বাংলার সর্বনাশ করার পাশাপাশি সিপিআই(এম)কে শেষ করার জন্য মমতা ব্যানার্জিকে অমিত শাহ ঠিকা দিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবাংলাতে লাল ঝান্ডার মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। কী করা যাবে, সেটা স্থির করতে তাই অমিত শাহ এসে মমতা ব্যানার্জির সাথে একান্তে পরামর্শ করে গেলেন। শনিবার বরানগরের বিরাট জনসভায় একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও দেখা যেত কোথাও সিপিআই(এম)’র জনসভা হলে, মমতা ব্যানার্জির দল সেখানে তাদের ঝান্ডা লাগিয়ে ভরিয়ে দিতো। এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দলের সভাতেই ঝান্ডা লাগানোর লোক হচ্ছে না। অপরদিকে যে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, লাল ঝান্ডা মুছে দেবেন, এখন তিনি নিজে তৃণমূলের ঝান্ডা ছেড়ে বিজেপি-তে এসে সেখানেও ঝান্ডা ধরার লোক পাচ্ছেন না।
দুর্নীতিরাজ, দুর্বত্তায়ন রোধ করো, হকের অধিকার আদায় করো এই আহ্বান জানিয়ে শনিবার বরানগরে সিপিআই(এম) এরিয়া কমিটি ১ এবং ২ এই সমাবেশের ডাক দেয়। বিটি রোড-টবিন রোড মোড়ে এই জনসভায় এদিন ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল উপচে পড়ে। শুরুতে গণসঙ্গীত ও কথা পরিবেশন করেন ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘর সাগ্নিক শাখা এবং কঙ্কন ভট্টাচার্য। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সমাবেশের সভাপতি সিপিআই(এম) নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জি, পার্টিনেতা অশোক ভট্টাচার্য, কিশোর গাঙ্গুলি, শানু রায়। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিলাল মৈত্র, পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ঝন্টু মজুমদার সহ নেতৃবৃন্দ। পার্টির রাজ্য কমিটির তহবিলের জন্য একজন পার্টি দরদির দেওয়া ১০ হাজার টাকা মহম্মদ সেলিমের হাতে তুলে দেওয়া হয় সমাবেশ শেষে।
এদিন অমিত শাহ ও মমতা ব্যানার্জির একান্তে বৈঠক প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, দেখা গেল সভা ঘর থেকে ভিআইপি পর্যন্ত সামান্য পথ পার হতে অমিত শাহ তাঁর গাড়িতে তুলে নিলেন মমতা ব্যানার্জিকে। গাড়িতেই আসল আলোচনা হয়েছে, যাকে বলা যায় ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’। এখন এভাবেই এগজিকিউটিভ প্লেনে, গাড়িতে একান্তভাবে অপরাধ জগতের ডিল হয়ে থাকে। এঁরা কেউ লিডার নন, আসলে এঁরা ডিলার। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ডিসেম্বরের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাকে তীব্রভাবে ব্যঙ্গ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, আসলে এগুলি রাজনৈতিক জুয়া খেলা। মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘খেলা হবে’ ঘোষণা করেও সেভাবে খেলার লোক হয়নি তৃণমূলে, কার্নিভাল রাজনীতি করেও তৃণমূলকর্মীদের সাড়া মেলেনি কারণ সব খেলার পর্দা ফাঁস হয়ে গেছে। কেলেঙ্কারিতে নেতা, মন্ত্রীরা ধরা পড়ছেন। কিছুদিন আগে হঠাৎই অভিষেক ব্যানার্জিকে দিয়ে বলানো হলো নতুন তৃণমূল হবে। সকলেই বুঝে গেছেন সেটা হচ্ছে আসলে নতুন বোতলে পুরানো তৃণমূল। ভাইপো সহ তাদের রক্ষা করে বাঁচতে একদিকে বারবার দিল্লি গিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে বলতে হচ্ছে ‘দাদা তোর পায়ে পড়ি রে’। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের দায়ের করা মামলাতে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করায় একের পর এক দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি সামনে চলে আসাতে মুখ্যমন্ত্রী নির্লজ্জের মতো, সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন।
এদিন মহম্মদ সেলিম সমাবেশে বলেন, গ্রামে গ্রামে মানুষ এখন হিসাব চেয়ে প্রশ্ন করছেন, কত পেলে, আর কত খেলে আর কী দিলে সেটা প্রকাশ্য গ্রাম সভাতে বলতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি থেকে অঞ্চলে প্রধানরা তৃণমূলের নেতারা দোতলা তিনতলা বাড়ির মালিকরা আবাস যোজনা থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষের অন্য সব হকের পাওনা যেভাবে লুট করেছে তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা দাবি করেছি কেন্দ্রের কাছে কোন খাতে কতো বকেয়া আর রাজ্যের কাছে কোন খাতে কত খরচের হিসাবের কি বকেয়া আছে তাই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে । মূল্যবৃদ্ধি বেকারত্বের তীব্র বিরোধিতা এখন আর এই সব দাবি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস আন্দোলন করে না তারা এখন নিজেদের বাঁচাতে আদালতে যেতে ব্যস্ত।
মীনাক্ষী মুখার্জি সমাবেশে বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম বাংলার গ্রামীণ মানুষ সংগ্রামের জন্যে তৈরি। তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে কুকুরের ডায়ালিসিস হয়নি, বামফ্রন্ট সরকার দু’টাকার টিকিটে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। এখন স্বাস্থ্যসাথীর ভাঁওতা আছে বড় অসুস্থতার জন্যেও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সমাবেশে বলেন, এই তৃণমূল সরকারকে কী ওষুধ দেবেন, কী পথ্য দেবেন সেটাই এখন রাজ্যের মানুষকে স্থির করতে হবে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে এসএসসি পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও শিক্ষা প্রসারের কথা তুলে ধরেন মীনাক্ষী মুখার্জি। মিড ডে মিল এবং শিক্ষাখাতে বামফ্রন্ট সরকারের বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি শিক্ষা কেলেঙ্কারির কথা, চাকরির অভাবে গ্রাম শহর থেকে বাইরে চলে যাওয়ার এবং বেঁচে থাকার জন্যে কঠিন সংগ্রামের উদাহরণ তুলে ধরে বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনগুলি বাজার থেকে সরে যাচ্ছে ।
সমাবেশে তন্ময় ভট্টাচার্য তীব্র মূল্যবৃদ্ধি ও নজিরবিহীন দুর্নীতির কথা, লালন শেখের রহস্যজনক মৃত্যুর কথা তুলে ধরে বলেন, লালন শেখের মৃত্যু না হলে অনুব্রত মণ্ডলের অপরাধ কবুলের সম্ভাবনা সহজ হতো। সেটিং করার প্রশ্ন উঠেছে এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে তুলে ধরে বরানগরে তৃণমূলীদের দৌরাত্ম্যের ঘটনার উল্লেখ করেন তন্ময় ভট্টাচার্য। দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।
Comments :0