গত ১৬ জুন ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ উদ্ধার হয়েছে। ইঞ্জিনের শব্দের মধ্যেও পাইলটদের কথোপকথন, রেডিও ট্রান্সমিশন, ককপিটের অন্যান্য শব্দ রেকর্ড হয় ওই যন্ত্রে। দুর্ঘটনার তদন্তে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১২ জুন দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাটিতে ধপ করে নেমে এসেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮। তারপরও সতর্ক না হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দেয় আমেদাবাদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু’কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাইলটের ‘মে ডে কল’ এবং আকাশে ওড়ার আগেই বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘানিনগরে এক মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ ঘেঁষে ভেঙে পড়ল বিমানটি। বিকট শব্দ, সঙ্গে দাউদাউ আগুনে জ্বলে গেল চারপাশ। মাটি থেকে তখন বিমানটি মাত্র ৮২৫ ফুট উঁচুতে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে বৃহৎ বিমান-দুর্ঘটনা এটিই। বিমানে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী ছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকের বেঁচে যাওয়ার খবর মিললেও এই ভয়াবহতায় বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। শুধু বিমান যাত্রী নয়, যে হস্টেলের উপর বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানকার পাঁচ আবাসিক প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন অনেকে। হস্টেলের ডাইনিং হলে অনেকেই তখন খাচ্ছিলেন। কেউ বা পড়ছিলেন, কেউ কথা বলছিলেন বাড়িতে। শুক্রবার সকালে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে উদ্ধার হয় ভেঙে পড়া বিমানের একটি ব্ল্যাকবক্স। ‘ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ পাওয়া যায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় বিমান যাত্রী, দু’জন পাইলট, দশ জন ক্রু সদস্য ছাড়াও ওই হস্টেলের পাঁচ জন চিকিৎসক পড়ুয়া সহ আরও ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বের প্রথম বোইং বিমান ভেঙে পড়া এবং ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ ও বৃহৎ বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্টভাবে বলতে পারছে না কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। তবে স্থানীয় এক কিশোরের বিমান ভেঙে পড়ার ভিডিও দেখে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকমের জল্পনার কথাই বলছেন। পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়েছে বলে প্রথম থেকে একটি তত্ত্ব খাড়া করা হয়। কিন্তু ভিডিও খতিয়ে দেখেও কোনও পাখির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। আবার একইসঙ্গে দু’টি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও চূড়ান্ত ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাইলট যখন মে ডে কল দিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, শক্তি পাচ্ছি না। ভিডিও’তেও দেখা গিয়েছে যে, বিমানটি উপরে ওঠার চেষ্টা করলেও পারছিল না এবং দুর্ঘটনার পর একমাত্র জীবিত বিশ্বাস কুমার রমেশও জানিয়েছেন, আচমকাই সবুজ আলো জ্বলে উঠেছিল। খুব জোরে শব্দও হয়। এর থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কনসোলের ঠিক পিছনে থাকা র্যাুট বা বায়ু টারবাইন কাজ কারছিল না।
Comments :0