Protest Rally Siliguri

মনীষীদের মূর্তি সরানোর তীব্র প্রতিবাদ শিলিগুড়িতে

জেলা

শিলিগুড়ি সূর্যসেন পার্ক থেকে মনীষীদের মূর্তি অপসারনের অগণতান্ত্রিক অনৈতিক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন শহরের লেখক শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বুধবার বিকেলে শহরের সমস্ত লেখক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের ডাকে শিলিগুড়ি সূর্যসেন পার্কের গেটের সামনে প্রতিবাদ সভা হয়। প্রতিবাদ সভায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ বিঞ্জান মঞ্চ, কিশোর বাহিনী, সৃজনসেনা, বলাকা, ইঙ্গিত, থিয়েটার আকাদেমি সহ শহরের সমস্ত সাংষ্কৃতিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি ও সম্পাদক ড. সঞ্জীবন দত্ত রায় ও পার্থ প্রতীম মিত্র, অধ্যাপক শেষাদ্রি বসু, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী আনন্দ ভট্টাচার্য, বিমান দাশগুপ্ত, কুন্তল ঘোষ, বিশিষ্ট লেখক সুব্রত চক্রবর্তী প্রমুখ। 
সূর্যসেন পার্কের একটা ইতিহাস রয়েছে। অত্যন্ত সংবেদনশীল এই পার্ক। এই পার্কে যে শিশু, কিশোর সহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন আসেন সকলের সামনে ইতিহাস চেতনার প্রয়োজনে এই পার্কে বিগত পৌর কর্পোরেশনরে বামফ্রন্ট বোর্ডের সময়ে উনবিংশ শতাব্দীর মনীষীদের, ভারতবর্ষের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্বদের বেশ কিছু মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিলো। বিগত বামফ্রন্ট পরিচালিত পৌর বোর্ডের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য শহরের সৌন্দর্য্যায়নের পাশাপাশি সুষ্ঠ পরিকল্পনা করেছিলেন। শহরের শোভা বর্ধনের জন্য বিশেষ করে মনীষীদের মূর্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মনীষীদের মূর্তি স্থাপিত হয়েছিলো। বামফ্রন্টের সময়তেই সূর্যসেন পার্কটি তৈরী হয়েছিলো। বিগত বাম পৌর বোর্ডের সময়তেই গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পের আওতায় বাংলার নবজাগরনের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, বিবেকানন্দ সহ মনীষীদের আবক্ষ মূর্তি পার্কে ঢোকার মুখে একটি জায়গায় পাশাপাশি বসানো হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, আবক্ষ মূর্তিগুলির নীচে লেখা হয়েছিলো এই সমস্ত মনীষীদের সমাজের প্রতি অবদানের বিষয়গুলি। ইতিহাস চেতনার বিকাশের মহান ব্রত নিয়ে মূর্তিগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। বর্তমান কর্পোরেশনের বোর্ড সেই মূর্তিগুলো পার্ক থেকে অপসারিত করেছে। অকারণে অনৈতিকভাবে অসম্মানের সাথে মূর্তিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে এবং শহরের সুনাগরিকদের অবহিত করতে, মনীষীদের মূর্তি সরানোর তীব্র প্রতিবাদ জানাতেই এদিন শিলিগুড়ি শহরের নাট্যকর্মী, সাংষ্কৃতিক কর্মীরা পার্কের মূল গেটে সমবেত হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংষ্কৃতিক কর্মীরা বলেন, মূর্তিগুলোকে সংরক্ষন বা যথপোযুক্ত স্থানে রাখার কোন পরিকল্পনা আপাতত পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের কাছে নেই। অজ্ঞাত কারনেই হঠাৎ করেই মূর্তিগুলোকে অপসারিত করা হয়েছে। মূর্তি নিয়ে রাজনীতি চিরকাল হয়ে এসেছে। সত্তরের দশকে মনীষীদের মূর্তি ভাঙা হয়েছিলো। এই সেদিনও কলকাতা শহরে গান্ধীজীর মূর্তি ভাঙা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের দায়দায়িত্ব সমস্ত কিছুই পরবর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। বর্তমান পৌর বোর্ডের উচিৎ ছিলো আগের বোর্ডের কর্মকান্ডগুলো রক্ষা করা। নতুন প্রজন্মের স্বার্থে একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে মূর্তিগুলিকে পার্কে স্থাপন করা হয়েছিলো। অনতিবিলম্বে শ্রদ্ধার সাথে প্রতিটি মূর্তিকে পার্কে পুর্নস্থাপিত করার দাবি জানান তারা। তা না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের গড়ে তোলা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

Comments :0

Login to leave a comment