তৃণমূলের দমবন্ধ করা শাসন থেকে বিজেপি এসে মুক্তি দেবে, এমন প্রচারের শিকার না হওয়ার আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শনিবার হাওড়ার শ্যামপুরের বরদাবাড়ে লেনিন বিদ্যাপীঠ স্কুলে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের হাওড়া জেলা দ্বিতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশে এই সতর্কতার কথা বলেছেন সেলিম। এদিন তিনি বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই কিছু দালাল মিডিয়া এমন প্রচার করবে, যেন রাজ্যের এই দমবন্ধ অবস্থা থেকে বিজেপি এসে মুক্তি দেবে। ওদের দুই দলের নেতাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এই দলে জিতে ওই দলে চলে গিয়েছেন। যাঁরা ভেবেছিলেন এক শয়তানকে হঠাতে আরেক শয়তানকে লাগবে, তাঁরাই এখন আফসোস করছেন— দুই শয়তান এসে গিয়েছে, মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে।
মহম্মদ সেলিম এদিন সমাবেশে বলেছেন, ভোট এলে কিছু মোল্লা-মৌলবী মুসলমান পাড়ায় গিয়ে বলবেন, বিজেপি যা করছে, তাতে তৃণমূল ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। আরেক দল হিন্দুদের মধ্যে গিয়ে প্রচার করবে, তৃণমূল থেকে বাঁচার জন্য বিজেপি-কেই দরকার। ঘাসফুল আর পদ্মফুলের লুটেরাদের রাজত্ব চলবে এভাবে? রাজ্যে লাল ঝান্ডার সরকার যত দিন ছিল, তত দিন বিজেপি মাথা তুলতে পেরেছিল? এখন রাজ্যে এত বিজেপি এল কোথা থেকে? স্কুল এবং মাদ্রাসা দুটোতেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে। হিন্দু-মুসলমানের জন্য গ্যাসের দাম কি আলাদা? মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধেও একসঙ্গে লড়তে হবে। বিজেপি মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কেন্দ্রে মোদীর লুট, আর রাজ্যে দিদির লুট, মানুষের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকার মানুষকে যে অধিকারগুলো দিয়েছিল, এখন সেগুলোও লুট করে নিচ্ছে।
শনিবার শ্যামপুরে এই সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ, কৃষক নেতা পরেশ পাল, সংগঠনের জেলা সভাপতি সন্তোষ অধিকারী, সম্পাদক অশোক দলুই, শহীদ ছাত্র নেতা আনিস খানের বাবা সালেম খান। সভাপতিত্ব করেন সন্তোষ অধিকারী। সম্মেলন রবিবার পর্যন্ত চলবে।
সভায় সেলিম বলেছেন, কিষাণ মান্ডির নাম করে মোদী-মমতা কৃষকদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে পারছেন না, দাম পাচ্ছেন না। দালালদের কাছে ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষ প্রাপ্য ভাতা পাচ্ছেন না, কাজ পাচ্ছেন না। যাঁর কাজ পাওয়ার কথা, তাঁর জব কার্ড নেই। যাঁর জব কার্ড আছে, তিনি কাজ পাচ্ছেন না। যে কাজ করেনি, তার নামে টাকা ঢুকে যাচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে শুধু মানিক ভট্টাচার্য? মমতা ব্যানার্জির আমলে পাড়ায় পাড়ায় এরকম অনেক মণিমানিক্য ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূলের যে নেতারা সাইকেল চড়তেন, এখন তাঁরা দামি স্করপিও গাড়িতে ঘুরছেন। মমতা ব্যানার্জি হেলিকপ্টারে ঘুরছেন, আর তাঁর ভাইপো জেট প্লেনে ঘুরছেন। বামপন্থীরা রাস্তায় নেমে চোর ধরো বলতেই তৃণমূল রেগে যাচ্ছে। কেন? মানুষের চোখে ওরা ধরা পড়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে যদি পুলিশ গুণ্ডা ধরার বদলে তৃণমূলের অপরাধীদের পাহারা দেয়, তাহলে পুলিশও অপরাধের দায় এড়াতে পারবে না। ঝান্ডা মজবুত করতে তার ডান্ডাকেও মজবুত করতে হবে। যে হাত কাস্তে ধরতে জানে, হাতুড়ি ধরতে জানে, সেই হাত এগনোর জন্য প্রয়োজনে নিজেদের রাস্তাও তৈরি করে নিতে জানে। লাল ঝান্ডাই মানুষের হক আদায়ের জন্য লড়াই করছে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের হাতে পুলিশ খুন হলে আমরা তাতেও ইনসাফ চাই, পুলিশের হাতে আনিস খুন হলে তাতেও ইনসাফ চাই।’’
সেলিম বলেন, লাল ঝান্ডা গরিব মানুষের অধিকারের কথা বলে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজের অধিকার, ১৪টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যকে এক দামে সরবরাহের কথা বলে। সারা দেশে লাল ঝান্ডা কমজোর হওয়ায় কমজোর হয়েছেন গরিব মানুষ। তাঁদের হকের অধিকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই চালাচ্ছে লাল ঝান্ডা।
সভায় তুষার ঘোষ বলেন, এই রাজ্যে ধান উৎপাদন কমেছে। ধানের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে আগামী দিনে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায় বহু কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে কৃষক-খেতমজুরদের স্বার্থরক্ষার জন্য যে ব্যবস্থাগুলি ছিল, বর্তমান সরকার সেগুলি ধংস করছে। এদিনই সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন তুষার ঘোষ। সন্তোষ অধিকারী, নিরঞ্জন পাত্র, নবীন ঘোষ ও মাধবী মালিককে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সম্মেলনের কাজ পরিচালনা করছে।
Comments :0