অভীক ঘোষ
ঘূরণিঝড় দানা’র হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে চুঁচুড়ায় কেটে ফেলা হচ্ছে ধান। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ২৩ অক্টোবর, বুধবার ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। তারপর ক্রমে তা উত্তর-পশ্চিম দিকে ওডিশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগোবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। রাতে তা আছড়ে পড়ার কথা। তবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র যাত্রাপথ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দানা’র ঝাপটা থেকে উপকূলবর্তী মানুষের বাঁচাতে সোমবার থেকেই পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত কলকাতায় আপাতত বৃষ্টির সতর্কতা নেই। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামেও। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলাগুলিতে বুধবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। এছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের আর কোনও জেলায় আপাতত আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের আবহে উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বাকি জেলায় তেমন বৃষ্টি সম্ভাবনা নেই।
ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে দূর্যোগ আশঙ্কা রয়েছে হুগলিতেও। ঝোরো হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হতে পারে পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের। ঘূর্নিঝড় দানা আসার আগেই সতর্কতা, ফসল বাঁচাতে চলছে প্রচার, নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছে প্রশাসন। রয়েছে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। রাজ্য সরকারের কৃষি দপ্তর কৃষকদের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে ফসল দ্রুত কেটে নিতে। কাটা ধান জমিতে ফেলে না রেখে দ্রুত খামারে তুলে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে কৃষকদের। পেঁপে, কলা, বিভিন্ন সব্জি, পানের বরজ এবং ডাল শস্যের জমিগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি-না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। হুগলি জেলার কৃষি দপ্তর থেকে মাইক প্রচার করে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের উদ্দেশ্যে এই প্রচার করা হচ্ছে এবং লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। খারিফ মরসুমে এক লক্ষ সাতাশি হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে হুগলি জেলায়। অনেক জমির ধানে পাক ধরলেও এখনো ধান কেটে গোলায় তোলার মত সময় হয়নি বহু জমির ধান। তাই চিন্তায় কৃষক। কাঁচা সবজিতেও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে ঝড়ে। অন্যদিকে গঙ্গা তীরবর্তী বাসিন্দাদের ঝড়ের আগে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য মাইক নিয়ে প্রচার করে পুলিশ ও পৌরসভা।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে গঙ্গার পারে যারা দূর্বল বাড়িতে বসবাস করেন তাদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন স্কুল ঠিক করে রাখা হয়েছে সেখানে বাসিন্দাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।
বাসিন্দারাও জানান, তারা সতর্ক আছেন। ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাবেন তারা।
কৃষি ক্ষেত্র ও গঙ্গা পারের মানুষের পাশাপাশি নতুন করে নির্দেশিকা জারি হয়েছে স্কুল গুলির ক্ষেত্রে। হুগলি জেলার পাশাপাশি রাজ্যের আটটি জেলাকে ২৩ অক্টবর থেকে ২৬ অক্টবর পর্যন্ত স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তর থেকে।
হুগলি জেলা কৃষি দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব নির্ণয় কর জানান, ‘‘ঝড়ের প্রভাবের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় প্রচার শুরু করেছি। জেলায় এক লক্ষ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এক লক্ষ ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন ধান চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের কাছে অনুরোধ করেছি যে ধান বেশিরভাগটা পেকে গেছে তা ইতিমধ্যেই কেটে ফেলার জন্য। জমিতে ধান না ফেলে রেখে তা অবিলম্বে ঘরে তুলে ফেলতে হবে। যে যে জমিতে ধানের শীষ সবে মাত্র বেরিয়েছে তার ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি এও আমরা মাইকিং এ বলেছি জমির জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করতে হবে যেন জল না দাঁড়াতে পারে। সবজি চাষের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’
Cyclone Dana
দানা’র আশঙ্কায় হুগলিতে কাটা হচ্ছে ধান
×
Comments :0