SURYA MISHRA on TWO LEADERS

দুই নেতার স্মরণসভায় গণআন্দোলনকে বিকশিত করার আহ্বান মিশ্রের

রাজ্য

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি,

ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতকে রক্ষায় কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি এবং নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পোন্নত বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রয়াত দুই নেতা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে গণআন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সিপিআই(এম)’র জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির স্মরণসভায় একথা উল্লেখ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। রবিবার জলপাইগুড়ি শহরের সরোজেন্দ্র দেব রায়কত কলা কেন্দ্র আর্ট গ্যালারিতে সিপিআই(এম)’র প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। 
এই সভায় সদস্য সূর্য মিশ্র প্রয়াত দুই নেতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, জেএনইউ’র ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সারা দেশের বামপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন প্রকৃতঅর্থেই সর্বভারতীয় রাজনীতিবিদ। আরএসএস-বিজেপি’র দেশজোড়া বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে বাম সহ সমস্ত বিজেপি বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যু ভারতীয় গণতন্ত্র ও সাধারণভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মনন এবং শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী আন্দোলনের কাছে বড় ধাক্কা। ভারতীয় গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্রকে রক্ষার প্রশ্নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি।  
কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণা করে সূর্য মিশ্র বলেন, ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গের বুকে বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এসেছে, কিন্তু সেগুলি অতিক্রম করেই বামফ্রন্ট সরকার মানুষের স্বার্থে কাজ করেছিল। কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন রাজ্যে শ্রমনিবিড় বড় শিল্প কারখানা তৈরি হলে তার অনুসারী শিল্পও গড়ে উঠবে এবং রাজ্যের বুকে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কাজ পাবে। কিন্তু সেটা যাতে না করা যায় তার জন্য সমস্ত বামফ্রন্ট বিরোধী শক্তি একত্রিত হয়েছিল। আজ যখন রাজ্যের হাজার হাজার যুবক যুবতী কাজের তাগিদে ভিনরাজ্যে এমনকি দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন এবং সেখানে কাজ করতে গিয়ে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে বিপদে পড়ছেন, তখন তাঁর প্রচেষ্ঠার গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আজকের দিনের যুবসমাজকে এই বিপদের মধ্যে পড়তে হতো না যদি সেদিন রাজ্যের বুকে শিল্পায়নের প্রচেষ্টা রূপায়িত হতো। 
মিশ্র আরও বলেছেন, কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সমগ্র বাংলার লোকসংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। রাজ্যের উত্তরাংশের নেপালি জনজাতির লোকসংস্কৃতি, ভাওয়াইয়া সঙ্গীত চর্চা, আদিবাসী লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেলা, অনুষ্ঠান সহ সরকারি উদ্যোগ তিনি চালু করেছিলেন।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত দুই নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্টজন, সিপিআই(এম)’র নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য। তিনি বলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যুব আন্দোলন করার সময় থেকেই রাজ্যের অন্যান্য জেলার সাথে জলপাইগুড়িতেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে এবং যুব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে বহুবার এসেছেন। জলপাইগুড়ি শহরের সরজেন্দ্র দেব কলা কেন্দ্র সহ বিভিন্ন জেলায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায় ও বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি শিল্পকলা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনবদ্য।
স্মরণ অনুষ্ঠানে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে প্রস্তাব পেশ করেন পার্টির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ মিশ্র, কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণে প্রস্তাব পেশ করেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য কৌশিক ভট্টাচার্য। স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টি নেতা জীবেশ সরকার, জিয়াউল আলম, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ রায়, সিপিআই নেতা রাহুল হোর, কংগ্রেস নেতা সুভাষ বক্সী, সমাজবাদী পার্টির নেতা কমল কৃষ্ণ ব্যানার্জি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

Comments :0

Login to leave a comment