Trump Conviction

ঘোষিত অপরাধী মার্কিন রাষ্ট্রপতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত, আধুনিক, অগ্রগণ্য এবং সুসভ্য জাতি বলে যাদের অভি‍‌হিত করা হয় সেই আমেরিকায় কয়েকদিন বাদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চলেছেন একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ এবং ধর্ষক। গত নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব বিরোধীদের বা অন্য কারোর তোলা নিছক কোনও অভিযোগ নয়, একেবারে মার্কিন আদালতে প্রমাণিত সত্য। আদালত সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচার করে ট্রাম্পকে দোষী অর্থাৎ অপরাধী সাব্যস্ত করেছেন। তবে যেহেতু তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসাবে ২০ জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তাই রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা রক্ষার খাতিরে আদালত তাঁকে অপরাধী ঘোষণা করলেও সাজা দেয়নি বা জেলে পাঠায়নি। মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা এমনই যে সেই পদে একজন দাগী অপরাধী বসতে পারে। আদালতের বিচারে অপরাধী প্রমাণিত কোনও অপরাধী রাষ্ট্রপতি হলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা হানি হয় না। অর্থাৎ আমেরিকা দুনিয়ার সামনে এই বার্তা দিয়ে দিল মার্কিন সমাজে ন্যায়, সততা, মূল্যবোধ বলে কোনও কিছুর মূল্য নেই। সেই অধঃপতিত মার্কিন সমাজে দাগী অপরাধীরা রাষ্ট্রনায়ক হয়ে দেশ ও সমাজকে নিজের মতো করে পরিচালনা করতে পারেন। বিশ্বে একমাত্র আমেরিকাই বোধহয় প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো দাগী অপরাধী যাদের জেলে থাকার কথা তাদের জেলে না পাঠিয়ে সসম্মানে হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রপতির সিংহাসনে বসতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনও ছোটখাট আসামি নন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সীমা-পরিসীমা নেই। হেন অপরাধ নেই যা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও সময় ওঠেনি। সদ্য যে মামলায় তিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ধর্ষণ ও দুর্নীতি জালিয়াতির ঘটনায়। ২০১৬ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি হবার আগে নেভাদার এক হোটেলে মার্কিন পর্ণ তারকার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। তারপরই যাতে ঐ তারকা ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আনেন তার জন্য তাঁকে ট্রাম্প ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার দেন। এটা ছিল মুখ বন্ধ রাখার উপঢৌকন। ভাবা যায় ভোট প্রচারের সময় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হোটেলে ফুর্তি করছেন পর্ণ তারকার সাথে। যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার দেওয়া হয় সেটা জোগাড় করেছেন নিজের ব্যবসা থেকে জাল-জুয়াচুরি করে। এরপর তিনি ভোটে জিতে চার বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ২০২০ সালে পরবর্তী ভোটে হেরে গেলেও তা মেনে নেননি। জোর করে হোয়াইট হাউস দখল করতে তাঁর অনুগামীদের উসকে দিয়ে পা‍ঠিয়েছিলেন। ফলে রীতিমতো দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবার আবার সেই ট্রাম্পকেই মাথায় তুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনীরা রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন। কালে কালে মার্কিন সমাজ ও সভ্যতার যে কত অধঃপতন ঘটেছে এটা তারই নমুনা। পুঁজিবাদী বিকাশের এটাই যে পরিণতি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুঁজি ও তার মুনাফার পাকচক্রে মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, ন্যায়, জীবনবোধ সবই বিলীন হয়ে যায়। এই সমাজের কাছে মানব সভ্যতার পাবার কিছু নেই, শুধু হারাবারই আছে। বিশ্বের সর্বোন্নত পুঁজিবাদী দেশই প্রমাণ করে দিচ্ছে সমাজতন্ত্র ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই।

Comments :0

Login to leave a comment