড়েছে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আসা পড়ুয়াদের ভিড়ে।
এদিনের সমাবেশ থেকে ছাত্র বিরোধী বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বাণ জানানো হয়।
এসএফআই’র সর্বভারতীয় সভাপতি ভিপি সানু সমাবেশে বলেন, ‘‘দেশের মাটিতে এর আগে বিজেপি-আরএসএস’র মত এত সাম্প্রদায়িক কোনও শক্তি ক্ষমতায় আসেনি। এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হল সমাজে বিভাজন ছড়ানো। কিন্তু ছাত্র সমাজ এমন কোনও সরকারকে মেনে নেবেনা, যাঁরা সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র এবং কাঠামোর উপর প্রতিনিয়ত আক্রমণ চালিয়ে যাবে। বিজেপি পুঁজিপতিদের কাছে শিক্ষাকে বিক্রি করে দিতে চাইছে। আমরা কখনোই এটা মেনে নেব না।’’
এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস উত্তাল সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘রামের নামে গোটা দেশে লুট চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’
এর পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন এআইএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক দীনেশ শ্রীরঙ্গরাজ, আইসা’র সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বোস প্রমুখ।
সমাবেশ শেষের আগে এসএফআই’র সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর ৯দফা দাবি সনদ তুলে ধরেন। ছাত্রদের দাবি, এনইপি ২০২০, এনইইটি এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন প্রবেশিকা বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে ভগৎ সিং জাতীয় কর্মসংস্থান গ্যারেন্টি অ্যাক্ট চালু করতে হবে। এই আইনের মাধ্যমে সমস্ত দেশবাসী শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবেন।
এর পাশাপাশি দাবি সনদে ফি বৃদ্ধি, প্রাক-প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর স্তর অবধি গুণগত মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার দাবি উঠে এসেছে। একইসঙ্গে, শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ এবং কেন্দ্রীকরণেরও তীব্র বিরোধীতা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখার দাবিতেও সোচ্চার হন ছাত্ররা।
দাবি সনদে এসসি, এসটি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের অধিকার রক্ষার কথা উঠে এসেছে। বেসরকারী ক্ষেত্রকেও সংরক্ষণের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়েছে এদিন। একইসঙ্গে দেশের ক্যাম্পাসগুলিতে অর্থনৈতিক এবং জাতিগত বৈষম্য রোধের জন্য রোহিত অ্যাক্ট লাগু করারও দাবি উঠে এসেছে।
এছাড়াও ক্যাম্পাসগুলিতে যৌন হেনস্থা রোধে জিএসক্যাশ সেল চালু, সমস্ত ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ছাত্র ভোট করা এবং সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিল করার দাবিও ওঠে।
Comments :0