RSS BJP

মনগড়া ভণ্ডামি

সম্পাদকীয় বিভাগ

কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আরএসএস-বিজেপি সরকার গোড়া থেকেই নাগরিকত্বের প্রশ্নে জল ঘোলা করে চলেছে। তার সেই ঘোলা জল থেকেই তুলতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী বিভাজনের ও উগ্র জাতীয়তাবাদের রাজনীতির উপাদান। মূলত সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করেই তাদের নাগরিকত্বের রাজনীতি আবর্তিত হয়। জনমানসে, বিশেষ করে তথাকথিত হিন্দুদের মনে ভীতি, উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি করে তাদের কৌশলে মুসলিম বিদ্বেষী করে তোলাই সঙ্ঘ পরিবারের ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির অঙ্গ। সেজন্য তারা ভুলভাল মনগড়া তথ্য হাজির করে লাগাতার প্রচার করে যে মুসলিমদের জন্মহার বেশি। তাই দেশে মুসলিম জনসংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। এইভাবে চলতে থাকলে নাকি দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। তারা এমন প্রচার করে থাকে যে মুসলিমরা একাধিক বিয়ে করে বলে তাদের সন্তান সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। সঙ্ঘ পরিবারের আইটি সেল এবং কিছু অন্ধ হিন্দুত্ববাদী লেখক এই মর্মে প্রচার চালায়। বাস্তবে তাদের এই সব প্রচারের সঙ্গে কোনরকম সরকারি-বেসরকারি তথ্য পরিসংখ্যান, সমীক্ষা রিপোর্ট বা গবেষণাপত্রের কোনও মিল পাওয়া যায় না। মানুষকে বিভ্রান্ত করার হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রেরই এটা অঙ্গ। জনগণনার রিপোর্ট এবং অন্যান্য রিপোর্ট  থেকে পরিষ্কার গত বেশ কয়েক দশক ধরেই সার্বিকভাবে মহিলাপিছু গড় সন্তান জন্মের হার কমছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো  সাম্প্রতিককালে হিন্দুত্বের তুলনায় এই কমার হার মুসলিমদের বেশি। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিতে মুসলিমদের থেকে হিন্দুরা এগিয়ে। সত্য এটাই মুসলিম সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে না এবং মুসলিমদের  সংখ্যাগুরু হবার কষ্টকল্পনা অলীক স্বপ্ন মাত্র।


আর একটি প্রচার হিন্দুত্ববাদীরা জোরালোভাবে করে থাকে, তা হলো প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নাকি দলে দলে মুসলিমরা ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে নাকি  বাংলাদেশি মুসলিম মানুষ ছেয়ে গেছে। এমন এক প্রচার আসামেও বহুকাল ধরে চলছে। সেখানে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করে দেখা গেছে বাদ পড়া প্রায় ১৯ লক্ষের মধ্যে অল্প সংখ্যক মুসলিম। যদিও তাদের কেউই আদতে অনুপ্রবেশকারী নন। পশ্চিমবঙ্গেও অনুরূপ প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশকারী সন্ধানের লাগাতার হুমকি চলছে।
প্রশ্ন হলো একদা বাংলাদেশ হতদরিদ্র দেশ থাকলে বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে বেশি। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের হার ভারত থেকে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ থেকে এখন ভারতে আসার যৌক্তিকতা ক্ষীণ। তাছাড়া অনুপ্রবেশকারী নাগরিক হয় না। নাগরিক না হলে কোনও সরকারি সুযোগসুবিধা মেলে না। অনিশ্চিত জীবনই নিশ্চিত।
তেমনি সরকারি তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতের নাগরিকত্ব চায় যত  বিদেশি তার থেকে শতগুণ বেশি ভারতীয় বিদেশি নাগরিক হয়। অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার বদলে ছাড়ার প্রবণতাই ‍মোদী জমানায় প্রবল। তাই মিথ্যা গল্প ফেঁদে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই শ্রেয়।

Comments :0

Login to leave a comment