Citu Conference Last days

বিজেপি সরকারকে হঠানোর ডাক সিআইটিইউ’র

জাতীয়

Citu Conference Last days

 

সত্যব্রত ভট্টাচার্য: বেঙ্গালুরু

দেশবিরোধী, শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থবিরোধী কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে হঠানোর ডাক দিলেন সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ। দেশজুড়ে শ্রমিক কর্মীদের আরও অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে ওঠার আহবান জানান তাঁরা। জোর দেন শ্রমিক কৃষক খেতমজুরদের সম্মিলিতভাবে আরও জোরদার লড়াইয়ের ওপর। 


সিআইটিইউ ১৭তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে রবিবার সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার কেড়ে নিয়ে, মনে বিচ্ছিন্নতাবাদ ঢুকিয়ে দুর্বল করে ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বিজেপি ও আরএসএস। এই শক্তি যত তাড়াতাড়ি দূরে হটবে ততই দেশের মঙ্গল। জাতপাত ভুলে মানুষে মানুষে যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে চলেছে সিআইটিইউ। 


রবিবার এই প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে সম্মেলন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ সভাপতি কে হেমলতা,  সাধারণ সম্পাদক তপন সেন সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ নেতা মীনাক্ষীসুন্দরম, এআর সিন্ধু, কে উমেশ, বরালক্ষী প্রমুখ। তপন সেন এদিন বলেন, আরএসএস যে নীতি নিচ্ছে বিজেপি সরকার তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। একটা বর্বর স্বেচ্ছাচারী সরকার বিজেপি। তারা কোনও যুক্তি বুদ্ধির ধার ধারে না। গরিব শ্রমজীবীদের রুজি রোজগারে ক্রমাগত আঘাত হানছে। এই সরকার শাসন ক্ষমতায় থাকলে শ্রমিকদের কৃষকদের দুর্দশার শেষ থাকবে না। অতএব লড়াই আরও তীব্র করতে হবে। 


সিআইটিইউ সভাপতি কে হেমলতা বলেন, বিজেপি-র শাসনে মজদুরদের ওপর হামলা বেড়েছে অনেক গুণ। অন্যদিকে বামপন্থী সরকার থাকলে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা হয়। মানুষকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বামেরাই অগ্রণী ভূমিকা নেয়। লকডাউনের সময়েই কেন্দ্রে বিজেপি এবং বিভিন্ন রাজ্যে তার সহযোগী সরকারগুলির সঙ্গে কেরালার বাম সরকারের কাজের ফারাক স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশ জুড়ে অতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে সিআইটিইউ। এই সংগঠনকে আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ৫ এপ্রিল শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের মিছিল জমায়েতকে সফল করে তুলতে হবে। তার জন্য এলাকায় এলাকায় প্রচার এবার অনেক বেশি জোর দিতে হবে। 


বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল কলেজ মাঠে এদিন এই প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। সুবিশাল মাঠ জুড়ে শুধুই অসংখ্য লাল পতাকা আর লাল টুপির নিশান। তিল ধারণের জায়গা ছিল না কোথাও। যে মাঠে দাঁড়িয়ে  এদিন নেতৃবৃন্দ বিজেপি এবং সহযোগী সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন, সেই সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চল অনেকদিন ধরেই রয়েছে বিজেপি আরএসএস-র কবজায়। আছে চোখ রাঙানি, প্রচ্ছন্ন হুমকি। তা সত্ত্বেও দলে দলে মানুষ এসে মাঠ ভরিয়েছেন নিজেদের তাগিদে, স্লোগান তুলেছেন, নেতৃবৃন্দের কথা শোনার জন্য কড়া রোদে বসে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।  বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল কলেজের এই মাঠের অনতিদূরেই রয়েছে জ্যোতি বসু ভবন। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, আমরা তাই মনে করি জ্যোতি বসু আছেন আমাদের সঙ্গে। সিআইটিইউ এখানে সর্বশক্তি নিয়ে মানুষের পাশে আছে। সমাবেশ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় সমাবেশ স্থানে। 


এদিন প্রকাশ্য সমাবেশে তপন সেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই বেঙ্গালুরুর মানুষকে ধন্যবাদ জানান বৃহৎ এই সম্মেলনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য। তিনি বলেন, প্রতি ক্ষেত্রের সংগঠিত এবং অসংগঠিত  উভয় শ্রেণির যৌথ লড়াই আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। সোজা কথা হলো নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে বিজেপি কাজ করছে ধনী শিল্পপতিদের জন্য। আর সিআইটিইউ লড়ছে শ্রমিক শ্রেণির জন্য। সিআইটিইউ-র হাত যত শক্ত হবে ততই ভয় ধরবে বিজেপি-র মনে। 


তিনি বলেন, নতুন কাজ নেই, এখন যেটুকু কাজ আছে তাতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। ন্যুনতম মজুরিও দেওয়া হচ্ছে না বহু ক্ষেত্রে, বেড়ে যাচ্ছে কাজের ঘণ্টা। আন্দোলন করার, সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম চাই। তপন সেন বলেন, এই অধিকারগুলি আদায় করতে হবে। একটা সাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভেদের আশ্রয় নিয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে। অঙ্গনওয়ারী কর্মী, আশা কর্মীদের আন্দোলন অথবা কৃষক আন্দোলন, বা মহারাষ্ট্রে বিদুৎকর্মীদের আন্দোলন, শ্রমিকদের ধর্মঘট- এই প্রতিটি লড়াই প্রমাণ করেছে জোরদার প্রতিরোধে পিছু হাটে স্বেচ্ছাচারিতা। সুতরাং আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই। তপন সেন এবং কে হেমলতা ছাড়াও  প্রকাশ্যে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কর্ণাটক সিআইটিউ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এম এস মীনাক্ষীসুন্দরম। সমাবেশ পরিচালনা করেন কর্ণাটক রাজ্য সভাপটি এস বরালক্ষী। সমাবেশ মঞ্চ থেকে ছোটদের শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এদিন। 


এদিন সম্মেলন মঞ্চে প্রথমে কমিশন পেপারের রিপোর্ট পেশ হয়। পেশ হয় ক্রেডেন্সিয়াল কমিটির রিপোর্ট। এরপর জবাবী ভাষণ দেন তপন সেন। ভাষণের পর নতুন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়।  
জবাবী ভাষণে তপন সেন বলেন, এই সম্মেলনের আলোচনা থেকে একাধিক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে যা পরবর্তীকালে আগামী দিনের কাজকে সমৃদ্ধ করবে। শ্রমিকের কাজের ধারাই পালটে দেওয়া হচ্ছে। এমনভাবে তা করা হচ্ছে যে একটি মালিকানার আওতায় একটি নির্দিষ্ট কাজ বলে কিছু থাকছে না। ফলে তাঁরা কোনও সংগঠনের আওতায়ও আসতে পারেন না। এখানেই আমাদের কাজ এবং দায়িত্ব রয়েছে। বিশাল অংশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা সরকারের চোখে বিচ্ছিন্ন। তাঁদের কোনও পরিচিতি নেই। তাই সরকারও তাঁদের কোনও খোঁজ খবর রাখে না। এই শ্রমিকদের নিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে লড়াই চাই।  এজন্য ক্ষেত্র অনুযায়ী এগতে হবে সিআইটিইউ-কে। প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি শ্রমক্ষেত্রে পৌঁছাতে হবে সিআইটিইউ-কে। আরও অনেক সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে আমাদের। এজন্য সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলনে আরও জোর দিতে হবে। 
 

সিআইটিইউ’র নতুন নেতৃত্ব

রবিবার সিআইটিইউ ১৭ তম সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে মোট ৪২৫ জনের নতুন জেনারেল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়েছে ১১৯ জনের। মোট ৩৯ জনের নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। সভাপতি হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন কে হেমলতা। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন তপন সেন। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন এম সাইবাবু। তিনি নবনির্বাচিত। ২৩ জন সম্পাদক এবং ১৩ জন সহসভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্যরা হলেন বাসুদেব আচারিয়া এবং জে এস মজুমদার। ৩৯ জনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে এবার নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৬জন।

 ছবি: রবীন গোলদার

 

Comments :0

Login to leave a comment