অনিল কুন্ডু
গঙ্গাসাগর মেলা শেষ। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলছুট পথ ভোলাদের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ি ফেরাচ্ছে হ্যাম রেডিও। নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হ্যাম রেডিও’র সদস্যরা। ইতিমধ্যেই পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের দুবেপুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নওলা দেবী (৭২), বিহারের কোয়ারিছোটকি গ্রামের বাসিন্দা মিসরিলাল সাহা (৬৮), উত্তরপ্রদেশের সকতপুর গ্রামের বাসিন্দা মুর্খা (৫৭)।
স্বামীর নাম উচ্চারণ করছিলেন না মুর্খা। বললে পাপ হবে। এই আশঙ্কায় বারবার তাঁকে স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করা হলেও বলতে চাননি তিনি। বরং মাথার ঘোমটা টেনে লজ্জায় নিজের মুখ ঢাকা দিয়েছেন। ১৫ জানুয়ারি পাড়ার লোকজনদের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে আসেন। চকফুলডুবি বাফার জোনের কাছে গাড়ি থেকে নিজেই নেমে পড়েন। অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা তাঁকে সাগরের রুদ্রনগর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁকে ফেলে রেখেই মকর সংক্রান্তির স্নান সেরে বাড়ি ফিরেছেন গ্রামের সঙ্গীরা। চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হয় হ্যাম রেডিওকে। সাগরের কর্তব্যরত হ্যাম, পেশায় শিক্ষক দিবস মন্ডল তাঁর সঙ্গে দেখা করে পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। দিবস মন্ডলের কথায়, মুর্খা দেবী তাঁর গ্রামে একটি শিব মন্দিরের কথা কেবল বলতে পেরেছেন। ওই সূত্র ধরেই আমরা নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওই শিবমন্দিরের পন্ডিতজির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ওই পাড়ার মুখিয়া রেখা সিং’র স্বামী সন্তোষ সিং’র সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানালে তাঁর কাছ থেকেই মুর্খা দেবীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের হ্যাম রেডিও’র প্রতিনিধির যোগাযোগ হয়। তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে খবর দেওয়া হয়।
গঙ্গাসাগর মেলায় দলছুট হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নওলা দেবী। তাঁকে মেলায় কর্তব্যরত স্বেচ্ছাসেবকরা গঙ্গাসাগরের অস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা জানার পর যোগাযোগ করা হয় তাঁর বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে। গঙ্গাসাগর মেলা থেকে রওনা দিয়েছিলেন মিসরিলাল সাহা। ১৪ জানুয়ারি রাত ৯ টা নাগাদ মুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসেল দীর্ঘ সময় ধরে চলাচল বন্ধ থাকায় কচুবেড়িয়ায় জেটি ঘাটে ভীড়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বিহারের বাসিন্দা মিসরিলাল সাহা। তাঁকে ইন্ডিয়ান রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করে কচুবেড়িয়ায় অস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাঁকে রুদ্রনগরে ব্লক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হলে তাঁর কাছ থেকে নৈহাটির বাসিন্দা এক আত্মীয়র সন্ধান পাওয়ায় তাঁর ছোট ছেলেকে খবর দেওয়া হয়।
বুধবার রাতে তাঁদের পরিবারের লোকজন সাগর থানায় আসেন। সেখানে থানার কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক সুরেশ চন্দ্র সিংহ ও হ্যাম রেডিওর প্রতিনিধি দিবস মন্ডলের উপস্থিতিতে তাঁদের সকলকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখনো গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন গ্রামে পথভোলা দলছুট যাত্রীরা ঘুরছেন। গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন যাত্রীদের। তাঁরাও মেলা শেষে ফিরে গেছেন। খাবারের খোঁজে পথভোলা যাত্রীরা আপন মনে গ্রামের ভিতরে ঘুরছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর দেওয়া হচ্ছে হ্যাম রেডিও, পুলিশ প্রশাসনকে। মেলা শেষ হলেও কাজ করছে হ্যাম রেডিও। তাঁদেরকেও যে ফেরাতে হবে। এমনটাই এদিন জানালেন দিবস মন্ডল।
Comments :0