ফের রাস্তায় নামলেন আফগানিস্তানের মহিলারা। তালিবান শাসনে মহিলাদের বদ্ধ করার প্রতিবাদ জানালেন সোচ্চারে। দাবি জানালেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে, হস্তক্ষেপেরও। সবটাই করলেন জেনে যে এরপরই নানা প্রশাসনিক হেনস্তার মুখে পড়তে পারে তাঁদের সবাইকে।
২০২১’র আগস্ট ফের আফগানিস্তানে কায়েম হয়েছে তালিবান শাসন। মারাত্মক আঘাতের মুখে মহিলারা পড়েছেন। বাইরে কোথাও, খেলার মাঠ থেকে ঘোরার পার্ক, যাওয়ার ওপর চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বেরলেই সঙ্গে থাকতে হবে কোনও পুরুষকে।
সেখানেই শেষ হয়নি তালিবানি অনুশাসন। মাধ্যমিক স্তরের স্কুল বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের পড়াশোনার সুযোগ ঘুচিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতি মুহূর্তে হেনস্তার আশঙ্কা, তবু প্রতিবাদ করছেন মহিলারা। আফগানিস্তানের দায়িত্বে রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধিদলের প্রধান রোজা ওটেনবায়েভা আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ‘‘নিয়ম করে এ দেশে মহিলাদের ধাক্কা দিয়ে সরানো হচ্ছে জনবৃত্ত থেকে। এই বৃত্তান্ত যন্ত্রণার।’’
ওটেনবায়েভার সংযোজন, ‘‘মহিলাদের ওপর যা হচ্ছে তাতে কেবল তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। বিপদে পড়ছে পুরো দেশই।’’
বুধবার কাবুলে জনা কুড়ি মহিলার এই প্রতিবাদের আয়োজক আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিক্ষোভে পড়ে শোনানো হয় রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে লেখা আবেদনপত্র। যার এক অংশে বলা হয়েছে, ‘‘মহিলাদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেক হয়েছে, এবার গুরুত্ব দিয়ে আফগানিস্তানের কথা ভাবা উচিত।’’
আফগানিস্তানে এখন বেরতে হলে বোরখায় ঢাকতে হবে মুখ। সরকারি চাকরি যাঁরা করতেন, তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হচ্ছে। বেতনের সামান্য অংশ হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ মহিলাদের।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের অর্ধেক ক্ষুধার্ত। মিলছে না প্রয়োজনী পুষ্টি। তালিবান শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি কোনও দেশ। আন্তর্জাতিক ত্রাণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রায় মিলছে না। সবচেয়ে সঙ্কটে পড়ছেন গরিব, অতি নিম্নবিত্ত পরিবার। মহিলাদের দমনের প্রসঙ্গ চলে আসছে ত্রাণ আটকানোর যুক্তিতেও।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিসন ডেভিডিয়ান বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি কেবল আজকের প্রজন্মকে সইতে হচ্ছে এমন নয়। আগামী কয়েকটি প্রজন্মকে সঙ্কটের মুখে ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
তালিবানের উত্থানে যদিও বিশ্বের বহু অংশের সমালোচনার মুখে পড়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। সেনা পাঠিয়ে দেশ দখল করে পুতুল সরকার বসানো বা সাজানো নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভিত খুঁজে পায়নি, বলছে এই অংশ। তারপর নিজেদের খরচ বাঁচাতে আচমকা সেনাদের গুটিয়ে চলে আসা, তালিবানের জন্য ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়ার নীতির প্রতিবাদও রয়েছে বিশ্বের বহু স্তরে।
Comments :0