মূলত বামপন্থীদের চাপে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে প্রথম ইউপিএ সরকার অন্যান্য অনেক সমাজকল্যাণ ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের মতো চালু করেছিল রেগা প্রকল্প। গ্রামের গরিব কৃষক, খেতমজুররা যাদের সারা বছর কাজ থাকে না, তাদের জন্য বছরে অন্তত ১০০ দিন সরকারি উদ্যোগে কাজ দেবার দাবি বামপন্থীরা বহুকাল ধরে করে আসছে। ভারতে কৃষি ব্যবস্থা যেহেতু প্রধানত বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভরশীল, পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা নেই, তাই সারা বছর চাষের সুযোগ থাকে না। যেখানে সেচের ব্যবস্থা আছে কেবলমাত্র সারা বছর কাজ মেলার সম্ভাবনা থাকে। আবার গ্রাম-ভারতের বিপুল জনসংখ্যার চাপ কৃষির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই কৃষি গ্রামীণ জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশের রুজির বন্দোবস্ত করতে পারে না। কৃষি ছাড়া অন্যান্য কাজে কিছু কর্মসংস্থান হয় বটে তবে সেটাও পর্যাপ্ত নয়। তা গ্রামীণ ভারতের মানুষ কার্যত তিন থেকে চার মাস কর্মহীন থাকেন। এই কর্মহীনতাই গ্রাম ভারতে দারিদ্রের অন্যতম প্রধান কারণ। বামপন্থীরা গ্রামীণ দারিদ্র নিরসনে গ্রামের কর্মহীনদের জন্য কাজে বন্দোবস্ত করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। যতদিন না গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সেই জায়গায় পৌঁছায় ততদিন কর্মহীন মানুষের জন্য ন্যূনতম মজুরির বিনিময়ে কাজের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে যাতে তারা দারিদ্রের অতলে তলিয়ে না যায়। রেগা তথা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের ভাবনা এই জায়গা থেকেই।
অতীতে বামপন্থীদের এই দাবিকে কোনও সরকারই বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু প্রথম ইউপিএ সরকার পুরোপুরি বামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই প্রকল্প চালু না করে তাদের উপায় ছিল না। বামপন্থীরা শুধু এই প্রকল্প চালু করিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আইন করে কাজ দেওয়া বাধ্যতামূলকও করিয়েছে। অর্থাৎ এই প্রকল্পে কেউ কাজ করতে চাইলে সরকার তাকে কাজ দিতে বাধ্য। যে কোনও কর্মপ্রার্থীকে বছরে ন্যূনতম ১০০ দিন কাজ দিতে সরকার আইনিভাবেই বাধ্য। বামপন্থীরা অনুরূপ প্রকল্প শহরাঞ্চলের জন্য চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার কিছুতেই তাতে রাজি হয়নি।
এটা ঠিক প্রকল্প চালু হলেও প্রত্যাশিত বরাদ্দ হয়নি এবং চাহিদা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়নি। এতদ্সত্ত্বেও এই প্রকল্প গ্রামের মানুষের বিপন্নতা অনেক কমিয়েছে। গ্রামীণ বাজারে চাহিদা বাড়ায় ভোগ্যপণ্য শিল্পের পশার বেড়েছে। গ্রামীণ দারিদ্র কমেছে। দরিদ্রের সংখ্যা হ্রাসের যে দাবি সরকার করে থাকে তার পেছনে অন্যতম ভূমিকা এই প্রকল্পের।
একেবারে প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে একদা একে মাটি খোঁড়ার প্রকল্প বলেছিলেন। একে কংগ্রেসের ব্যর্থতার স্মৃতি সৌধ বলে হাসিঠাট্টা করেছিলেন। কিন্তু মোদী জমানায় জনসংখ্যার দারিদ্রসীমার ওপরে ওঠার যে গল্প শোনানো হয় তার পেছনে আছে মাটি খোঁড়ার প্রকল্পের অবদান। করোনার সময় দেশের কোটি কোটি মানুষ বেঁচে গিয়েছেন এই প্রকল্পের জন্যই। এতদ্সত্ত্বেও মোদী সরকার এই প্রকল্প তুলে দিতে লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেটা না পেরে বছর বছর বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে কাজের চাহিদার ৫০ শতাংশও মিলছে না। বর্তমান গ্রাম চাহিদার যে বিপুল হ্রাস, মানুষ অর্থাভাবে যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না তার মূলে মোদী সরকারের রেগা প্রকল্প নিয়ে উদাসীনতা ও উন্নাসিকতা। যেহেতু এটা মনমোহনের সময়ের প্রকল্প তাই মোদী জমানায় তার অস্তিত্ব লোপাটই লক্ষ্য।
MGNREGA
প্রধান সহায় মাটি খোঁড়ার প্রকল্প’
×
Comments :0