আরএসএস-বিজেপি’র রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, অভিন্ন দেওয়ানিবিধি। এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের যে হাল হয়েছে তা সামাল দিতে ল্যাজে গোবরে অবস্থা। জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দু’টুকরোই করা হয়নি, তাদের রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার দ্বারা জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ শাসিত হচ্ছে না। দিল্লি থেকে মোদী-শাহ-রাজনাথরা আমলাদের দিয়ে শাসন করছেন। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। তাদের মতামত-প্রত্যাশার কোনও মূল্য নেই। সেনা জওয়ানের কঠোর শৃঙ্খলে বন্দি তাদেরই প্রতিদিনের জীবন।
রাম মন্দির তৈরি হয়েছে কয়েকদিন আগে। ভোটের আগে অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধন রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন মোদী। তাকে ঘিরে সারা দেশে হিন্দুত্ববাদী উন্মাদনার জোয়ার তোলার চেষ্টা হয়েছে এবং ধরে রাখার চেষ্টা চলছে ভোট পর্যন্ত। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব নিশ্চিত নয় তারা। অথচ ভোটে জেতার জন্য পদে পদে ব্যর্থ সরকারকে ভরসা করতে হচ্ছে ধর্মীয় উন্মাদনা ও বিভাজনের উপর। তাই দরকার নতুন কোনও ইস্যু যাকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মেরুকরণের ফায়দা তোলা যাবে। অভিন্ন দেওয়ানিবিধি তেমনই একটি। বিজেপি’র নির্বাচনী ইশ্তেহারে গুরুত্ব পায় এই অভিন্ন দেওয়ানিবিধি। ভারতে নানা ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব রীতি ও আচরণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক আইন আছে। মূলত বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক ইত্যাদি বিষয়গুলি এই আইনের আওতায় পড়ে। হিন্দুদের জন্য যেমন আইন আছে তেমনি আছে মুসলিমদের জন্যও। আছে বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখদের জন্যও আইন। আদিবাসীদের জন্য আছে বহু স্বতন্ত্র আইন। এইসব আইনকে বাতিল করে সকলের জন্য একটি আইন তৈরির কথা বলা হয় অভিন্ন দেওয়ানিবিধি হিসাবে।
মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই হাত দেয় একাজে। ২১তম আইন কমিশন গঠন করে অভিন্ন দেওয়ানিবিধি নিয়ে রিপোর্ট দেবার জন্য। কমিশন দীর্ঘ পর্যালোচনা করে জানায় বর্তমানে অভিন্ন দেওয়ানিবিধির কোনও প্রয়োজন নেই। হাল ছাড়েননি মোদী। গঠন করেন ২২তম আইন কমিশন। ফের দায়িত্ব দেন অভিন্ন বিধির পক্ষে সুপারিশ করার জন্য। এই কমিশন এখনও রিপোর্ট তৈরি করে উঠতে পারেনি। এদিকে লোকসভা নির্বাচন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। তাই কেন্দ্রীয় ভাবে না হলেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে দিয়ে রাজ্য স্তরে অভিন্ন দেওয়ানিবিধি চালু করার কাজে নামিয়ে দেওয়া হয়। একাজে সবার আগে বিধানসভায় বিল পেশ করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। পরে হয়ত অন্যরাও আসরে নামবে ভোটের হাওয়া গরম করতে।
নামে অভিন্ন হলেও আদৌ এই বিল অভিন্ন নয়। বাদ রাখা হয়েছে আদিবাসীদের। মুসলিমদের পারিবারিক আইন বাতিল হিন্দু আইনের বিল আনা হয়েছে। তাতে মুসলিমরা বিরোধিতা করলে মুসলিম বিদ্বেষ ছাড়িয়ে হিন্দু ভোট এক কাট্টা করা যাবে। কেন মুসলিম আইন বাতিল করা হচ্ছে? হিন্দুত্ববাদীদের প্রচার মুসলিমরা চারটে বিয়ে করে চল্লিশটা সন্তানের জন্ম দেয়। তাতে কয়েক বছরের মধ্যে ভারত তাদের দখলে চলে যাবে। এমন বানানো গালগপ্প প্রচার করে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে বহুদিন ধরে। বাস্তবে বহু বিবাহ সব ধর্মের মধ্যেই আছে। সবচেয়ে বেশি আদিবাসীদের মধ্যে। মুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহ চালু থাকলেও দ্রুত হারে সেটা কমছে। বহু বিবাহ হিন্দুদের মধ্যেও আছে। তবে সেটা কমছে ধীর গতিতে। তাই বহু বিবাহ ভিত্তিহীন অজুহাত মাত্র। আসলে লক্ষ্য ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণ।
polarisation for vote
লক্ষ্য হিন্দু ভোটের মেরুকরণ
×
Comments :0