ঘোষণা করেছেন, তবে প্রয়োগ করতে যাবেন না। ব্রাসিলিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে বোলসোনারোর অনুগামীদের তাণ্ডবের মুখ্য বার্তা এটিই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ কোনও কোনও অংশ এভাবেই ব্যাখ্যা করছেন ব্রাসিলিয়ায় তাণ্ডবকে।
লুলা দ্য সিলভার শপথের আটদিনের মাথায় হয়েছে উন্মত্ত ভিড়ের হামলা। উগ্র দক্ষিণপন্থী জেয়ার বোলসোনারো রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ফ্লোরিডার হাসপাতালে ভর্তি বোলসোনারোকে মঙ্গলবার ছাড়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ব্রাজিলে তাণ্ডবের পর বোলসোনারোর আমেরিকায় থাকা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। খুব কম হলেও কেউ কেউ চিঠিও পাঠিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে। জানুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই ‘দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা’ ঘোষণা করেছেন বোলসোনারো।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং লেফটওয়ার্ড বুকসের সম্পাদক বিজয় প্রসাদ বলছেন, বামপন্থী লুলা যে নীতি অভিমুখ ঘোষণা করেছেন শপথ নেওয়ার পরই, তাতে শঙ্কিত ব্রাজিলের বিত্তশালী অংশ। লুলা নীতি প্রয়োগ করলে মার খাবে এই অংশের মুনাফা। ৮ জানুয়ারির তাণ্ডবে তাদের মদত রয়েছে। ‘নিউজক্লিক’ ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে বিজয় প্রসাদ বলছেন, লুলাকে শাসিয়ে রাখতে চাইছে বিত্তশালীরা। সে জন্যই নামানো হয়েছে দাঙ্গাবাজদের।
ব্রাসিলিয়ায় যদিও তাণ্ডবের পর হয়েছে মিছিল। স্লোগান উঠেছে, ‘গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারের শত্রুদের কোনও ক্ষমা নয়।’ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও করেছেন লুলা নিজে। বস্তুত কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ শুরুও হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন শুরু।
বোলসোনারোর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ঝুলে রয়েছে। বহু অভিযোগ রয়েছে তাঁর প্রশাসনের কর্তাদের বিরুদ্ধেও। কিন্তু বিজয় প্রসাদ বলছেন, ‘‘লুলার নীতি সংস্কার চালু হলে একচেটিয়া বিত্তশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কৃষিব্যবসা সমস্যায় পড়বে।’’ বস্তুত ব্যবসার সমস্যা নয়, সমস্যা হবে বেপরোয়া মুনাফা লুটের যন্ত্রে। এই যন্ত্রের একটি অংশ আমাজনে পরিবেশবিধির তোয়াক্কা না করে সবুজ ধ্বংস। বহুজাতিক কৃষি এবং প্রাণিজ সম্পদ ব্যবসাও এই ধ্বংসের শরিক। বোলসোনারো রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে মুনাফার ব্যবস্থা আগলাতেন। লুলার জয়ে শঙ্কিত এই অংশ।
অক্টোবরে জয়ের পরই লুলা বলেছেন, আমাজন আর কিছুতেই ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। রক্ষা করতে হবে প্রকৃতিকে, আদি বাসিন্দা জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে।
বলসোনারো ৩০ অক্টোবর, ২০২২-এ লুলার কাছে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আগে, লে মন্ডে ডিপ্লোম্যাটিক ব্রাসিল বলেছিল যে ব্রাজিল "বোলসোনারো ছাড়াই বলসোনারিজম" দেখতে চলেছে। ব্রাজিলের চেম্বার অফ ডেপুটিজ এবং সেনেটের বৃহত্তম ব্লকের রাজনৈতিক দলটি হল অতি-ডানপন্থী লিবারাল পার্টি, যেটি রাষ্ট্রপতি থাকার সময় বোলসোনারোর রাজনৈতিক ধারক বাহক হিসাবে কাজ করেছিল। নির্বাচিত সংস্থাগুলি এবং সোশ্যাল মিডিয়া উভয় ক্ষেত্রেই ডানপন্থার বিষাক্ত বাতাস থেকে গেছে ব্রাজিলে।
ব্রাজিলে সরকারি পেট্রোলিয়াম সংস্থা ‘পেট্রোব্রাস’ কিভাবে চলবে জানিয়েছেন লুলা। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বজায় রেখে জৈব-জ্বালিন, সার এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনে জোর দেবে এই সংস্থা। ব্রাজিলের অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, মনে করছে এসপি গ্লোবাল। কিন্তু ফাটকা মুনাফা নির্ভর ধান্দার ধনতন্ত্র খুশি নয়। ফলে বাধা আসবে।
Comments :0