মীর আফরোজ জামান: ঢাকা
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলে জারি হয়েছে অধ্যাদেশ। সেই অধ্যাদেশেও বলা হয়েছে যে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং হানাদারদের সহযোগী ছিল। তাদের বিরুদ্ধে মহম্মদ ইউনুসের অন্তবর্তী সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা উঠল সেই প্রশ্ন।
জামাত-ই-ইসলামির বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফারক-ই-আজম বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘না, কোনো ব্যবস্থা নেবে না সরকার। আমরা বলেছি এরা (জামাত) ছিল। এটি ঐতিহাসিক তথ্য।’’
কিন্তু তারা তারপরও এই শক্তি বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। তা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এর ব্যাখ্যা তাদেরকে (জামাত) দিতে হবে। তারা কেন রাজনীতি করছে, তারা তখন কী করেছিল, তাদের মতামত তো জনগণকে জানাতে হবে। তবে তারা সেই সময়ে পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিল- এটা সত্য। এর দায় তো তাদের নিতে হবে।’’
মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রক অধ্যাদেশ জারি করে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী চার শ্রেণীর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী'। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশী পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্ব জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যারা মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী-কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশী সাংবাদিক। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। নতুন অধ্যাদেশে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী করার ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি বাতিল হয়ে গেল। যদিও তাদের সুযোগ-সুবিধায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
অধ্যাদেশ নিয়ে খবরের জেরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস বিভাগ থেকে মিডিয়ার ওপর দোষ চাপানো হয়েছে। এমনকি সংবাদটি পরিবেশনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
জামাত প্রসঙ্গে ইতিহাস লেখক, গবেষক এবং মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘এই সরকার জামাত-ই-ইসলামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। কারণ, এই সরকারের সেই নৈতিক শক্তি বা মনোবল নেই।’’
রাজনীতিতে এই অধ্যাদেশের প্রভাব কী? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, "আপাতত কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। তবে আলোচনা হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কোথাও না কোথাও আসল সত্য থেকে যায়। যেমন, নতুন আইনে জামাতের নাম আছে। আর এই সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। তারা তো জামায়াতের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে।‘‘
Comments :0