ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলার এক শ্রমিকে খুন হতে হল। এমনই দাবি করছে মৃত শ্রমিকের পরিবার। মৃতের নাম সুশান্ত রায়(২৮)। ধূপগুড়ি বারঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভেমটিয়া এলাকার বাসিন্দা। শ্রমিকের মৃত্যু সংবাদ তাঁর বাড়িতে পৌঁছয় রবিবার গভীর রাতে। রাতেই ছেলের খুন হবার খবর পেয়ে বুক চাপরে কেঁদে কেঁদে বাবা বলছেন নিজের জায়গায় যদি কাজ মিলত তাহলে জোয়ান ছেলেটাকে আজ হারাতাম না। বাড়তি উপার্জনের আশায় দুমাস আগে বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল সুশান্ত। টাকা উপার্জন করে বাড়ি ফিরে বিয়ে করবে বলে পরিকল্পনা ছিল তাঁর। গতকাল পরিবারের কাছে নয় হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল সে। এমনটাই দাবি করেছেন পরিবার। তবে বিয়ের স্বপ্ন আর পূরণ হলো না প্রাণ গেল নিরীহ যুবকের। মৃতের পরিবারের দাবি, স্বাভাবিক নয় মৃত্যু নয়, তাঁকে খুন করা হয়েছে।
সোমবার সকালে পুত্র শোকের হাহাকার আর যন্ত্রণা বিদ্ধ মনের ক্ষোভ উগরে বললেন, এই রাজ্যে কাজ থাকলে ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হতো না আমার ছেলে টাকে। মরতেও হতো না।
ধূপগুড়ি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভেমটিয়া গ্রাম। এশিয়ান হাইওয়ে ৪৮ ধরে এগিয়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি যাবার পথে রেল ওভার ব্রীজের সাথে এই ভেমটিয়া গ্রাম একানেই বসবাস করতেন সুশান্ত। রবিবার রাত দু'টা নাগাদ সুশান্তের জামাইবাবু কেরালা থেকে ফোন করে জানান সুশান্তর মৃত্যু হয়েছে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই খবর শোনার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। গ্রাামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সকাল মৃতের পরিবার যোগাযোগ করে ধূপগুড়ি থানায়।
পরিবার সূত্রে খবর, দুমাস আগে কেরালার কাটরাগোট এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ গিয়েছিলেন সুশান্ত। কিছুদিন পরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। সূত্রের খবর রবিবার রাতে ওই সুশান্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আড্ডার আসরে বসে ছিলেন। সেখান থেকে এই গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। তারপর ছুড়ি নিয়ে হামলা করে সুশান্তের উপর। রক্তাক্ত অবস্থায় সুশান্তকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে কেরালা পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
মৃত যুবকের বাবা সুভাষ রায় বলেন,‘‘দুমাস আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য কেরালা গিয়েছিল। টাকা উপার্জন করে ফিরে এসে বিয়ে করবে বলে পরিকল্পনা ছিল। তবে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। রাত দুটো নাগাদ মেয়ে জামাই ফোন করে জানায় সুশান্তকে খুন করা হয়েছে। এই খবর শোনার পর থেকে আর ঘুম হয়নি। আমাদের এখানে কাজ ভালো কাজ পেলে ভিন রাজ্যে যেতনা ছেলেটা।’’
বারঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরে আমরা ছেলেটির বাড়িতে গিয়েছিলাম পরিবারের সাথে কথা বলেছি। শুনতে পেলাম সেখানে খুন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও কথা বলেছি যাতে দেহটি সেখান থেকে ভালো ভাবে নিয়ে আসা যায় বাড়িতে।’’
সিআইটিইউ ভুক্ত নির্মান শ্রমিক সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি তাপস সরকার জানান, ‘‘আমরা নিহত শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সহযোগিতা করতে পাশে থাকার কথা জানাবো। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলে কেরালার শ্রমিক নেতৃত্বের সাথে কথা বলে ন্যায় বিচারের দাবিতে সহযোগিতা নেব। পরিবারটিকে কিভাবে অনান্য দিক থেকে সাহায্য করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
Migrant Worker Dies
ভিন রাজ্যে রহস্য মৃত্যু বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকের

×
Comments :0